ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

সৌম্যর সেঞ্চুরির ম্যাচে জিতল আবাহনী

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩০, ২১ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সৌম্যর সেঞ্চুরির ম্যাচে জিতল আবাহনী

ক্রীড়া প্রতিবেদক, বিকেএসপি থেকে : শিরোপার কাছাকাছি চলে গিয়েছিল লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। আবাহনীর বিপক্ষে আজ জিতলেই প্রথম শিরোপার স্বাদ পেয়ে যেত গতবারের রানার্সআপরা। কিন্তু তাদের মাটিতে নামাল শিরোপাধারী আবাহনী লিমিটেড। আবাহনীর ব্যাট-বলের দাপটে স্রেফ উড়ে গেছে রূপগঞ্জ।

ব্যাটিংয়ে রান পাচ্ছিলেন না সৌম্য সরকার। বিকেএসপিতে আজ ফিরলেন স্বরূপে। প্রিমিয়ার লিগের প্রথম হাফ সেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দিয়েছেন আবাহনীর ওপেনার। তাকে সঙ্গ দিয়ে জহুরুল ইসলাম অমি খেলেছেন ৭৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস। মধ্যভাগে ওয়াসিম জাফর ও সাব্বির রহমান দলের প্রয়োজন মিটিয়েছেন। আর শেষ দিকে ঝড় তুলেছেন মোহাম্মদ মিথুন। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় ৭ উইকেটে ৩৭৭ রানের বিশাল পুঁজি পায় আবাহনী। চলতি ঢাকা লিগে যা সর্বোচ্চ দলীয় রান।

রানের পাহাড়ে চাপা পড়ে মনোবল হারায়নি রূপগঞ্জ। ব্যাটিংয়ে ঝোড়ো শুরু করেছিল তারা। কিন্তু মাঝে পথ হারিয়ে এলোমেলো হয়ে যায় আফতাব আহমেদের শিষ্যরা। ফলাফল নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলে মধ্যদুপুরেই। মোহাম্মদ নাঈমের লড়াকু ১২৩ রানের ইনিংসের পরও রূপগঞ্জ থামে ২৭৫ রানে। ১০২ রানের বিশাল জয় পায় আবাহনী।

বিকেএসপিতে আজ শুরু থেকেই সৌম্য ছিলেন আকর্ষণীয়। জমাট ব্যাটিং, নিখুঁত টাইমিং, দারুণ প্লেসমেন্ট ও নিয়ন্ত্রিত শটে সৌম্যর ব্যাটিং ছিল অসাধারণ। বলের ওপর পুরোপুরি চোখ রেখে খেলেছেন। বলের জন্য অপেক্ষা করেছেন শেষ পর্যন্ত। তাইতো বাজে বল শাসন করছেন অনায়াসে। ভালো বল সমীহ করে খেলেছেন।

 



স্পিনার নাবিল সামাদের বলে চার মেরে রানের খাতা খুলেছিলেন সৌম্য। তার বলেই এক রান নিয়ে ৭১ বলে সৌম্য তুলে নেন সেঞ্চুরি। ৩৯ বলে হাফ সেঞ্চুরির পর সেঞ্চুরিতে পৌঁছতে সৌম্যকে খেলতে হয় আরো ৩২ বল। যতটা ভালো ব্যাটিং করে সৌম্য সবাইকে মুগ্ধ করেছিলে,ন ঠিক ততোটাই বাজে শট খেলে ফেরেন সাজঘরে। নাবিল সামাদকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে হাওয়ায় বল ওঠান। সিলি মিড অন থেকে মিড উইকেটে গিয়ে বল তালুবন্দি করেন মুমিনুল হক। ১০৬ রানের ইনিংসটি খেলেছেন মাত্র ৭৯ বলে। ১৩৪.১৭ স্ট্রাইক রেটে সাজানো ইনিংসটিতে ছিল ১৫ চার ও ২ ছক্কা।

সৌম্যর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ব্যাটিং করেছেন জহুরুল। দুজন উদ্বোধনী জুটিতে ১৬৯ রান তুলে আবাহনীকে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দেন। সৌম্য তিন অঙ্কের দেখ পেলেও জহুরুল পারেনি। রিশি ধাওয়ানের বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন ৭৫ রানে। মাঝে শান্ত শুভাশিষের বলে ২৪ রানে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দেন।

চতুর্থ উইকেটে ওয়াসিম জাফর ও সাব্বির রহমান ৪৮ বলে ৫৩ রানের জুটি গড়েন। ২ চার ও ২ ছক্কায় ওয়াসিম ৩৯ বলে ৪৬ রানের ইনিংস উপহার দেন। সাব্বির ৪ বাউন্ডারিতে ২৪ বলে করেন ৩৩ রান। দুজনের অবদানের পর বিকেএসপিতে ঝড় তোলেন মোহাম্মদ মিথুন। ৩৪ বলে ৬৪ রান করেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ৭ চার ও ২ ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে রাখেন এ ক্রিকেটার। তার শেষ দিকের ঝড়েই আবাহনী এবারের প্রিমিয়ার লিগের সর্বোচ্চ ৩৭৭ রান করে। প্রিমিয়ার লিগে যা দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর আগে ২০১৭-১৮ মৌসুমে আবাহনী লিমিটেড প্রাইম ব্যাংকের বিপক্ষে করেছিল ৩৯৩ রান।

বেহিসেবী বোলিং করেছেন প্রত্যেক বোলার। সবথেকে বেশি খরুচে ছিলেন তাসকিন আহমেদ। ওভারপ্রতি ১১.৪০ গড়ে ৫ ওভারে ৫৭ রান দিয়েছেন ডানহাতি পেসার। বাকি দুই পেসার শুভাশিষ ১০ ওভারে ৭৪ ও শহীদ ৯ ওভারে দিয়েছেন ৬২ রান। ১০ ওভারে ৮১ রান দিয়েছেন রিশি ধাওয়ান।

 



লক্ষ্য তাড়ায় শুরুটা ভালো করেছিল রূপগঞ্জ। প্রথম ২৪ রান তারা তোলে মাত্র ৮ বলে, যার ৬টি ছিল বাউন্ডারি। মোসাদ্দেকের প্রথম ওভারে ৪টি এবং দ্বিতীয় ওভারে মেহেদী মারুফ ২টি বাউন্ডারি মারেন। তবে তৃতীয় ওভারে পাল্টে যায় রূপগঞ্জের ব্যাটিং। মেহেদী হাসান মিরাজ বোলিংয়ে এসে প্রথম বলে ফেরান মেহেদী মারুফ। ডাউন দ্য উইকেটে এসে ফিরতি ক্যাচ দেন মেহেদী। ওভারের শেষ বলে মুমিনুল ঘূর্ণির বিপরীতে শট খেলতে গিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন সাইফউদ্দিনের হাতে।

এরপর নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারায় রূপগঞ্জ। মাশরাফি দশম ওভারে প্রথম বোলিংয়ে এসে পেয়ে যান উইকেট। তার বলে স্কুপ করতে গিয়ে এলবিডব্লিউ হন ২০ রান করা নাঈম। এরপর শাহরিয়ার নাফীসকে ২ রানে বোল্ড করেন নড়াইল এক্সপ্রেস। মাঝে জাকের আলীকে সাজঘরের পথ দেখান মোসাদ্দেক। ৮৬ রান তুলতেই ৫ উইকেট হারায় রূপগঞ্জ। প্রথম সারির ব্যাটসম্যানদের ফিরিয়ে ম্যাচ অনেকটাই নিজেদের করে নেয় আবাহনী।

তবে একপ্রান্ত আগলে ব্যাটিং করে যান মোহাম্মদ নাঈম। ৬২ বলে বাঁহাতি ওপেনার তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। ১০৫ বলে পেয়ে যান দ্বিতীয় লিস্ট ‘এ’ সেঞ্চুরি। সপ্তম উইকেটে শহীদকে সঙ্গে নিয়ে ৯২ রানের জুটি গড়েন নাঈম।  ৪ চার ও ৪ ছক্কায় ৪৭ বলে ৫৩ রানের ইনিংস খেলেন শহীদ। নাঈম তার ক্যারিয়ার সেরা ১২৩ রানের ইনিংসটি খেলেন ১৩৫ বলে। ১৩টি চার ও ২টি ছক্কা মারেন বাঁহাতি ওপেনার।

বল হাতে আবাহনীর সেরা মিরাজ। ৬৫ রানে ৩ উইকেট নেন এই অফ স্পিনার। ৬ ওভারে ২০ রানে ২ উইকেট নেন মাশরাফি।

 



শিরোপাধারীরা শিরোপা ধরে রাখার মিশনে আরেকধাপ এগিয়ে গেল। ১৫ ম্যাচে ১২ জয় নিয়ে আবাহনী এখন শীর্ষে। সমান ম্যাচে সমান জয় নিয়ে রূপগঞ্জ দুইয়ে। শেষ রাউন্ডে আবাহনী হেরে গেলে এবং রূপগঞ্জ জয় পেল রূপগঞ্জ শিরোপা জিতবে।  দুই দল জিতে গেলে আবাহনীর ঘরে যাবে শিরোপা।  আবাহনী ও রূপগঞ্জ মুখোমুখি লড়াইয়ে সমান অবস্থানে। নেট রান রেটে অনেকটা এগিয়ে থাকা মাশরাফি, মোসাদ্দেকদের ঘরে যাবে শিরোপা।



রাইজিংবিডি/সাভার (বিকেএসপি)/২১ এপ্রিল ২০১৯/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়