ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ফরিদপুরে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাতের গমের আবাদ

মো. মনিরুল ইসলাম টিটো || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৮, ৭ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ফরিদপুরে ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী জাতের গমের আবাদ

ফরিদপুর প্রতিনিধি : উন্নত জাতের উচ্চফলনশীল বারি গম-৩৩ চাষ শুরু করেছে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার মহেশ্বরদী এলাকার চাষিরা।

উদ্ভাবিত গমের এই নতুন জাতটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী তাপ সহিষ্ণু, জিঙ্কসমৃদ্ধ ও প্রতিকুল পরিবেশ সহনশীল। পরীক্ষামূলক বারি গম-৩৩ চাষ করে চাষিরা অধিক ফলনের আশা করছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে বারি গম-৩৩ উন্নত একটি জাত। এই জাতটি সবেমাত্র মুক্তি পেয়েছে। এটি ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী। এই গম চাষ করে কৃষক অধিক লাভবান হবেন।

ফরিদপুর জেলা কৃষি অফিস জানায়, গত বছর ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার মহেশ্বরদী এলাকার গম খেতে ব্যাপক আকারে ব্লাস্ট দেখা দেয়। শুধু ফরিদপুরেই নয়- ২০১৬ সালে যশোর, কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, বরিশালসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়ে হাজার হাজার হেক্টর জমির গম নষ্ট হয়ে যায়। সে কারণেই আন্তর্জাতিক গম ও ভুট্টা উন্নয়ন কেন্দ্র (সিমিট) গমের দুটি জাতের সঙ্গে শংকরায়ণের মাধ্যমে উচ্চফলনশীল জাতটি উদ্ভাবন করে। আর বাংলাদেশ কৃষি গবেষনা ইনস্টিটিউট (বারি) গম গবেষণা কেন্দ্র এর নামকরণ করে ‘বারি গম-৩৩’। গত বছরের ১১ অক্টোবর জাতীয় বীজ বোর্ড বারি গম-৩৩ এর চুড়ান্ত অনুমোদন দেয়।

চলতি মৌসুমে ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলাসহ দেশের বেশ কয়েকটি জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে উচ্চফলনশীল ‘বারি গম-৩৩’ চাষ হয়েছে। এর পাশাপাশি চাষিরা ব্লাস্ট রোগ সহনশীল জাত বারি গম-৩০ ও বারি গম-৩২ ব্যাপকভাবে চাষ করেছে ফরিদপুর জেলার চাষিরা।

ভাঙ্গা উপজেলার কয়েকজন চাষি জানান, গত বছর ব্লাস্ট রোগের কারণে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। এক কেজি গমও ঘরে তুলতে পারেননি।  আর সে জন্য চলতি বছর ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী বারি গম-৩৩ চাষ করেছি। গম ভাল হয়েছে। আশা করি, আমরা অধিক ফলন পাব এবং লাভবান হব।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসডিসি’র নির্বাহী পরিচালক কাজী আশরাফুল সাহান বলেন, ‘সিমিট এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সাথে আমরা যৌথভাবে উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে অল্প খরচে অধিক ফসল উৎপাদনের জন্য কৃষকদের প্রশিক্ষণ, উন্নত বীজ ও সার দিয়ে সহযোগিতা করছি।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, বারি গম-৩৩ এর জীবনকাল ১১০ থেকে ১১৫দিন। যা অন্য জাতের চেয়ে ১০দিন আগে ঘরে তুলতে পারবনে চাষিরা। চলতি বছর এ জেলায় ২৭ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে গমের চাষ হয়েছে।

ফরিদপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর উপ-পরিচালক কৃষিবিদ কার্তিক চন্দ্র চক্রবর্তী বলেন, ‘বারি গম-৩৩ ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী একটি জাত। এবছর ভাঙ্গা উপজেলার এক হেক্টর জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে এ জাতের গমের আবাদ করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘ব্লাস্ট রোগ দুই ভাবে দমন করা যায়। একটি হচ্ছে বীজ শোধন করে নেওয়া। অপরটি হচ্ছে উপযুক্ত জাত। এ জাতটি স্বল্পকালীন এবং ফলন বেশি হয়। চাষিরা এই জাত চাষ করে অধিক লাভবান হবেন।

ফরিদপুর অঞ্চল কৃষি সম্প্রসারণ এর অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ কিংকর চন্দ্র দাস বলেন, ‘গতবছর ফরিদপুর জেলায় প্রথম ব্লাস্ট রোগ ধরা পড়ে। আমার অঞ্চলে গতবছর ৭.১২ হেক্টর জমি ব্লাস্ট রোগে আক্রান্ত হয়। আর সে কারণেই এই এলাকায় ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী বারি গম-৩৩ এর আবাদ করা হয়েছে।’

তিনি বলেন, ‘আগামীতে সরকারী সহযোগিতা পেলে এবং ব্লাস্ট রোগ প্রতিরোধী বারি গম-৩৩ এর বীজ সহজে পেলে এই অঞ্চলে গমের আবাদ বৃদ্ধি পাবে।’



রাইজিংবিডি/ফরিদপুর/৭ মার্চ ২০১৮/মো. মনিরুল ইসলাম টিটো/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়