ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

কম ঝালের সুগন্ধী মরিচ উদ্ভাবন করল বিনা

শেখ মহিউদ্দিন আহাম্মদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৭, ১৫ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কম ঝালের সুগন্ধী মরিচ উদ্ভাবন করল বিনা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ময়মনসিংহ : বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিনা) এবার উদ্ভাবন করেছে নতুন উচ্চ ফলনশীল জাতের বিনা-মরিচ-১ নামে অধিক ফলনশীল ও তুলনামূলক কম ঝালের সুগন্ধী মরিচ।

উচ্চ ফলনশীল জাতের এই জাতের মরিচ একই সাথে মসলা, সালাদ ও সবজি হিসেবে ব্যবহার করাও যাবে। এটি আকারে বেশ বড় ও মোটা। প্রতিটি গাছে প্রতিবারে ৩০ থেকে ৩৫টি মরিচ ধরে। এইভাবে প্রতি মৌসুমে ৮ থেকে ৯ বার ফসল তোলা যায়। এতে প্রতি হেক্টরে ৩০ থেকে ৩৫ টন মরিচ ফলানো সম্ভব।

ময়মনসিংহে অবস্থিত বিনার বিজ্ঞানী ড. রফিকুল ইসলাম ২০১২ সালে চীনের একটি স্থানীয় মরিচের জাত থেকে বীজ সংগ্রহ করেন। এই বীজে ভিয়েনা ও অস্ট্রিয়ায় বিভিন্ন মাত্রায় পরমাণু রেডিয়েশন প্রয়োগ করেন। এভাবে দীর্ঘ চার বছর গবেষণা করে এর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে এই জাতটি উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন। পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীত মৌসুমে উদ্ভাবিত জাতের মরিচ চাষ করে কাঙ্খিত সফলতা পেতে সক্ষম হন। ফলন পরীক্ষা সন্তোষজনক হওয়ায় বাংলাদেশ বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৭ সালে বিনা-মরিচ-১ উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে চাষাবাদের জন্যে নিবন্ধিত হয়।

বিনা-মরিচ-১ এর উদ্ভাবক বিনার উদ্ভিদতত্ব বিভাগের প্রধান, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. রফিকুল ইসলাম জানান, আমাদের দেশের প্রচলিত মরিচের জাতের তুলনায় একটু উন্নত পরিচর্যা পেলে বিনা-মরিচ-১ এর ফলন ১৩০ থেকে ১৪০ শতাংশ বেশি উৎপাদন হবে। প্রতি হেক্টরে এর ফলন হবে ৩০ থেকে ৩৫ মেট্রিক টন। এটি মসলা, সালাদ ও সবজি হিসেবে ব্যবহার উপযোগী। কারণ এটিতে তুলনামূলক ঝাল কম ও সুগন্ধী।

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষার অংশ হিসেবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল যেমন- ময়মনসিংহ, ঈশ্বরদী, খাগড়াছড়ি, মাগুরা, রংপুর, বগুড়া ও কুমিল্লা অঞ্চলে চাষ করে এতে ক্ষতিকারক কোন পোকামাকড়ের আক্রমণ ও জটিল কোন রোগবালাই দেখা যায়নি। এটির উৎপাদন সময় সাধারণত শীতকালে। অক্টোবর থেকে নভেম্বরের মধ্যে বীজ বপন করতে হবে এবং মধ্য ডিসেম্বরের মধ্যে এক মাস বয়সি চারা রোপন করতে হবে। এর চাষের জন্যে বেলে দো-আশঁ মাটি উপযুক্ত।’ 

 


গত মঙ্গলবার ময়মনসিংহের সুতিয়াখালী এলাকায় বিনা-মরিচ-১ এর মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়েছে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিনা’র মহাপরিচালক বলেন, বিনা-মরিচ-১ উদ্ভাবন একটি যুগান্তকারী সাফল্য। এ মরিচ সারা দেশে উৎপাদিত হলে দেশের কৃষকরা যেমন লাভবান হবে, মানুষের খাদ্য তালিকায় ভিটামিন সি এর পরিমাণ বাড়বে তেমনি দেশের অর্থনীতিও সমৃদ্ধ হবে।

মাঠ দিবসে উপস্থিতি কৃষকরা জানান, এই জাতের মরিচের ফলন বেশ ভালো হয়। দেখতে অনেক বড় ও মোটা।

বিনা আয়োজিত বিনা-মরিচ-১ এর মাঠ দিবসে প্রতিষ্ঠানের পরিচালক (গবেষণা) ড. হোসনে আরা বেগমের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের মহাপরিচালক ড. বিরেশ কুমার গোস্বামী। বিশেষ অতিথি ছিলেন সাবেক মহাপরিচালক ড. আমজাদ হোসেন, ময়মনসিংহ খামার বাড়ির উপ-পরিচালক আব্দুল মাজেদ। এছাড়াও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রতিষ্ঠানের ফলিত গবেষণা ও সম্প্রসারণ বিভাগের প্রধান ড. এ এস এম ফিরোজ হাসান, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা সাদিয়া তাসমিন, বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ফরিদ আহমেদ ও নূরন্নবি মজুমদার।

আগামী মৌসুমে কৃষকরা বিনা-মরিচ-১ এর প্রয়োজনীয় বীজ বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থিত বিনা’র প্রধান কার্যালয় থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন বলেও মাঠ দিবসের অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

 

 

রাইজিংবিডি/ময়মনসিংহ/১৫ মার্চ ২০১৮/শেখ মহিউদ্দিন আহাম্মদ/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়