ঢাকা     বুধবার   ১৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৪ ১৪৩১

আমার প্রথম স্বীকৃতি মেয়েদের হাত থেকে এসেছে: আবদুল মান্নান সৈয়দ

মোহাম্মদ আসাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৪, ৩ নভেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমার প্রথম স্বীকৃতি মেয়েদের হাত থেকে এসেছে: আবদুল মান্নান সৈয়দ

আবদুল মান্নান সৈয়দ

আমার বন্ধু ছিল খোকন। ও আর আমি মিলে ‘প্রভাতী’ নামে পত্রিকা করলাম। হাতে লেখা পত্রিকা। তারপর পত্রিকাটি দেয়ালে নয়, ল্যাম্পপোস্টে আঠা দিয়ে লাগিয়ে দিয়েছিলাম; একেবারে খবরের কাগজ যেমন হয় ঠিক তেমন। পত্রিকাটির দুই কিংবা তিনটি সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছিল। সেখানে আমি কার্টুনও আঁকতাম। আমি ছোটবেলা ভালো ছবি আঁকতে পারতাম। আসলে আমার চিত্রশিল্পী হওয়ার সম্ভাবনা ছিল বেশি। আব্বা হতে দেননি। আমি মনে করি, আব্বা হতে না দিয়ে ভালোই করেছেন। ছবি আঁকা আমার শখ। এ নিয়ে আমার ভেতরে বেদনা আছে। নাচ দেখলেও আমার মন খারাপ হয়ে যায়। নাচের প্রতিও আমার অসম্ভব ভালোবাসা ছিল। নাচ, গান, ছবি আঁকা ও লেখা- এই চারটি বিষয়ে আমার আগ্রহ ছিল। এগুলো আমার রক্তের মধ্যে ছিল। এর যে দিকেই যেতাম আমি নাম করতাম। এখনও ছবি আঁকার আগ্রহ আমার মধ্যে কাজ করে। ছবি নিয়ে আমি কিছুটা লেখালেখিও করেছি।

আগেই বলেছি, নাচ দেখলেও মন খারাপ হয়ে যায়। এটা কেন আমি জানি না। সব কিছুর ব্যাখ্যা হয় না। সব কিছু ছেড়ে শুধু লেখালেখিই করেছি। জীবন তো একটাই। সবকিছু তো আর একসঙ্গে হবে না। চেহারা দেখে আমি অবিকল আঁকতে পারতাম। এটা আমার আলাদা একটা ক্ষমতা ছিল।

আমরা ঢাকার রোজ গার্ডেনে বেড়াতে যেতাম। অদ্ভুত সুন্দর জায়গা রোজ গার্ডেন। ওখানে হরিণ-টরিন ছিল। বিশাল এলাকাজুড়ে সবুজের মধ্যেখানে সুন্দর বাড়ি! সেখানে পুকুর ছিল, ভাস্কর্য ছিল। গাছপালা মিলিয়ে এক রহস্যময় বাড়ি ছিল। ঢাকা কলেজে যখন পড়তাম, তখন গিয়েছি অনেক বার।

ঢাকা কলেজে আমার বড় ভাইয়েরা পড়েছে। আমরা যখন এখানে এসেছি তখন ধানমন্ডি নতুন শহর। নিউমার্কেট হচ্ছে। ঢাকা কলেজে তখন শিক্ষক ছিলেন এম কিউ আহমেদ। বিরাট মনোবিজ্ঞানী। তিনি বাস্তববাদী লোক ছিলেন। সাত-আটজন ছেলেমেয়ে ছিল। ভীষণ জ্ঞানী মানুষ। আসলে তখন ঢাকা কলেজে যারা শিক্ষকতা করতেন তারা দেশবরেণ্য ছিলেন। আমাদের বাংলার শিক্ষক ছিলেন শওকত ওসমান, সৈয়দ হিশাম উদ্দিন, আবদার রশীদ, আবদুল লতিফ চৌধুরী। একমাত্র মহিলা শিক্ষক ছিলেন রওশনারা রহমান।

আমি কিন্তু সত্যভাষী- এটা আমার জন্য মুশকিলেরও। আমার ক্লাসমেটদের মধ্যে বিখ্যাত আখতারুজ্জামান ইলিয়াস। ইলিয়াস হোস্টেলে থাকত। স্পেশাল বেঙ্গলি বলে ঐচ্ছিক একটি বিষয় ছিল। এখন এটা পড়ানো হয় না। তো আমরা ওই বিষয়ে পড়েছি। হিশাম উদ্দিন স্যার আমাকে ডেকে বললেন, ওকে (আখতারুজ্জামান ইলিয়াস) লেখা চালিয়ে যেতে বলো।

তখন ঢাকা কলেজের ছাত্রদের গ্রুপ ছিল। নানা বিষয়ে গ্রুপগুলো ভাগ হয়ে যেত। তারা পড়াশোনা নিয়ে ডিসকাস করতো। বড় লোকের ছেলে এবং মেধাবীরাই এখানে পড়তো। তখন ইংরেজিতেই লিখতে হতো। শিক্ষকরা আমাদের ‘আপনি’ করে বলতেন। সেখানেই আমি কবিতা লেখায় উৎসাহ পেয়েছি। আমি স্কুল, কলেজে যে অনুপ্রেরণা পেয়েছি তা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাইনি। আপনি এখন হয়তো বুঝবেন না, পরে বুঝবেন, অনেক সময় যোগ্যতা বেশি থাকলে মুশকিল হয়। কলেজে এখন ‘ছেলেমেয়েরা খারাপ হয়ে যাচ্ছে’ বললে তো চলবে না। আমি ৩৬ বছর অধ্যাপনা করেছি। ১৯৬৫ সাল থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত। এখন শিক্ষকদের সীমাবদ্ধতা আছে। আমরা শিক্ষকদের কাছ থেকে অনেক পেয়েছি। যেমন শওকত ওসমান স্যার আমাদের ক্লাসে বই পড়াতেন না। কিন্তু যেসব কথা বলতেন সেসব কথা আমাদের জীবন উন্মোচন করেছে।

একটু অন্য প্রসঙ্গে যাই। তখন সবখানেই বার্ষিক নাটক হতো। আমাদের কলেজে নাটকে আনোয়ারা এসেছিলেন। তখন তো ঢাকায় মেয়ে দেখা যেত না। রবিবার ছিল ছুটির দিন। ছুটির দিনে মেয়ে দেখার জন্য আমরা যেতাম নিউমার্কেট (হাসি)। এ নিয়ে আমাদের বন্ধু এক লাইনের একটা ছড়া বানিয়ে ফেলল: ‘রবিবার ছুটিবার দেখিবার দিন’ (হাসি)। ওর ক্ষমতা ছিল না দুটি লাইন মেলানোর। বলছিলাম ঢাকা কলেজে বিভিন্ন গ্রুপ ছিল। একটা গ্রুপ ছিল মেননদের; রাশেদ খান মেনন। মেনন ছিল আমার ক্লাসমেট। ওদের গ্রুপে ছিল বড়লোকের ছেলেরা। তারা রিয়েলি ব্রিলিয়ান্ট ছিল। মেনন নিজেও ব্রিলিয়ান্ট। মাসুদ বলে আমাদের এক বন্ধু ছিল। ও অসম্ভব ব্রিলিয়ান্ট ছিল। পরে মাসুদ বিদেশ মন্ত্রণালয়ের সচিব হয়েছিল। রোগা পাতলা ছিল, কথাবার্তা ছুড়ির মতো ধারালো। আমাদের এক শিক্ষক আজহারুল ইসলাম ক্লাস নিচ্ছেন। ক্লাসের শেষ দিকে মাসুদকে প্রশ্ন করলেন; মাসুদ লাস্ট বেঞ্চে বসা। তখন অনেকেই লাস্ট বেঞ্চে বসতে পছন্দ করতো কারণ গল্পগুজব করা যায়। আমি আবার লাস্ট বেঞ্চের একটু সামনের বেঞ্চে সবতাম। তো মাসুদ ডোন্ট কেয়ার ভাব। দাঁড়িয়ে বলল, এর উত্তর আপনিও জানেন, আমিও জানি। উত্তর দিয়ে কী লাভ? স্যার একেবারে বেভাচেকা খেয়ে গেলেন। এরই মধ্যে ঘণ্টা পরে গেল।

আমাদের সময় সবচেয়ে জনপ্রিয় কাগজ ছিল ‘আজাদ’। ঊনষাট সালে দৈনিক আজাদে বিজ্ঞাপন বেরুলো উইমেন্স হল থেকে গল্প প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার বিষয়ে। আমি সেখানে একটা গল্প পাঠিয়ে দিলাম। পরে দেখি আমার গল্প দ্বিতীয় হয়েছে। এটাই আমার প্রথম পুরস্কার। মেয়েদের হাত থেকে পুরস্কার নিলাম। তখন রোকেয়া হলের নাম ছিল ‘উইমেন্স হল’। আমরা তখন কলেজের ছাত্র। এর আগে মেয়েদের হলের সামনে কখনও যাইনি। আমরা তখন এক ক্লাস ওপরের ছাত্র দেখলে পালাই। মেয়েদের দিকে তাকানো অসম্ভব ব্যাপার ছিল। তখন তো ফোনটোনও ছিল না। ওদের দাড়োয়ান এসে চিঠি দিয়ে বলল, আপনাকে যেতে হবে। এক বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলার সাথে এ নিয়ে চিঠি চালাচালি হলো। চট্টগ্রামের একজন প্রথম পুরস্কার পেয়েছিলেন। তিনি আসতে পারবেন না। সুতরাং আমাকে অবশ্যই যেতে হবে। যাই হোক, শেষ পর্যন্ত গেলাম। আমার মনে আছে তখন ছিল শীতকাল। সাদা প্যান্ট পরে, ব্যাডমিন্টন খেলা বাদ দিয়ে গেলাম। ব্যাডমিন্টন-ক্রিকেট খেলেছি কলেজ লাইফ পর্যন্ত। খেলাটি আমার ফেভারিট ছিল। ফুটবল খেলেছি স্কুলের শেষ দিকে। ক্রিকেট খেলেছি বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত। তখন সারাদিন খেলা হতো। মেয়েরা গগলজ-টগলজ পড়ে খেলা দেখতে যেত। এখন যায় কিনা জানি না। পুরস্কার আনতে গিয়ে আমি অথৈ পাথারে পরলাম। পুরস্কার দেয়া হয় কার্জন হলে। সেখানে দেখি অসংখ্য মেয়ে। আমার নাম ঘোষণা করা হলো। মেয়েদের ভিড় ঠেলে পুরস্কার নিলাম। সুতরাং এটা বলা যায়, আমার প্রথম স্বীকৃতি মেয়েদের হাত থেকে এসেছে। এটুকু ছিল কলেজ লাইফ।

বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে হোস্টেলে থাকতাম। আমি ছিলাম সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে। আমি সব সময় ভালো স্কুল, ভালো কলেজে পড়েছি। ভালো শিক্ষকদের সহচার্যে থেকেছি। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল তখন নামকরা। হলের প্রোভোস্ট বললেন, খেলাধুলা পছন্দ করি কিনা? আমি বললাম, ব্যাডমিন্টন খেলতে পছন্দ করি। তিনি বললেন, অ্যানি ম্যানলি গেম? ব্যাডমিন্টন মেয়েদের খেলা আর কি। ক্রিকেট, ফুটবল এসব পছন্দ করি কিনা? আমি একটু লাজুক টাইপের ছিলাম। অনেক কিছুই তার জন্য করা হয়ে ওঠেনি। সাহিত্য জগতে গিয়ে আমার ব্যক্তিগত আবরণ সরে যায়। তার আগে আমি চাও খেতাম না। আপনারা বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, আমি তখন কলেজের ছাত্র। কলেজ থেকে সন্ধ্যা করে বাড়ি ফেরায় আম্মার হাতে পিটুনি খেলাম। নিয়মের বাইরে গিয়ে কলেজে পড়া অবস্থায় আমাদের মায়ের হাতে মার খেতে হয়েছে। এখন তো মেয়েরাও রাত করে বাড়ি ফিরতে পারে।

এই শহর ঢাকাইয়াদেরই ছিল। তারা অসম্ভব ভালো মানুষ। মূল ঢাকার লোক খারাপ- এমন কম দেখেছি। ওরা পরতো সাদা লুঙ্গি বা তপন। এটা ওদের প্রিয় পোষাক। এখন পরে কিনা জানি না। আচার ব্যবহার আতিথেয়তা ওদের তুলনাহীন। একবার বেনজির আহমদের বাড়ি গেলাম। বাড়ি ভেঙে ভেঙে পড়ছে। বাড়িজুড়ে দুরবস্থা। তার মধ্যে বাকরখানি এটা-ওটা এনে দিলেন। অনেক কিছু খাওয়ালেন। এই যে আতিথেয়তা এটা ঢাকার লোকদের মধ্যেই পাওয়া যায়। গুলিস্তান এলাকায় ‘ব্রিটানিয়া’ নামে সিনেমা হল ছিল। ওখানে শুধু ইংলিশ সিনেমা দেখানো হতো। আমি একবার সেখানে এক সিনেমা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। আমি একটু ভীতু টাইপের কল্পনাপ্রবণ ছিলাম আর কি! পাম গাছ দিয়ে সাজানো সুন্দর জায়গায় ছিল হলটা। এখন তো সব বহুতল ভবন হয়ে যাচ্ছে। গাছপালার স্বাভাবিক যে সৌন্দর্য তা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তীতে ঢাকার রাস্তাঘাট অনেক উন্নত হয়েছে। কিন্তু রাস্তায় পানি জমা আগে কখনও দেখিনি। আশির দশকে কিছুদিন কলকাতা ছিলাম। সেখানে দেখেছি পানি জমে। তখন কলকাতা থেকে ঢাকায় এলে মনে হতো স্বর্গ। নরক থেকে স্বর্গে ফিরে এসেছি যেন। এখন কলকাতা সুন্দর শহর, চমৎকার শহর! আর ঢাকা নারকীয় শহরে পরিণত হয়েছে। এই শহরের দিকে কারো যেন দৃষ্টি নেই। ঢাকা বড় হয়েছে কিন্তু মানুষের মানবিকতা কমে গেছে। ঢাকার মানুষের প্রতিবেশীর সঙ্গে যে সম্পর্কটা ছিল ফ্ল্যাট কালচার তা নষ্ট করে দিয়েছে।

আমি যেখানে অনিবার্য নই সেখানে থাকতে চাই না। কলকাতা গেলাম তিন-চার বছর একটা গবেষণার ব্যাপারে। ঢাকা এসে আমার পোস্টিং হলো নোয়াখালী গার্লস কলেজে। আমার অভিজ্ঞতায় বলব, কোথাও চাকরি করতে হলে গার্লস কলেজ হচ্ছে শ্রেষ্ঠ জায়গা। সেখানকার মেয়েরা খুবই শান্তিপ্রিয়। ওদের মতো শান্তিপ্রিয় মেয়ে কোথাও দেখিনি। তারা আমাকে খুবই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করলেন। স্ত্রীকে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তাব দিলেন। ঢাকা যে আমার প্রিয় জায়গা সেখানেই অনুভব করলাম। একবার কলকাতা গিয়ে অনেকদিন থেকে ঢাকার জন্য মন পুড়েছিল। ভালো-মন্দ নিয়েই ঢাকা আমার প্রিয় জায়গা।

জগন্নাথ কলেজে যখন পড়াতাম তখন পুরনো ঢাকায় আড্ডা দিতাম। শহীদ কাদরীসহ আমরা রাতে অনেকদিন আড্ডা দিয়েছি। প্রথম দিকে বিউটি বোর্ডিংয়ে যাইনি। স্বাধীনতার পরে সেখানে আমাকে নিয়ে গেছে শহীদ কাদরী। সত্তর-একাত্তর সালে আমরা স্টেডিয়াম এলাকায় আড্ডা দিতাম। ঢাকা শহরের প্রায় সব জায়গাতেই আড্ডা দিয়েছি। নিউমার্কেটে একটা আড্ডা ছিল। সেখানে একটা রেস্টুরেন্টে আমরা আড্ডা দিতাম। স্বাধীনতার পর বড় বড় কবিতা লেখা হতো। সেখানে রেস্টুরেন্টের বয় ছিল রফিক। সে ভালো কবিতা লিখত। ওখানে আরও কয়েকটি রেস্টুরেন্টে আড্ডা হতো। নিউমার্কেটে এখন যেখানে মসজিদ, সেখানে ছিল একটা পার্ক। সেখানে গিয়েও আমরা বসতাম। আমাদের আড্ডায় ভূতের গল্পও হতো। আসলে ঢাকায় প্রচুর ভূত নিয়ে গল্পগুজব আছে। বলধা গার্ডেনের পাশে খ্রিস্টান  কবরস্থান নিয়ে অনেক ভূতুরে গল্প শুনেছি। ওখান দিয়ে ঘোড়ার গাড়ি চড়ে ভূত যেত। কুকুর হয়ে ভূত ফিরে আসত। আসলে নির্জন এলাকায় ভূতের গল্পগুলো শোনা যেত।

সাহিত্য নিয়ে বলতে গেলে, দীর্ঘ সময় পারি দিয়ে সাহিত্যে আমরা নিশ্চিত এগিয়েছি। কিন্তু আমাদের যতটুকু এগুনোর কথা ছিল ততটুকু অগ্রগতি হয়নি। তার প্রধান কারণ লেখকের নিষ্ঠার অভাব। দ্বিতীয় হচ্ছে পারিপার্শ্বিকতার অভাব। আমি যখন লেখালেখি শুরু করেছিলাম তখন ‘সমকাল’ পত্রিকায় ছিলেন সিকান্দার আবু জাফর, আবদুল গনি হাজারী, আবদুল্লাহ আবু সাঈদ। এরা যেমন সম্পাদক ছিলেন, এখন সেরকম সাহিত্য সম্পাদক নেই। এখন সাহিত্য সম্পাদক হাত বাড়িয়ে থাকে মদ খাওয়ার টাকার জন্য। মেয়ে দেখলে উৎসাহ বেড়ে যায়। আমি তো তখন লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। আব্বা না থাকলে আমার এমএ পাস করা হতো না। ছবি এঁকে, লেখালেখি করে না খেয়ে মরতে হতো। আমার ছেলেমেয়ে হওয়ার পরও আব্বার সামনে কথা বলার সাহস ছিল না। আমরা আমাদের অনুজদের জন্য সেই ভাবে করি না।

আমি ভারত-ভক্ত লোক। সেটা যে ভাবেই নিন না কেন আমার বলার কিছু নেই। কলকাতায় যে ডিউরেশান, ডেডিকেশান দেখেছি, যে আত্মত্যাগ দেখেছি, আমি মনে করি না ওটা আমাদের এখানে আছে। একটা ছেলে কলকাতায় আমাকে সংবর্ধনা  দিয়েছিল, ওর মাইনের সমস্ত টাকা দিয়ে পত্রিকা প্রকাশ করে। ওর বৌ কোথায় একটা চাকরি করে সংসার চালায়- এই যে ভালোবাসা!

সত্যি বলতে ডেডিকেশান, ভালোবাসা আমাদের এখানে কম। আমাদের বয়োজ্যেষ্ঠরা দায়িত্ব ঠিকভাবে পালন করেন না। বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে যান। ছড়ি ঘোরাতে তাদের উৎসাহ বেশি।

আলাপন, অনুলিখন ও আলোকচিত্র: মোহাম্মদ আসাদ

অনুলেখকের কথা: কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাহিত্য-সম্পাদক নানা অভিধায় তাঁকে অভিহিত করা যায়। রবীন্দ্রোত্তর কালে বাংলা সমালোচনা-সাহিত্যে তাঁর নিষ্ঠা সমাদৃত হয়েছে পাঠক সমাজে। আবদুল মান্নান সৈয়দ বাংলার বহুমুখী প্রতিভা। নিরীক্ষাধর্মী গবেষক হিসেবে তাঁর লেখার বিষয় ও রচনা রীতিতে তিনি সদা পরিবর্তন আনায়নে সচেষ্ট ছিলেন।

এমন একজনের লেখা আমরা আমাদের ছোট কাগজের প্রথম সংখ্যার জন্য খুব করে চাইছিলাম। তখন আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছি ‘ঢাকা ত্রৈমাসিক’ বের করবো। কিন্তু প্রথমে ফোন করে অভিপ্রায় জানাতেই আবদুল মান্নান সৈয়দ সাফ জানিয়ে দিলেন লেখাটেখা লিখতে পারবেন না। 

মনে পড়ছে দিনগুলোর কথা। আমি নাছোড়বান্দা ছিলাম। তখন ঢাকার স্মৃতি নিয়ে ছোট একটা লেখা চাইলাম। কাজ হলো না। এবার প্রস্তাব দিলাম তাঁর স্মৃতিকথা রেকর্ড করে নিতে চাই। কি মনে করে এবার রাজি হলেন। হয়তো কয়েক বার ‘না’ বলার পর পুনরায় না বলতে চাননি। যাই হোক, সিদ্ধান্ত হলো, আমাদের দেখা হবে, ধানমন্ডির অলিয়স ফ্রঁসেজে। সেটা ২০০৭ সালের কোনো এক সময়ে। সঙ্গে ছিল দুই তরুণী। তারা কবিতা লেখেন।

প্রথমে সময় বললেন, ত্রিশ মিনিট। কিন্তু আমরা যখন কথা শেষ করলাম, ততক্ষণে দুই ঘণ্টা পেরিয়ে গেছে। পুরো সময় আমার রেকর্ডার অন ছিল। সেখান থেকেই নানা প্রসঙ্গে আবদুল মান্নান সৈয়দের অপ্রকাশিত কিছু কথা তুলে ধরা হলো।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ নভেম্বর ২০১৭/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়