ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

জন্মদিনে শওকত ওসমান সমীপেষু || পিয়াস মজিদ

পিয়াস মজিদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:১৬, ২ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জন্মদিনে শওকত ওসমান সমীপেষু || পিয়াস মজিদ

প্রতিকৃতি: মাসুক হেলাল

প্রিয় শওকত ওসমান,
হিসেব করে দেখেছি আপনার সঙ্গে আমার ও আমার প্রজন্মের বয়সের ব্যবধান প্রায় সত্তর বছর। তবু যে আপনাকে অতি সহজে ‘প্রিয়’ সম্বোধন করতে পারছি তার কারণ এই যে, শ্রদ্ধার মানুষ যখন কৃত্রিম দূরত্ব ঘুচিয়ে অতি আপন হয়ে ওঠেন তখন তাঁকে অনায়াসে ডাকা যায় ‘প্রিয়’ বলে। আপনাকে প্রত্যক্ষ দেখার সুযোগ হয়নি আমার কিন্তু আপনাকে চাক্ষুষ করেছি প্রথমে পাঠ্যবইয়ে এবং ক্রমশ সাহিত্যের বিস্তারে। আমার প্রজন্ম পাঠ্যক্রমের কল্যাণে পড়েছে আপনার গল্প ‘পুপুর সফর’ ‘প্রাইজ’ ‘দুই মুসাফির’ ‘সৌদামিনী মালো’ কিংবা উপন্যাস ‘জননী’। এর কোনোটি শিশু-কিশোরতোষ, আবার কোনোটি গভীর দার্শনিকতার আভায় স্নাত। আপনার লেখার সঙ্গে সংযুক্ত লেখক পরিচিতিসূত্রে আমরা জেনেছি আপনার প্রকৃত নাম ‘শেখ আজিজুর রহমান’ আর আপনার আদিবসতি পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলার সবলসিংহপুর গ্রাম। এই পরিচয় একজন লেখককে জানার জন্য যথেষ্ট নয় যদিও সবলসিংহপুর থেকে ঢাকায় আসা আর শেখ আজিজুর রহমানের ‘শওকত ওসমান’ হয়ে ওঠাই হতে পারে কোনো গল্প কিংবা উপন্যাসের বিষয়।

যাই হোক, ছোটবেলায় আপনার লেখা পড়ে অনুভব হতো অন্য অনেক লেখক যেমন ধর্মীয় মহাপুরুষ অথবা শাস্ত্রীয় নীতিবাক্যের সূত্রে শিশুকিশোরদের আলোর শিক্ষা দিতেন আপনি যেন ঠিক তেমনটি নন। রক্তমাংসের মানুষের গল্প বলেই আপনি মানুষের ভেতরকার আলো-অন্ধকারের তদন্ত করতেন। ‘সৌদামিনী মালো’ গল্পে ধর্ম সম্প্রদায়ের ঊর্ধ্বে মাতৃহৃদয়ের অপত্য স্নেহধারার যে নিঃসঙ্গ বিজয়বার্তা ঘোষিত হয়েছিল তা আমাদের কিশোর-মন স্পর্শ করে গেছে। ‘দুই মুসাফির’ গল্পে ‘এই সব আমার। এই দিঘী, আগান্-বাগান, ওই ইমারৎ আর ওপাশে মাঠে চোখ যদ্দূর যায়, সমস্ত আবাদ জমি আমার। আর এই যে...’ বলে দু’জন পথিক দু’দিনের এই নশ্বর পৃথিবীতে যখন ধনসম্পদের কৃত্রিম মালিকানা নিয়ে বিরোধে ব্যস্ত তখন হঠাৎই লালন ফকিরের প্রতীকী আবির্ভাব ঘটে। তিনি মানুষকে দেন সহজ মানুষ হওয়ার দীক্ষা যেখানে আগান-বাগান, ইমারৎ এইসবের কোনো মূল্য অবশিষ্ট থাকে না। আজ স্বীকার করছি বাউলিয়ানার দর্শনের নামে কোনো জালতত্ত্ব প্রতিষ্ঠাকারীর থিসিস পাঠ করে নয় বরং আপনার ‘দুই মুসাফির’ নামের ছোট্ট গল্পটি পড়েই মনের ভেতরে কিশোর বয়সেই গেঁথে যায় চিরকালের লালন ফকির।

‘মজকুর ব্যক্তি’ জাতীয় অজস্র আরবি-ফারসির সংযুক্ত বাংলা শব্দবন্ধের সঙ্গে পরিচিত হয়েছি আপনাকে পাঠের সূত্রে কিন্তু আপনার কাছ থেকেই পেয়েছি এই শিক্ষা যে ভাষার সংকরায়ণ যেন ভাষা-সাম্প্রদায়িকতার জন্ম না দেয়। আপনার সাহিত্যসাধনার বহু পরে যারা বিশেষ ভাষাভঙ্গির ব্যবহারের নামে সাম্প্রদায়িকতার দুষ্ট অভিলাষ বাস্তবায়ন করতে চেয়েছেন তারা নিদারুণ ব্যর্থ কিন্তু আপনার গল্প-উপন্যাস ভাষার বৈচিত্র্য নিয়ে বেঁচে থাকে আমাদের পাঠে-পাঠান্তরে কারণ ভাষা-আন্দোলন সবসময় ছিল আপনার বুকের ভেতর। তাই ‘মৌন নয়’ গল্প ছাড়া আমাদের কোনো একুশের সংকলন পূর্ণতা পায় না যেখানে বায়ান্নর একুশে'তে ভাষার জন্য পূর্ববঙ্গের ছাত্রদের বলিদানের মর্মন্তুদ প্রেক্ষাপটে এক অতি সাধারণ বৃদ্ধ বাসযাত্রী চারপাশে সমাগত ভীতিকর মৌনতা ভেদ করে হঠাৎ বলে ওঠেন: ‘কি দোষ করেছিল আমার ছেলে? ওরা কেন তাকে গুলি করে মারল? কি দোষ-কি দোষ করেছিল সে? উঃ...।’
এভাবে রাজা-বাদশাহ নয় সাধারণ মানুষই যে ইতিহাসের নির্মাতা, আপনি শওকত ওসমান তার সাহিত্যিক সাক্ষ্য রেখে চলেন।

মনে আছে ১৯৯৬-এ স্বাধীনতার রজতজয়ন্তী বর্ষে বা তার কিছু পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনে দেখেছি আপনার ‘দুই সৈনিক’ উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ধারাবাহিক নাটক। মুক্তিযুদ্ধের অনন্ত গৌরবগাথার অন্তর্ভাষ্যের সাক্ষাৎ পেয়েছি আপনার সেই উপন্যাসের নাট্যভ্রমণে। আর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের সদস্য হবার সুবাদে পড়েছি ‘ক্রীতদাসের হাসি’ নামে বাংলা সাহিত্যের সেই অনন্য সাধারণ উপন্যাস। আমাকে এখনো তাড়িয়ে ফেরে উপন্যাসের শেষাংশে খলিফা হারুনর রশীদের উদ্দেশ্যে তাতারীর সংলাপ: ‘শোন, হারুনর রশীদ। দীরহাম দৌলত দিয়ে ক্রীতদাস গোলাম কেনা চলে। বান্দী কেনা সম্ভব! কিন্তু-কিন্তু- ক্রীতদাসের হাসি- না-না-না-না-।’  আর একেবারে অন্তিমবাক্যে নওয়াসের কণ্ঠে: ‘আমিরুল মুমেনীন, হাসি মানুষের আত্মারই প্রতিধ্বনি’ এখনও যেন দ্রিম দ্রিম বাজে বুকের ভেতরে। যে কোনো সময়ে স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে শিল্পের চিরকালীন দলিল হিসেবে গত শতকের ষাটের স্বৈরাচারী আইয়ুবি জমানার বিরুদ্ধে লেখা আপনার প্রতীক-রচনা ক্রীতদাসের হাসি এভাবে অক্ষয় আসন লাভ করে যায়।

তারুণ্যে সমাজতন্ত্রের লাল পতাকায় নিজের আকর্ষণ খুঁজে পেয়েছি। চেতনার মিত্রতা বোধ করেছি আপনার ক্ষুদে ‘সোশালিস্ট’ বইটি পড়ে, তারও চেয়ে বেশি ‘থুতু’ গল্পের পাঠে; যেখানে সমস্ত পুঁজিতান্ত্রিক দানব-সভ্যতার গায়ে থুতু ছুঁড়ে মারে মেহনতি মানবসমষ্টি। হুমায়ুন আজাদের যথার্থ পর্যবেক্ষণে আপনি ‘সহস্র ফালতুর ভিড় ঠেলে দালানের অশ্লীল দম্ভ পেরিয়ে বাংলার অধিকারহীন মানুষের গা ঘেঁষে এগিয়ে গেছেন।’

‘স্বজন স্বগ্রাম’ নামে ক্ষীণকায় পুস্তক পড়ে জেনেছি স্বদেশ-হারানো মানুষের শেকড়-সন্ধানের বৃত্তান্ত। হ্যাঁ, আপনি শওকত ওসমান নামের মানুষটিই তো লিখবেন ‘গেঁহু’ গল্প যা সম্পর্কে আপনারই ছাত্র কৃতী কথাসাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াস লিখেছেন:
‘বাংলাদেশের বিহারি সম্প্রদায়ের সীমাহীন দুর্দশার কথা মনে হলে আমার চোখে কিন্তু জেনেভা ক্যাম্পের ছবি ভাসে না। বরং, যখনই জেনেভা ক্যাম্পের ওদিকটায় যাই, গোটা এলাকার ওপর ক্রেন ছাড়াই আকাশ থেকে ঝুলতে থাকে একটা মালগাড়ির অন্ধকার ওয়াগন। যেখানে ঘরকন্না করে একটি বিহারি পরিবার। অন্যদেশে তাদের দেশ ছিল, সেখানে বাপ-দাদার ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদ হয়ে তারা এখানে এসেছে। এখানে তাদের ঘর জোটেনি, পায়ের নিচে মাটিও পায় না তারা। মালগাড়ির পরিত্যাক্ত ওয়াগনে তাদের বসবাস, দু’বেলা দু’মুঠো খাবার জোটে না। এক প্রজন্মে দু’বার বাস্তুচ্যুত এই সম্প্রদায় নিয়ে আরও গল্প এখানে লেখা হয়েছে। কিন্তু নিজের মাটি থেকে ওপড়ানো মানুষের শেকড়ছেঁড়া চেহারা ‘গেঁহু’ গল্পে যেমন প্রকট, অন্য কোথাও তার ছায়াও দেখেছি বলে মনে হয় না।’ (সংস্কৃতির ভাঙা সেতু)

আপনার আরেক কৃতী ছাত্র কবি আবদুল মান্নান সৈয়দের বর্ণনাতে উন্মোচিত দেখি আপনার শিক্ষকসত্তার অসাধারণ স্বরূপ:
‘শওকত ওসমান স্যার কী বই পাঠ্য, তাও সম্ভবত খোঁজ করেননি কখনো। অদ্ভুত অদ্ভুত কথা বলতেন তিনি। যেমন: একটা মনে আছে। তিনি একটা অদ্ভুত বাড়ি বানানোর স্বপ্ন দেখতেন- যার ছাদ টিনের বাড়ির ছাদের মতো, দুদিকে ঢালু হবে না কিংবা সমতল হবে না, হবে মাঝখানে নিচু। বর্ণনার চেয়ে স্যারের পরিকল্পিত বাড়ির ছবি এঁকে দেখানো ভালো। সাধারণত টিনের বাড়ি হয় ত্রিভুজ। ওপরদিকে উঁচু করে আঁকলে যেমন হয় তেমনি, কিন্তু শওকত ওসমানের পরিকল্পিত টিনের বাড়ির ছাদ ত্রিভুজ উল্টে দিলে যেমন হবে সেরকমের। স্পেশাল বেঙ্গলির ক্লাস হতো ক্লান্ত দীর্ঘ গরমের দুপুর বেলায়। তখন স্বভাবতই স্বপ্ন এসে দেখা দিত। কিন্তু শওকত ওসমান অ-পাঠ্য বিষয় বলেই আমাদের জ্ঞানের ও কল্পনার চোখ খুলে দিয়েছিলেন।’ (স্মৃতির নোটবুক)

এই যে পাঠ্যবইয়ের বাইরে পৃথিবী বিশালের সন্ধান দেয়া এই-ই তো প্রকৃত শিক্ষকের কাজ। আমার বেড়ে ওঠার শহর কুমিল্লায় আপনার ছাত্র প্রাবন্ধিক-গবেষক শান্তনু কায়সারকে পেয়েছি। তাঁর ‘তৃতীয় মীর’ বইয়ের উৎসর্গপত্র দেখে লোভ হতো এমন শিক্ষকের জন্য-‘যার কাছে পাঠ্যবইয়ের বদলে জীবন শেখা যায়’। শান্তনু কায়সারের কাছেই জেনেছি কলকাতার গভর্নমেন্ট কমার্শিয়াল ইনস্টিটিউটে আপনার অন্যতম ছাত্র ছিলেন অরুণ চট্টোপাধ্যায়, পরবর্তীকালে যিনি আমাদের মহানায়ক উত্তমকুমার। ‘উত্তমকুমার থেকে শান্তনু কায়সার’ এই বিশাল ছাত্র-পরম্পরার কথা আপনি উল্লেখ করতেন সগর্বে। ছাত্রগর্বে গরীয়ান শিক্ষক শওকত ওসমান আপনাকে শিক্ষক হিসেবে খুব প্রয়োজন ছিল আমাদের এই প্রজন্মেরও।
প্রেরণার মানুষ আপনি। ছাত্রদের মতো প্রেরণা দিয়েছেন অনুজ লেখকদেরও। এই যেমন সৈয়দ শামসুল হক লিখেছেন: ‘মনে পড়ে অগ্রজ লেখক শওকত ওসমানের কথা-তিনি সাবধান করে দিয়ে বলতেন, কত প্রতিভা নষ্ট হয়ে যায়! একেকটি সফল লেখকের পেছনে পড়ে থাকে নিরানব্বইটি লাশ- তারা পারেনি! (তিন পয়সার জ্যোছনা)

আপনি জানতেন আমাদের এই সমাজ, পরিবেশ কতটা রক্ষণশীলতার বৃত্তে আবদ্ধ, কতটা সৃষ্টিরহিত এবং এর পেছনে ধর্মের ধ্বজাতন্ত্র কতটা ভয়াবহরূপে ক্রিয়াশীল। তাই কখনো কখনো নিজের হৃত-সত্তা শেখ আজিজুর রহমানকে আপনি আবার ফিরিয়ে এনেছেন ‘শেখের সম্বরা’র মোড়কে। কবিতা-কণিকায় তীব্র আক্রমণ করেছেন সাম্প্রদায়িকতা- মৌলবাদ নামের ফ্যাসিজম। নিজস্ব সংবাদদাতা প্রেরিত শিরোনামের কাব্যে আপনার যুগন্ধর পরিহাস ‘কাল মারা গেছে শওকত ওসমান/ইন্নালিল্লাহি...রাজেউন...রবিবার, ২৩ অঘ্রাণ...প্রশ্ন উঠবে তবে কী এ-মরহুমের শত্রু ছিলো। ছিলো তবে ব্যক্তিগত নয়... যে সব পণ্ডিত-শুকর আ’ম মানুষের কাঁধে করে থাকে ভর বর্ণবিদ্বেষ অথবা ধর্মের জিগিরে বর্বর বিভ্রান্ত পথে পরিচালনার কাজে/...তাদের প্রতি ক্রোধ, মরহুমের ঘৃণা/ছিলো সহজাত।’ এ তো শুধু কাব্য-করা বুলিমাত্র নয়, এ যেন রসের ভিয়েনে গভীর দর্শন। মৌলবাদের মূল ধরে এমন টান দেয়া আপনার মতো আর কে-ই পারত!

বঙ্গবন্ধুহীন বাংলাদেশ আপনার কাছে ছিল নয়া পাকিস্তানের নামান্তর। তাই গত শতকের ৭৫-এর মধ্য আগস্টে পিতৃহত্যার সে কলঙ্কময় অধ্যায়ের পর আপনাকে দেখি স্বেচ্ছা নির্বাসনে যেতে কারণ শেখ মুজিবের ধর্মনিরপেক্ষ, সমাজতন্ত্রী, বাঙালি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের উল্টোযাত্রা আপনাকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে সর্বক্ষণ। নির্বাসনও কখনও যে প্রতিবাদের মশাল হয়ে জ্বলতে পারে-আপনি তার দৃষ্টান্ত রচনা করেছেন, অনন্ত আগামীর জন্য রেখে গেছেন আশ্বাসের বরাভয়।

বিবেকবর্জিত আদর্শবাদ-তা সে ধর্মের নামেই হোক, মতবাদের নামেই হোক তা যে মানুষের মঙ্গলের সঙ্গে যোগাযোগরহিত তা আপনার চেয়ে ভালোভাবে শনাক্ত করতে পেরেছে খুব কমই কেউ। সূর্যোদয়ের পরে শিরোনামে প্রকাশিত আপনার দিনলিপিতে তাই পাঠ করে উঠি এই গুরুতর প্রসঙ্গ:
‘...আদর্শ যখন মানবিকতার সঙ্গে যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে, তা মানসিক ব্যাধি ছাড়া আর কিছু উৎপাদন করে না। কবি ফররুখ আহমদ তার বড় নজির। উনিশশ তেতাল্লিশ সনে বাংলার দুর্ভিক্ষের সময় কবিতা লিখেছিল ‘লাশ’। সুন্দর কবিতা এবং শেষের দিকে জালেমদের প্রতি সম্বোধন অভিশাপের মতো শোনায়। অথচ পঁচিশে মার্চ থেকে যখন সৈন্যরা গণহত্যা শুরু করল, এত লাশ দেখে কবির আর ঘৃণা জাগল না বা কোনো দুঃখ স্পর্শ করল না তার কবিহৃদয়কে। লাশ সৃষ্টিকারদের সঙ্গে সে একাত্ম। তার পরবর্তী ভূমিকা আরও জঘন্য। এই-ই হয়, যখন মানুষের দিকে চোখ থাকে না, নির্বস্তুক আদর্শের ফাঁকে পড়ে থাকে কোনো মানুষ।’
(সৈয়দ আবুল মকসুদ উদ্ধারকৃত দিনলিপি দ্রষ্টব্য, ঈদসংখ্যা, প্রথম আলো, ২০১৪)

শওকত ওসমান, আপনার জন্মশতবর্ষে দাঁড়িয়ে ফিরে ফিরে চাই আপনারই দিকে। ত্রিকালদর্শী আপনি তো সাক্ষী দেশভাগ, সাম্প্রদায়িক রায়ট, দুর্ভিক্ষ, ভাষা-আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, মুসলমানের ‘বাঙালি মুসলমান’ আবার বাঙালি মুসলমানের ‘বাঙালি’ হয়ে ওঠা, গণতান্ত্রিক আন্দোলন-সংগ্রাম, ক্ষুধা-দারিদ্র্যের সঙ্গে সাধারণ মানুষের নিরন্তর লড়াইয়ের। আপনি তো শত বইয়ে, গল্প-উপন্যাস, নাটক-প্রবন্ধ, শিশুসাহিত্য এমনকি রসরচনায় এঁকে চলেন আমাদের জাতিসত্তার সামূহিক বিবর্তনরেখা। তারপরও আপনি, সন্তোষ গুপ্তের ভাষায় ‘‘পূর্ববাংলার গোর্কি’, ‘নিজেকে লেখক নয় উপস্থাপন করতেন ‘ঝাড়ুদার গ্রন্থকার’ হিসেবে; মনে করতেন লেখা আপনার ধর্ম। লক্ষ্য ছিল ‘এই ক্লিষ্ট দুনিয়ার/সব ময়লা করবো সাফ।’’
হ্যাঁ, আপনার জন্মশতবর্ষ পেরিয়ে এই আমাদের দৃঢ় উপলব্ধি- বাঙালি সমাজের মানস-আঙিনায় পুঞ্জিভূত জঞ্জাল পরিচ্ছন্ন করতে আমাদের প্রয়োজন শত শত শওকত ওসমান।

নিবেদন ইতি-
আপনার জনৈক অভাজন পাঠক

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ জানুয়ারি ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়