ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

ছোটগল্প : নেপথ্যে

দিলরুবা আহমেদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৯, ৫ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ছোটগল্প : নেপথ্যে

|| দিলরুবা আহমেদ ||

আজ গফুর ভেবেই রেখেছে মাধবীলতাকে বলবে ভালোবাসি।

পরক্ষণেই আনমনেই বলল, ধুর! এই নাম নিয়ে কাওকে কি বলা যায় ভালোবাসি? চাকর চাকর লাগে। মনে হয় ‘গফুর চা কর, চা কর’ এই বলে সবাই যেন ডাকছে চারদিক থেকে। মাধবীলতা তো বলেছেই, সে প্রায়ই স্বপ্নে দেখে বিশাল একটা লাঠি বা ডাল মুখে গুঁজে, দাঁত মাজতে মাজতে লুঙ্গি কোমরে বেঁধে গফুর মিঞা নাকি ঘাটের দিকে চলেছে কাপড় কাচতে। কেমন জঘন্য একটা স্বপ্ন!

দিশা অবশ্য প্রায় সাথে সাথেই বলেছে, আমি তো দেখলাম বাংলাদেশের যে দুটো সাবমেরিন আছে তার একটা থেকে গফুর সাহেব ঝপাস করে লাফ দিয়ে নেমে আমাদের পুকুর থেকে শাপলা হাতে উঠে আসছেন বীরের ভঙ্গিতে।


ওদের বাসায় পুকুরই-বা কোথায়? ঢাকা শহরে হাঁটার জায়গা নেই আবার পুকুর! গ্রামে গেলে জায়গায় অজায়গায় প্রচুর পুকুর দেখে। মামা থাকেন বেশীর ভাগ সময় ঐ গ্রামে। সিরিয়াস পলিটিশিয়ান। মামী ঢাকা শহরের একটা অ্যাপার্টমেন্টে চার মেয়ে নিয়ে আছেন। সেও থাকে। পাহারাদার চকিদার সবই সে। বাজারও করে। পারলে বাবুর্চীও বানিয়ে দিত। কে বলবে সে বুয়েটে পড়ে! দাঁড়িয়েও রয়েছে বুয়েটের গেটের পাশে। চোখে চশমা, শার্ট-প্যান্ট- সুদর্শন এক যুবক সে। হাতের ঘড়িটা মাইকেল কোর-এর। সদ্য পেয়েছে, মাধবীলতাই গিফট করেছে। সবে আমেরিকা থেকে ফিরেছে সে। এসএসসি দিয়েই বেড়াতে চলে গেল দূর দেশে। ফেরার সময় এনেছে। বলেছে জোড়া মিলিয়ে এনেছে। একই রকম মেয়েলী একটা ঘড়ি নিজেও সে পরে। নিশ্চয়ই লুকিয়ে কিনেছে। মামীকে হয়তো দেখায়নি। দেখালে অবশ্যই খবর ছিল। তবে তিনিও তার জন্য একটা পারফিউম এনেছেন এবার। বোঝাই যায় মামী তার ছোট দুইটাকে নিয়ে ভালোই সময় কাটিয়ে এসেছেন আমেরিকায়। পারফিউম দিতে দিতে বলছেন, ক্লাশে যাবার সময় গায়ে মেখে যেও। বুয়েটে ভর্তি হওয়ার পর মামীর চোখে তার একটু উন্নতি হয়েছে। মামা অবশ্য সব সময়ই গর্বিত, যাকে দেখেন তাকেই বলেন, আমার ভাগ্নে বুয়েটে পড়ছে। খুব সুন্দর আবৃত্তি করে। গল্প লেখে। মাশাআল্লাহ আমার বোনের রূপ পেয়েছে।

মামী সাথে সাথেই আশপাশে বা পিছন থেকে বলেন, ছেলেদের রূপ না গুণ দেখে, কামাই দেখে। ছেলেরা মায়ের মতো  হলে দেখতে ভালো দেখায় নাকি! মেয়ে মেয়ে মনে হয়।


মা মারা গেছেন সেই কবে, তারপরও অযথা মায়ের সাথে মামীর পায়ে পা লাগিয়ে ঝগড়া করার ইচ্ছেটা আর বুঝি মরলো না। তবে বুঝতে পারে মামী এখন আর তেমন অপছন্দ তাকে করেন না। উল্টে বলেন, তার চারটি মেয়ের মাঝে একটিকে তার ঘাড়ে চাপিয়ে দেবেন। বলেন অবশ্য বুয়েটে ভর্তি হতে পারার পর থেকে। আগে কখনও বলেননি।  মামীর চোখে সে এখন দামী হয়েছে, বড় হয়েছে। যদিওবা সেই ছোট থেকেই এই বাড়িতেই বড় হচ্ছে সে। মাধবীলতার সাথে যে তার একটা ভাব সাবের সম্পর্ক হবে হবে করছে তা অবশ্য উনি জানেন না। মাধবীলতা তিন নম্বর। সবচেয়ে সুন্দরীও মাধবীলতা। ওর বিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে না। লাইন পড়ে যাবে বাসার সামনে। তার উপরের জন দিশা, পিঠাপিঠি, ফাইন আর্টসে পড়ে। এস্কালপচার বানায়, ছবি আঁকে। তার মূর্তিগুলোর হয় হাত থাকে না, নয় পা। কালো কালো কঠিন চেহারার রমণী বানায় সে। বলেছেও কয়েকবার পুতুলের মতন সুন্দর দেখতে কিছু কি বানাতে পারো না?

দিশা অবাক হয়ে বলেছে, এদের চোখ যে কী মায়াবী তা কি দেখ না?


সে অনেকবার চেয়ে দেখেও বোঝেনি কেন বলছে সুন্দর ঐ চোখগুলোকে। সুন্দর লাগে তার মাধবীলতার চোখ। চোখের নাচন। চাহনী। দিশা পড়ে আছে সেই ছোট থেকে মোটা ফ্রেমের চশমা। কে জানে তার চোখ কেমন? কে যায় তার চোখ দেখতে। ইদানীং মামীর ইশরা বুঝে যে সরাসরি দিশাকে আপা ডাকতে শুরু করে দিয়েছে। বল আপু, জী আপু, কি খবর আপু, কর কি আপু, এইভাবে চালাতে চাইছে। বড় জনকে তো বহু আগে থেকেই আপা ডাকে। বড় অনেক। সবার ছোটটা অনেক ছোট। থাকলো তাহলে হারাধনের দুটো মেয়ে। টার্গেট তার তিন নম্বরটা। যে কোনভাবেই হোক দিশাকে বাদ দিতে হবে। তাহলেই হবে। ভাবতেই তার মনটা খুশীতে ভরে উঠে। বুঝতে পারে রক্তে তার বাবার উত্তরাধিকারই বইছে। মা মরতে এক বছরও দেরী করেনি, তাকে মামার বাড়িতে ফেলে দিয়ে বিয়ে করে ফেলেছেন। নিজেরটাই শুধু বোঝেন তিনি। নিজে কি চান তাই ভাবেন। বাবার মতো সে হতে চায়নি কিন্তু কেবলই যেন একটা জেদ কাজ করছে ভেতরে। সে কোনো ছাড় দেবে না। কেউ তাকে এতটুকুও ছাড় দেয়নি। আর তাই নির্বিকারভাবে গেল ছ'মাস থেকে দিশাকে আপা ডাকছে। দিশাকে দেখলেই খুব উৎসাহ সহকারে বলে, আপু কী করে দিতে পারি বলো?

সাথে সাথে আপুজান রেগে বলেন, বাদরামী করো? হঠাৎ আপা-আপু আসলো কোত্থেকে? এতো জীবনেও শুনিনি।

বড় আপুর তো সহসাই বিয়ে হয়ে যাবে। তখন কাকে আপু ডাকবো, তাই তোমাকে ডাকছি।

বড্ড ফাজিল হয়েছো। ডিসলাইক।

আমিও কিন্তু সিরিয়াসলি তোমাকে আপু ডাকতে চাই।

ডবল ডিস লাইক।

খুব তো সেদিন বললে তোমাদের কলেজে এখন নাকি ছোটরাও বড়দের তুমি বলে, নাম ধরে ডাকে। বললে তখন এটা খুব খারাপ আর এদিকে আমি যখন উল্টা করতে চাইলাম তাও অপছন্দ।

ইয়েস ডিসলাইক।

ডিলাইট কর। আনন্দময় হোক।

আবারও ডিসলাইক।

তুমি কি আমাকে ফেইসবুক পেয়েছো? কেবল লাইক আর ডিসলাইক দিয়ে যাচ্ছো।

গফুর শোন, তুমি আমার থেকে এক বছর তিন মাসের বড়। তুমি গ্রাম থেকে এসেছিলে তাই এক সাথে পড়েছি এক ক্লাশে। না হলে উপরের ক্লাশে থাকতে।

হঠাৎ মাধবীলতা কোত্থেকে এসে বললো, বাবা তোমাকে জীবন ভর টেনেছে, পেয়ারা ভাগ্নে তুমি, তাই বলে আপাকে অত সম্মান দেখিয়ে আপা বলে ডাকতে হবে না।

দিশাও বললো, পারলে মামাকে প্রমোশন দিয়ে বাবা করো। বুঝেছ বুদ্ধু!

ওরা দুবোনে তারপরে হাসল তার দিকে চেয়ে চেয়ে।


গফুরও হাসে মনে মনে। এই তো সে চায়,বাবা করতে। দিশা কেমন করে যেন বুঝেও গেছে। খেয়াল করেছে দিশা তার সব কথা আগে আগে বুঝে যায়। সেবার যখন কনসার্টের টিকেট কাটার পয়সা নেই দেখে মন খারাপ করে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, দিশা এসে তাকে কোত্থেকে টাকা দিয়ে বলল, যাও পাখী গিয়ে বল বন্ধুদের যে, তুমিও যাচ্ছ। যেতে যেতে ফিরে বলল, আমাকে নিবে সাথে? আমারও যাওয়ার সাধ।

এতগুলা ছেলের সাথে যাবে?

চল আমি আর তুমি ,দুজনে যাই।

মামা মেরে ফেলবেন।

মাধবী বললো তুমি ভয় পেতে কি!

উত্তরটা সে দেয়নি। কেন যেন বলা যায়নি মাধবীলতা বললে আমি মহীরূহ হয়ে যেতে পারি।

বুয়েটের প্রথম পিকনিকেও একটা সুন্দর টি-শার্ট এনে দিয়ে বলল, এটা পরে যাও। মেয়েরা টাসকি খাবে। চলে গিয়ে আবার ফিরে এসে জানতে চাইল, টাকা আছে? সেই কক্সবাজার যাবে, কত দূর!

এ কারণেও দিশাকে আপু মা কত কিছু ডাকতে ইচ্ছে করে।


ফেরার সময় চার জনের জন্য যার যার নাম খোদাই শামুকের চাবির রিং এনেছিল। ভেবেছিল মাধবীলতা ওটা ব্যবহার করবে। আজ পর্যন্ত একদিনও দেখলো না। দিশার সব চাবি ওটাতেই রাখে। বাসায় ফিরলেই এটা-ওটা এনে খেতে দেয়। গ্রামে মাঝে মধ্যে বাবা আর সৎ মায়ের প্যাচাল শুনতে গেলেও ফিরে এসে দেখেছে দিশা অনেক কিছু জানতে চায়, যেন সে তার ঠাকুরমা। মাধবীলতা চোখ বড় করে ঠোঁট বাকিয়ে হয়তো বলে, আমাদের একমাত্র বয় ইন দি ফ্যামেলির হোম কামিং সেলিব্রশন চাই। ওটুকু বলেই নিজের জগতে হারিয়ে যায়। মাধবীলতা নিশ্চয়ই খুব খুশী হয় সে ফিরেছে বলে। কিন্তু আর কিছু তো সে জানতে চায় না। দিশা কত কি প্রশ্ন করে। গ্রামে কোন পরীর দেখা পুকুরঘাটে পেয়েছিল কিনা জানতে চায়। সে জবাব দেয় না দেখে মামীর মতন ভ্রু কুঁচকে চেয়ে থাকে। তবে দিশাও খেয়াল করেছে আজকাল মামীর কোঁচকানো ভ্রু অতটা কুঁচকায় না তাকে দেখলে। নিজেই মা-কে বলেছে, তোমায় দুই ভ্রুর মাঝে একটা কোঁচকানো ভাঁজ পড়ে যাচ্ছিল, এবার সেরে যাবে, তোমাকে ইয়াং দেখাবে। মামী ভ্রু কুঁচকে এবার সত্যি সত্যিই দিশার দিকে চেয়েছিলেন। দিশা না থেমে তার দিকে চেয়ে বলেছে, তুমি যদি খুব ভালো পাশ দিয়ে ডগবগে একটা চাকরি পেয়ে যাও, ভাব তোমার মামীর তাহলে লাইফ সেট। আম্মার কোঁচকানো চেহারা ভেনিশ হয়ে যাবে ফরএভার। বলে সে হা হা করে হেসে উঠেছিল।

মামী ওদিকে ছুটে যান দিশার দিকে লাঠি নিয়েই। কিন্তু তারপরই দিশা চলে যেতেই আনমনে কাঁদতে বসেন। বলেন, কে বিয়ে করবে এই খোড়া মেয়েকে। আজকাল প্রায়ই বলেন কথাটা।


গফুরের খুব দুঃখ হয় কথাটা শুনলে। কেন বলেন খোড়া? একটু খুড়িয়ে হাটে। এ আর এমন কি। মামী ওখানেই থামেন না, আজকাল আরো কয়েক লাইন যোগ করেন। করেন শুধু তার সামনেই। বলেন, রংয়েরও তো যে ছিরিছাদ!

গফুর তখন বলে, এমন মেঘলা আকাশ কার না ভালো লাগে।

মামী বেশ খুশী মনে তখন উঠে যান। মেয়ের প্রশংসা শুনতে কোন মা-র না ভালো লাগে। তাকেও যখন ছোটবেলা সবাই রাজপুত্র বলতো মা খুব খুশী হতেন নিশ্চয়ই। মার কথা মনে পড়ে যায় মাঝে মাঝেই। দিশার সাথে মায়ের চেহারার কোন মিল নেই। অথচ দিশা কোথায় কোথায় কেমন করে যেন মাকে ধরে ধরে রাখছে তার সামনে, তার এমনই মনে হয়।

মাধবীলতা আসছে না কেন এখনও। আজ বলেছে বুয়েটে আসবে বান্ধবীদের নিয়ে। সেই কখন থেকে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সে নিশ্চয়ই তার সাথে ঘোরার মতলবে এই পরিকল্পনা করেছে। মাধবীলতা হাঁটে বেশ গরবিনীর ভঙ্গীতে। ঐ রাজকীয় ভঙ্গীমার রমণীর সাথে বুয়েটময় আজ ঘুরে বেড়াতে তার খুব ভালো লাগবে। নিজেকে রাজা মনে হবে ।

এই যে সে ঘুরে এলো ইউএস থেকে। গফুর কি ভয়ে ভয়ে ছিল? যদি আর না ফেরে। ফেইসবুকে কত খুঁজে দেখেছে কোনো সন্দেহজনক ছেলে ছোকরা পাওয়া যায় কিনা যার সাথে মাধবী সম্পর্কে জড়াচ্ছে। কত সুন্দর সুন্দর ছবি। কত জনের কত লাইক আর কমেন্টস। আর সে লাইক বা কিছু লিখলেই মাধবী খলখলিয়ে বলে,

ভাইয়া লাইক কমেন্টস দিবা না। আমার বন্ধুরা জিজ্ঞেস করে এই গফুর নামের রাখাল ছেলে আমি কোথায় পেলাম?

মনটাই মাঝে মাঝে খারাপ হয়ে যায়। তার কোনো বন্ধু নাকি গফুর বলতে গিয়ে গ-এর পরে ফু-তে গিয়ে ফু-ই আর বন্ধ করতে পারছিল না। ফোকলা দাঁত মনে হয়। ফু ফু ফু করেই নাকি গেছে। যত্তসব! ১৬-১৭ বছরের মেয়েরা এমনই হবে হযতো-বা। এমনই হযতো হবার কথা। সে তো প্রায় সাত বছরের বড়। সেই বুঝদার হবে। রাগ করলে চলবে না। এখন এলে বাঁচে সে।


আজ মহারাণী প্রথম বুয়েটে আসছে। এদিক-ওদিক বুয়েট ঘুরিয়ে কোথাও খেতে নিয়ে যাবে। ওর বান্ধবীরাও থাকবে কিনা কে জানে। ঘড়ি দেখলো। অলরেডি এক ঘণ্টা লেট। কি সুন্দর ঘড়িটা। একসময় এই মামার বাসাতে অন্ন ধ্বংস করছে বলে কত অপমান সইতে হতো। আজ সময়ের দূরত্বে এসে সেই বাড়ি থেকেই ব্র্যান্ডের ঘড়ি পাচ্ছে। সময় সব বদলে দেয়। যে হাত পেতে থাকতে হয়েছে সেই হাত আজ ভরে যাচ্ছে। জেনে গেছে অন্যের থেকে সম্মান পেতে হলে নিজেকেই সুযোগ্য হিসাবে দাঁড় করাতে হয়।

দিশা এনে দিয়েছিল ঘড়িটা। নিজেই হাতে পরিয়ে দিতে গিয়ে বলেছিল, তোমার সুসময় আর সোনালী সময়কে দেখবার জন্য। মাধবীলতা যদি এসে দিত তাহলে তার বড় ভালো লাগতো। তার মনের কথা তো সবই বোঝে দিশা, ঘড়িটা পরিয়ে দিয়েই বলেছিল মাধবীলতাই দিতো তোমাকে। লজ্জা পাচ্ছে মনে হয়। ভাবছিল, তুমি যদি অপছন্দ কর ঘড়িটা তাই।

মাধবীলতা এনেছে এর উপর আর কথা আছে? একেবারেই না। মুখে অবশ্য দিশাকে কোনো কথাই বলেনি।


ঐ তো আসছে। তিনটি মেয়ে। হেভি সাজবাহার!

দেরী কেন?

আর বোলো না, খেতে গেলাম ওদের সাথে, ঐ যে দেখছো দূরে দাঁড়ানো দুটো ছেলে যার বেগুনী শার্ট, ওর সাথে ডেট আমার আজকে। সাজিদ নাম। বাসা থেকে ফোন এলে বলবে যে আমি তোমার সাথেই আছি। বলেই মাধবীলতা তাকে চোখ টিপ দিলো। তারপর ফুল দেখেই ‘ফুল কার জন্য, আমার? দাও দাও। সাজিদকে দেব’ বলে  

রীতিমত ঝাঁপিয়ে পড়ে গফুরের হাত থেকে ফুলগুলো নিয়ে নিল মাধবীলতা। তার বান্ধবী, মুমু নাম মনে হয়, মেয়েটিকে বাসায় আসতে দেখেছে সে। সেই বলল, বাহ্‌তোদের গফুর ভাই তো বেশ কাজের। আমাদের জন্য ফুলও এনে রেখেছে।

রাখবে না। মাধবীলতা বলল, এত বছর আমাদের বাড়িতে থাকলো। সব শিখে গেছে।

হঠাৎ তার ঘড়িটার দিকে চোখ পড়লো মুমুর। বলল, বাহ্ তোর ঘড়ির সাথে মেলানো একই ঘড়ি, শুধু জেন্টসদের।

দিশাপুর কাণ্ড। বলে দিয়েছিল আমাদের চারটার সাথে মিলিয়ে একই ঘড়ি যেন গফুর ভাইয়ের জন্যও আনি। তাই এনেছিলাম। বলেই হাসি মুখে মাধবীলতা চলে গেল।


দূর থেকে তাকিয়ে থাকলো গফুর। মাধবীলতা যেন অনেক দূরের কেও। দিশা আনিয়েছে অথচ বলেছে মাধবীলতার কথা। এতটা বুঝলো কীভাবে কার নামে দিলে খুশী হবে সে! এত জানা হয়েছে একজনের তাকে আর সে কত অজানাকে কোলে নিয়ে বসে আছে ভুল জনের প্রতীক্ষায়। শুধরাতে হবে, খুব তাড়াতাড়ি ভুলগুলো মুছে ফেলতে হবে। সে কিছুতেই নিজের কিছু হারাতে পারবে না।

গফুর পকেট থেকে মোবাইলটা বের করল। একটা এসএমএস করল দিশাকে- বাঁধা রইলাম তোমার সকল সময়ের সাথে সব সময়ের জন্য।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ জানুয়ারি ২০১৮/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়