ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

ক্রিকেট নিয়ে বিখ্যাত চিত্রকলা

মিলন আশরাফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:৫৩, ১৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ক্রিকেট নিয়ে বিখ্যাত চিত্রকলা

দি ক্রিকেটারস

।। মিলন আশরাফ ।।

জনপ্রিয়তায় ক্রিকেট খেলার অবস্থান বেশ পাকাপোক্ত। ক্রিকেট নিয়ে আমাদের উন্মাদনার শেষ নেই। কবিতা, সিনেমা, নাটক, গল্প, উপন্যাস, তথ্যচিত্র, চিত্রকলা সবখানেই ক্রিকেটের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। লিখিত ফিচারটিতে ক্রিকেটকে কেন্দ্র করে তিনটি বিখ্যাত চিত্রকলার পরিচয় তুলে ধরা হলো:

‘দি ক্রিকেটারস’ চিত্রটি ১৯৪৮ সালে অস্ট্রেলিয়ান শিল্পী রাসেল ড্রাসডেলের আঁকা। পেইন্টিংটিতে তিনটি বালককে ফাঁকা শহরের ভবনগুলোর মধ্যে দেখা যায়। দুজন খেলছে, একজন দাঁড়িয়ে দেখছে। ‘দি ন্যাশনাল গ্যালারি অব অস্ট্রেলিয়া’ চিত্রটির বর্ণনায় বলে: ‘অস্ট্রেলিয়ান মূল শিল্পে ছবিটি অন্যতম প্রধান ও উল্লেখযোগ্য।’ অস্ট্রেলিয়ার বহু পুরনো দৈনিক ‘দি সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ সাক্ষ্য দেয় যে- ‘সম্ভবত বিশ শতকের সবচেয়ে বিখ্যাত চিত্রকর্ম এটি।’

চিত্রকলাটির প্রেক্ষাপট: ইংরেজ প্রকাশক ওয়াল্টার হাচিনসনের নিজস্ব সংগ্রহে ছবিটি পাওয়া যায়। ‘ন্যাশনাল কালেকশন অব ব্রিটিশ স্পোর্টস অ্যান্ড পাস্টটাইমস’ নামে তাঁর একটি নিজস্ব সংগ্রহশালা থেকেই মূলত চিত্রটি আবিষ্কার করা হয়। জানা যায়, হাচিনসন অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট ম্যাচের একটি ছবি খুঁজছিলেন। তিনি মেলবোর্ন অফিসের এক কর্মকর্তাকে  একজন বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান আর্টিস্টের কাছে তার উদ্দেশ্যের কথা জানাতে বলেন। হাচিনসনের জন্য প্রায়ই কাজ করতেন এমন একজন শিল্প বিক্রেতা লিওনার্ড ভস স্মিথ। তিনি বিষয়টি নিয়ে অস্ট্রেলিয়ান বিখ্যাত চিত্রশিল্পী ড্রাসডেলের সঙ্গে আলাপ করেন। তিনি নিউ সাউথ ওয়েলসের সেন্ট্রাল ওয়েস্ট অঞ্চলের হিল এন্ড শহরে থাকতেন। ড্রাসডেল ১৫০ পাউন্ডের বিনিময়ে চিত্রটি আঁকতে রাজি হন। আঁকা শেষ হলে ভস স্মিথ ইংল্যান্ডে হাচিনসনের কাছে সেটি পাঠিয়ে দেন। ছবিটি দেখে হাচিনসন হতভম্ব হয়ে গেলেন। কারণ তিনি যা ধারণা করেছিলেন তার কিছুই নেই ছবিটিতে। তিনি স্মিথের উপর প্রচণ্ড রেগে মেলবোর্নে টেলিগ্রাম পাঠালেন। পরের দিন পুনরায় তিনি ভেবে দেখলেন, ড্রাসডেল বিখ্যাত শিল্পী। তাঁর সম্মানের কথা ভেবে তিনি ভস স্মিথের উপর রাগ কমালেন। ২০০৪ সালে চিত্রটির দাম ওঠে ৬০ লাখ মার্কিন ডলার। বর্তমানে চিত্রটি মেলবোর্নভিত্তিক বিনিয়োগ সংস্থা ডেজিএল ইনভেস্টমেন্টসের মালিকানাধীন। ১৯৯৮ সালে এটি সর্বসাধারণের জন্য প্রদর্শন করা হয়।

চিত্রকর্মটির শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি পর্যালোচনা করে ‘দি সিডনি মর্নিং হ্যারল্ড’ লেখে: ‘ড্রাসডেলের বৃহৎ কম্পজিশনে আঁকা ক্রিকেটারস ছবিটি জাগ্রত রশ্মির নিচে বিস্তৃত খোলা জায়গায় নাটকীয় দৃশ্যের জন্ম দেয়। এরকম নাটকীয়তা পূর্বের কোনো ছবিতে দেখা যায়নি।’ দি ন্যাশনাল গ্যালারি অব অস্ট্রেলিয়া দাবি করে, বাস্তবতাকে ছাড়িয়ে চিত্রকর্মটি শিল্প হিসেবে সফল হয়েছে। ছবিটিতে ব্যাটসম্যানের মডেল টেডি উলার্ড এবং বোলার হিসেবে ছিলেন রয় হোলাইয়ে। ১৯৯৬ সালে মডেলদের সনাক্ত করা হয়। এরপর উলার্ডকে ছবিটি সম্পর্কে বলতে বললে তিনি জানান, ‘আমি শুধুমাত্র ছবিটির মূল্য নির্ধারণ করবো না... এটা আমাদের অনুপাতকেও খুঁজে বের করে তোলে।

পেইন্টিংয়ে দি টাউন অব হিল এন্ডকে যেরকম নির্জন দেখানো হয়েছে সেরকম নয়। পর্যটকরা পরবর্তী সময়ে যখন এটা দেখেছেন তারা এমন মন্তব্য করেছেন। এমনকি চিত্রকর্মটিতে ভবনগুলোকে যেরকম ছড়ানো ছিটানো, মধ্যে ফাঁকা ও মর্মস্পর্শী দেখানো হয়েছে বাস্তবেও তেমনটি নয়। এটা দেখলে মনে হয় যেন চকোলেট বাক্সের ঢাকনার ভেতর থেকে ছিঁড়ে বের হচ্ছে।
কেন্ট বনাম ল্যাঙ্কাশায়ার, ক্যান্টারবেরিকেন্ট বনাম ল্যাঙ্কাশায়ার, ক্যান্টারবেরি
 

কেন্ট বনাম ল্যাঙ্কাশায়ার, ক্যান্টারবেরি


কেন্ট বনাম ল্যাঙ্কাশায়ার, ক্যান্টারবেরি শিরোনামে অঙ্কিত তৈলচিত্রটি আঁকেন অ্যালবার্ট চেভেলিয়ার টেইলর। সাল ১৯০৭। এটি কেন্ট কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের চেয়ারম্যান লর্ড হ্যারিসের পরামর্শে আঁকা হয়। প্রথম কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জয় উদযাপনে ছবিটির উদ্বোধন হয়। টেইলর প্রতিটি কেন্ট খেলোয়াড়দের সঙ্গে আলাদা আলাদা বসার পর ছবিটি আঁকেন। স্বল্পমেয়াদী ঋণে চিত্রটি ১৯৯৯ সাল পর্যন্ত সেন্ট লরেন্স গ্রাউন্ডে ছিল। কেন্ট ক্লাব বীমা সংক্রান্ত জটিলতায় ছবিটি লর্ড প্যাভিলিয়নে স্থানান্তরিত করে। এরপর ২০০৬ সালে একটি দাতব্য ফাউন্ডেশনে নিলামে কেন্ট ক্লাব এটি বিক্রি করে।

চিত্রকলাটির প্রেক্ষাপট: কেন্ট কাউন্টি ক্লাব ১৯০৬ কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতে। পুরো ম্যাচে তারা ৭৮ শতাংশ পয়েন্ট অর্জন করেছিল। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা ইয়র্কশায়ার কাউন্টি ক্লাব অর্জন করেছিল ৭০ শতাংশ পয়েন্ট। ১৮৯০ সালে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশিপ প্রতিষ্ঠার পর থেকে কেন্টের এটা প্রথম জয় ছিল। লন্ডনে এক ভোজসভায় কেন্ট চেয়ারম্যান জর্জ হ্যারিস, বেরন হ্যারিস (৪র্থ) ক্লাবটির বিজয় উদযাপন করার জন্য একটি চিত্র আঁকার আয়োজন করতে পরামর্শ দেন। কেন্ট ক্লাব আলবার্ট চেভেলিয়ার টেইলরকে আর্টিস্ট হিসেবে মনোনয়ন দেয়। এর আগে টেইলর লর্ড হ্যারিসের ব্যাটিংয়ের একটি ছবি আঁকেন ১৯০৫ সালে। সম্মানী হিসেবে টেইলরকে ২০০ গিনিস (গোল্ড কয়েন) দিতে সম্মত হন। পরবর্তীতে অতিরিক্ত সম্মানী হিসেবে সেটা দাঁড়ায় ৩৫০ গিনিতে।

ছবিটির আঁকার প্রাক্কালে লর্ড হ্যারিস পরামর্শ দেন চিত্রকলাটিতে সেন্ট লরেন্স গ্রাউন্ডের একটি ম্যাচের অ্যাকশন শর্ট দেখানো উচিত। আর বোলার হিসেবে থাকবে কেন্টের কলিন ব্লিথ। ১৯০৬ সালের সেশনে কেন্ট মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলেছিল ক্যান্টারবেরিতে। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ল্যাঙ্কাশায়ার ক্রিকেট ক্লাবের বিপরীতে যে ম্যাচটি খেলা হয়েছিল ওই ম্যাচের ছবিটিই আঁকা হবে। ওই ম্যাচটিতে ব্লিথ ৮ উইকেট নিয়েছিলেন। সুতরাং তিনটি ম্যাচের মধ্যে ওই ম্যাচটি গুরুত্বপূর্ণ। টেইলর সিদ্ধান্ত নেন দ্বিতীয় দিনের মধ্যাহ্নভোজের একঘণ্টা আগের দৃশ্যটি আঁকবেন।

চিত্রটিতে ন্যাকিংটন রোডের সীমানা হয়ে সেন্ট লরেন্স গ্রাউন্ডের শেষ সীমা পর্যন্ত দেখানো হয়েছে। পেছনে দৃশ্যমান ক্যান্টারবেরি ক্যাথিড্রাল। ছবিটিতে দেখা যায় প্যাভিলিয়নের শেষ থেকে ব্লিথ বল করতে ছুটে আসছেন, অপর প্রান্তে ব্যাটসম্যান জনি টেলসলি। টেইলর খেলার মাঠের দৃশ্যটিকে সংকুচিত করেছিলেন যাতে কেন্টের এগারো জন খেলোয়াড়কে স্বীকৃতি ও যথাযথ আকার দিতে পারেন।

নির্ভুল আঁকতে টেইলর কেন্ট টিমের প্রত্যেকের সঙ্গে আলাদাভাবে আলাপ করে নিয়েছিলেন। তিনি চেষ্টা করেছিলেন চিত্রটিতে প্রত্যেকের জীবনের সত্যটাকে উপস্থাপন করতে। টেইলর প্রথমে পরিকল্পনা করেছিলেন নন-স্ট্রাইকিংয়ে থাকা ল্যাঙ্কাশায়ার ব্যাটসম্যান হ্যারি ম্যাকপেইসকে অন্তর্ভুক্ত করবেন, কিন্তু পরবর্তী সময়ে তার সাথে বসতে না পারায় তিনি অন্য ল্যাঙ্কাশায়ার ব্যাটসম্যান উইলিয়াম ফিনডেলেকে ব্যবহার করেন। তবে ওই ম্যাচে ফিনডেল খেলেননি। কিন্তু সে টেইলরের লন্ডন স্টুডিওতে উপস্থিত থেকে তাকে সহযোগিতা করেছিলেন। কারণ ১৯০৬ সালের শেষের দিকে ক্রিকেট থেকে অবসর নেওয়ার পর তিনি সারে কাউন্টি ক্রিকেট ক্লাবের নতুন সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন।

প্রদর্শনের ইতিহাস: টেইলর ১৯০৭ সালের মধ্যে ছবিটি আঁকা সম্পন্ন করেন। এই সময়ের ভেতর কর্তৃপক্ষের মতানুসারে তিনি ১৯২টি অগ্রিম খোদাই করেন। এই কাজের জন্য তিনি যথাযথ ক্ষতিপূরণও পান। যখন পেইন্টিংটি উন্মোচিত হয় তখন এর আলো ও ছায়ার সঠিক ব্যবহারের জন্য প্রশংসিত হয়। ১৯০৮ সালে টেইলর ও লর্ড হ্যারিসের স্বাক্ষরিত অল্পসংখ্যক ছবি মুদ্রণ করা হয়। পরবর্তী সময়ে ১৯৯০ ও ২০০০ সালের ভেতর কেন্ট ক্লাব কর্তৃক আরো মুদ্রণ করা হয়। সেখানে প্রত্যেক খেলোয়াড়ের স্বাক্ষর ছিল। যার মধ্যে কলিন কাউড্রে, ই. ডাব্লুউ সোয়ান্টন, লেস আমেস ও ম্যাথু ফ্লেমিং উল্লেখযোগ্য। ফলে ছবিটির জনপ্রিয়তা বেড়ে যায়। রেক্টরি ফিল্ড, ব্লাকহিথ ও লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয় চিত্রটি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে ভিক্টোরিয়ান ও এডওয়ার্ডিয়ান সময়ে ক্রিকেটের সূবর্ণযুগের উল্লেখযোগ্য চিত্র এটি। ক্রিকেটভক্ত ও ইতিহাসবিদদের কাছে চিত্রটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ক্রিকেট ইতিহাস বিশেষজ্ঞ ই. ডাব্লুউ সোয়ানটন চিত্রটির প্রশংসা করে বলেন, ‘ক্রিকেটারদের খেলার সনাক্তযোগ্য সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ অপ্রতিদ্বন্দ্বী চিত্রকর্ম এটি।’

চিত্রটি মূলত সেন্ট লরেন্স গ্রাউন্ডের প্যাভিলিয়নে প্রদর্শিত ছিল। তবে ১৯৯৯ সালে কেন্ট বীমাবহন করতে অক্ষম হলে মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব (এমসিসি) কে দেওয়া হয়েছিল চিত্রটি। এমসিসি চিত্রটি লর্ডস প্যাভিলিয়নে ঝুলিয়ে রাখে। ওদিকে কেন্ট সেন্ট লরেন্স গ্রাউন্ডের মূল স্থানে ছবিটির আরেকটি কপি প্রদর্শন করে। ২০০৫ সালে কেন্ট চিত্রটি বিক্রয়ের অভিপ্রায় দেখালে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে। কেন্ট সদস্যদের কাছে বিক্রয়ের বিষয়ে প্রস্তাব রাখলে কেন্ট ক্লাবের চেয়ারম্যান কার্ল ওপেনশ বলেন, ‘ইতোমধ্যে সেটা হয়ে গেছে, কারণ কেন্ট ক্লাবের অনেক সদস্য এটা পুনর্মুদ্রণ করে বিক্রি করেছে। সুতরাং ক্লাবের জন্য আলাদা করে এটা আর কাজে দেবে না।’ ওপেনশ আরো বলেন, ‘চিত্রকর্মটি বিক্রি করা যাবে না, যতক্ষণ না এর সঠিক মূল্য নির্ধারণ করা হচ্ছে।’ অবশেষে চিত্রটি ২০০৬ সালে সোথেবিতে নিলামে ওঠানো হয়। দাম রাখা হয় ৩ লাখ পাউন্ড থেকে ৫ লাখ  পাউন্ড। তবে চিত্রকর্মটি বিক্রি হয় ৬ লাখ ৮০ হাজার পাউন্ডে। ক্রিকেট পেইন্টিংয়ের মধ্যে এটি হলো রেকর্ড মূল্য। ছবিটি কিনেছিলেন অ্যান্ডু ব্রাউনসোর্ড আর্ট ফাউন্ডেশন। এটা পরিচালিত হতো বাথ রাগবি চেয়ারম্যান অ্যান্ডু ব্রাউনসোর্ড কর্তৃক। ব্রিটিশ গুরুত্বপূর্ণ পেইন্টিংস রাখার জন্য জনগণের কাছে ফাউন্ডেশনটি সুপরিচিত। পেইন্টিংটির নতুন মালিক এমসিসি, সুতরাং এটি লর্ডসে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়। ২০০৬ অর্থবছরে বিক্রির ২৯৩,০০০ পাউন্ড লভ্যাংশ কেন্ট ক্লাবকে দেওয়া হয়। লর্ডস প্যাভিলিয়নের লং রুমে ছবিটি প্রদর্শিত করা হয়েছে এবং ছবির পেছনের দিকে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের নতুন অধিনায়কসহ অনেকগুলো ছবি রাখা হয়েছে প্রচারের জন্য।


টম উইলস
 

‘টম উইলস’ শিরোনামের ছবিটি আঁকেন আইরিশ অস্ট্রেলিয়ান আর্টিস্ট উইলিয়াম হ্যান্ডকক। ১৮৭০ সালের কথা। ১৯ শতকের মাঝামাঝি টম ছিলেন বিখ্যাত অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটার। তিনি অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবলেরও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। কে এই কাজটি করিয়েছিলেন এবং সম্পন্ন হবার পর কোথায় রাখা হয়েছিল সবই অজানা। কিন্তু ১৯২৩ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের মাধ্যমে টেস্ট ক্রিকেটের হাগ ট্রাম্বলের বরাত দিয়ে ছবিটি গ্রহণ করা হয়। হ্যান্ডকক কর্তৃক উইলস-এর সেরা পেইন্টিং এটি। বর্তমানে ন্যাশনাল স্পোটস মিউজিয়ামে প্রদর্শনের জন্য রাখা হয়েছে।

ছবিটির প্রেক্ষাপট: টম উইলস অস্ট্রেলিয়ার প্রথম মাল্টি স্পোর্টস সুপারস্টার হিসেবে স্বীকৃত। ক্রিকেটে তার একচ্ছত্র আধিপত্য ছিল। ফুটবলেও তিনি সমান অবদান রেখেছিলেন। অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবলের পেছনে তার ভূমিকা অনস্বীকার্য। ১৮৩৫ সালে নিউ সাউথ ওয়েলসের ব্রিটিশ উপনিবেশে ভিক্টোরিয়াতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ১৮৫০ সালে তাকে ইংল্যান্ডের রাগবি স্কুলে প্রেরণ করা হয়। স্কুলে তিনি ক্রিকেট টিমে ক্যাপ্টেন হন ও রাগবি ফুটবলে খেলেন। বাড়ি ফিরে ১৮৫৬ সালে উইলস অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে বিপ্লব আনেন। ভিক্টোরিয়ার অধিনায়ক হয়ে আন্তঃম্যাচগুলোতে বলিষ্ঠ নেতৃত্ব  দেন। ১৮৫৮ সালে শীতকালে তিনি একটি ফুটবল ক্লাব গঠনের আহবান জানান ক্রিকেটারদের। এটি তাদের ফিট থাকতে সাহায্য করবে। ওই একই বছর তিনি অস্ট্রেলিয়ান ফুটবলারদের জন্য কিছু নিয়মকানুন বানান। যেটা ‘অস্ট্রেলিয়ান রুলস ফুটবল’ নামে খ্যাত। আদিবাসী অস্ট্রেলিয়ান ও তার জীবদ্দশায় উত্থান পতনের জন্য অস্ট্রেলিয়ার ইতিহাসে তিনি জটিল ও কৌতূহলী ব্যক্তিত্বে পরিণত হয়েছেন।

১৮৭০ সালের শেষের দিকে উইলসের প্রতিকৃতিটি প্রকাশিত হয়। অন্যদিকে আর্টিস্ট হ্যান্ডকক আয়ারল্যান্ডে জন্মগ্রহণ করলেও একটা সময় তিনি নিউজিল্যান্ডেও থেকেছেন। এরপর তিনি মেলবোর্নে স্থানান্তরিত হন। চিত্রটি সমাপ্ত করার পর তিনি জিহ্বার ক্যানসারে মারা যান। ১৯২৩ সালের আগ পর্যন্ত চিত্রটির কোনো প্রমাণপত্র ছিল না। সর্বপ্রথম মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাবের সেক্রেটারি টেস্ট ক্রিকেটের দুর্দান্ত খেলোয়াড় হিগ ট্রাম্বল ছবিটির বিষয় জানান। তিনি ছবিটি কিনে এমসিসিকে দান করেন।

তৈলচিত্রে আঁকা ছবিটি পূর্ণদৈর্ঘ্যে ৩২ সে.মি. প্রস্থে ৪২ সে.মি.। এই মাধ্যমটিতে হ্যান্ডকক অনভ্যস্ত ছিলেন। সাদা পশমী কাপড়ে দণ্ডায়মান উইলসের বেল্ট ও ক্যাপে রয়েছে এমসিসির রঙ। ‘পূর্বের পাশা’র মতো ভঙ্গি। তার জীবনীকার গ্রেগ ডে মুরের মতে, ‘ছবিটিতে তাকে ঠিক খেলোয়াড়ের মতো লাগে না, মধ্যবয়সী উকিলের ন্যায় দেখায়।’ উইলসের দোদুল্যমান পেট শারীরিক পতনের প্রাথমিক পর্যায়ের ইঙ্গিত দেয়। নাকের রুক্ষ লাল ভাব ও গালগুলো বহু বছর ধরে অ্যালকোহলের অপব্যবহারের ফলে তুবড়ে আছে। ইতিহাসবিদ জিওফ্রি ব্লেনি টম উইলসের ফাঁকা অভিব্যক্তিতে ক্লান্তির সামান্য বাতাস দেখেছেন। প্রতিকৃতিটি উইলসের সবচেয়ে স্বীকৃত চিত্র। এই প্রতিকৃতিটি সুভেনির ও ক্রিসমাস কার্ড হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। ১৯৮৭ সালে লিখিত গ্লোরিয়াস ইনিংস: ট্রেজারাস ফ্রম দি মেলবোর্ন ক্রিকেট ক্লাব কালেকশন বইয়ের প্রচ্ছদ হিসেবে প্রতিকৃতিটি ব্যবহার করা হয়। সাংবাদিক মার্টিন ফ্লানগান তার ইতিহাস নির্ভর উপন্যাস ‘দি কল’ (১৯৯৮) এর শেষ অধ্যায়ে আর্টিস্ট হ্যান্ডকক ও উইলসকে কাল্পনিক ভাবে মুখোমুখি করান। ২০০৩ সালে মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড ছবিটির ১৫০ বছর পূর্তি উদযাপন করে। এমসিসি’র উদ্বোধনী সভাপতির অনুষ্ঠানে উইলসের প্রতিকৃতিটি দ্বিতীয় বার উন্মোচিত করা হয়। টম উইলসকে প্রথমবার ১৮৫৮ সালে অস্ট্রেলিয় রুলস ফুটবল ম্যাচের অ্যাম্পায়ার হিসাবে দেখা যায়। এরপর দ্বিতীয়বার প্রথম অস্ট্রেলিয়া দল ইংল্যান্ড সফর করলে অ্যাবরিজিনাল ক্রিকেট দলের কোচের দায়িত্ব পালন করেন। সালটা ১৮৬৬-৬৭।

পুনশ্চ : লেখাটি তৈরিতে উইকিপিডিয়া ও গুগল সার্চ ইঞ্জিনের সাহায্য নেওয়া হয়েছে





রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুন ২০১৯/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়