ঢাকা     মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৩ ১৪৩১

নদী ভাঙনে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সীমারেখা

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৪৫, ২০ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নদী ভাঙনে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারত সীমারেখা

পতাকা হাতে যেখানে বিজিবি সদস্য দাঁড়িয়ে আছেন, এখানেও ছিল একটি সীমান্ত পিলার

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম : খাগড়াছড়ির সীমান্ত নদীগুলোর অব্যাহত ভাঙনে বদলে যাচ্ছে বাংলাদেশ-ভারতের আন্তর্জাতিক সীমারেখা।

চলতি বর্ষা মৌসুমে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার ফেনী নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে নদী তীরবর্তী আনুমানিক ২০ একর ভূমি। ভাঙনের আশঙ্কায় দিন কাটাচ্ছে শতাধিক পাহাড়ি বাঙালি পরিবার। নদী শাসন না থাকায় প্রতিবছর ভাঙন আরো তীব্র হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা। তবে সীমান্তে নিয়মিত টহলের পাশাপাশি ভাঙন রোধে নিজস্ব অর্থায়নে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)।

জানা যায়, ফেনী নদীর উৎপত্তিস্থল নিয়ে দুই দেশের নদী বিশেষজ্ঞদের ভিন্নমত থাকলেও আন্তর্জাতিক সীমারেখার ক্ষেত্রে এ নদীর বড় অবদান রয়েছে। প্রতিবেশী রাষ্ট্র তাদের সীমারেখা নির্ধারণ করে কাঁটাতারের বেড়া দিলেও বাংলাদেশ এখনো কাঁটাতারের বেড়া দেয়নি। তাই সীমান্তের কিছু কিছু স্থানে ফেনী নদীকেই আন্তর্জাতিক সীমারেখা হিসেবে ধরে নেওয়া হচ্ছে। নদী শাসন না থাকায় পাহাড়ি ঢলে প্রতিবছর বিলীন হচ্ছে বাংলাদেশের ভূখণ্ড আর চর জাগছে নদীর ওপাড়ে ভারত ভূখণ্ডে।

খাগড়াছড়িতে বিজিবি ৪০ ব্যাটালিয়ন বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে মাটিরাঙা উপজেলার ৪০ কিলোমিটার সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্ব পালন করছে। বিজিবি সূত্র জানায়, বিগত কয়েক বছরে ফেনী নদীর ভাঙনে আন্তর্জাতিক সীমারেখার ৩৯টি পিলার পুরোপুরি বিলুপ্ত ও ১৬টি পিলার নদীতে পড়ে গেছে। যৌথ পিলার জরিপে এসব তথ্য সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ফেনী নদী শাসন করে ভাঙন বন্ধ করা না হলে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ক্রমশ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। 

মাটিরাঙা উপজেলার দেওয়ান বাজার, বর্ণাল আমতল, অযোদ্ধা ও কদমতলী সীমান্তে ঘুরে দেখা যায়, ফেনী নদীর ভাঙনে বাংলাদেশের খাগড়াছড়ির মাটিরাঙা উপজেলার অনেক ভূমি নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কিন্তু ওপারে ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের অমরপুরে নদীর তীরে কংক্রিটের বাঁধ দেওয়া আছে। এতে করে ভারতের অংশে নদীর পাড় ভাঙার আশঙ্কা নেই। সীমান্ত নিরাপত্তায় থাকা বিএসএফের যাতায়াতের জন্য সীমান্ত সড়ক নির্মিত রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অংশে এসবের কিছু নেই। চলতি বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই নদী পাড়ের জমি ভেঙে নদী গর্ভে বিলীন হচ্ছে। কিছু স্থানে কংক্রিট ব্লক ও বালির বস্তা ফেলে ভাঙন ঠেকাতে কাজ করে যাচ্ছেন বিজিবি জওয়ান ও স্থানীয়রা।

বর্ণাল আমতলী গ্রামের বাসিন্দা চিংলাপ্রু মার্মা জানান, গত কয়েক বছরে ফেনী নদীর ভাঙনে তার ১ একরের মতো জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।

কমল বিকাশ চাকমা জানান, এলাকার ইউসুফ মিয়ার কাছ থেকে জমি বর্গা নিয়ে ২০ দিন আগে তিনি ধানের বীজ লাগান। বীজ লাগানোর কয়েক দিন পর টানা বর্ষণে ফেনী নদীর স্রোতে ৩-৪ বিঘা জমি নদীতে চলে যায়।

দেওয়ান বাজার এলাকার মো: মিজান বলেন, ‘জন্মের পর থেকে দেখে আসছি নদীর অপর পারে ভারতীয় অংশে তীর রক্ষার জন্য পাথরের বাঁধ আছে। আমাদের অংশে তা নেই। ফলে প্রতিবছর একরের পর একর ভূমি চলে যাচ্ছে নদীতে।’

মাটিরাঙার বর্ণাল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আকবর জানান, বর্ণাল ইউনিয়নের থইলাপাড়া, কদমতলী, নয়াপাড়া ও বর্ণাল আমতলী এলাকায় চলতি বছর ফেনী নদীর ভয়াবহ ভাঙনে ৪-৫ একর কৃষি জমি ও নদী তীরবর্তী জমি নদীতে চলে গেছে। ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে মতুমগ কার্বারী পাড়া, দেওয়ানপাড়া ও আশপাশের কয়েকটি গ্রামের ৩ শতাধিক পাহাড়ি বাঙালি পরিবার।

খাগড়াছড়ি ৪০ বিজিবির কমান্ডিং অফিসার লে. কর্ণেল মোহাম্মদ খালিদ আহমেদ জানান, ফেনী নদী ভাঙতে ভাঙতে বাংলাদেশ সীমানার অনেক ভেতরে চলে এসেছে। গত কয়েক বছরের ভাঙনে ভারত-বাংলাদেশের ২২২১/৪ পিলার থেকে ২২৪২/২ পিলার পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার সীমান্তের ৩৯টি পিলার পুরোপুরি বিলুপ্ত ও ১৬টি পিলার নদীতে পড়ে গেছে। যৌথ পিলার জরিপে এসব তথ্য সংগ্রহ করে তা সংশ্লিষ্ট দফতরে জানানো হয়েছে। নদী পাড়ের কৃষি জমি ও হতদরিদ্র পরিবারগুলোর বসতবাড়ি রক্ষার্থে স্থানীয়দের সাথে নিয়ে বিজিবি সাধ্য মতো ব্লক ও বালি ফেলে ভাঙন ঠেকানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, খাগড়াছড়ি কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো: নুরুল আবছার আজাদ জানান, সীমান্ত নদীগুলোর ভাঙন ঠেকাতে নদী শাসন প্রকল্পের উদ্যোগ গ্রহণ করছে সরকার। গত ১১ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেক বৈঠকে এ সংক্রান্ত একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। আগামী শুষ্ক মৌসুমে নদীর ভাঙন রোধে গৃহীত প্রকল্প সমূহের কাজ শুরু হবে।




রাইজিংবিডি/চট্টগ্রাম/২০ জুলাই ২০১৭/রেজাউল করিম/টিপু/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়