ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫৩, ২১ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাইস ট্রান্সপ্লান্টার যন্ত্রে কৃষকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া

বাদল সাহা, গোপালগঞ্জ : এ যেন একের মধ্যে দুই। একই যন্ত্রে ধানের চারা রোপন ও গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ দুটি কাজ একসঙ্গে করতে পেরে কৃষকরা দারুণ খুশি।

গোপালগঞ্জে দ্রুতই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে চাষাবাদের এই যন্ত্রটি। এতে একদিকে যেমন সময় বেঁচে যাচ্ছে, অপরদিকে খরচও কম হচ্ছে। ফলে এ যন্ত্রের প্রতি আগ্রহ বেড়েছে এলাকার কৃষকের।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গোপালগঞ্জ ধান উদ্বৃত্ত জেলা হিসাবে পরিচিত। প্রতিবছর এ জেলার ব্যপক বোরো ধানের আবাদ হয়। এবছর জেলায় ৭৩ হাজার ৫’শ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

আরো জানা গেছে, জেলার কৃষকেরা প্রথমে জমিতে বোরো ধানের চারা লাগান। পরে তারা জমিতে গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেন। এতে কৃষকদের সময় ও আর্থিক খরচ- দুটোই বেশি হয়। সে অনুপাতে অল্প লাভবান হন কৃষক। কিন্তু এ যন্ত্রের সাহায্যে একই সাথে চারা রোপন ও সার প্রয়োগ করা যায়। এতে কৃষকের সময় ও অর্থ দুটোই লাঘব হয়।

কৃষকদের মধ্যে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান চাষ ও ইউরিয়া সার প্রয়োগ যন্ত্রের মাঠ পরীক্ষা ও প্রচারের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। গোপালগঞ্জের  মুকসুদপুর উপজেলার বাহিরবাগ এলাকায় তাই সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো মাঠ ও যন্ত্রের পরীক্ষণ ।

এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ব্রি’র ফার্ম মেশিনারি এন্ড পোস্টহারভেস্ট টেকনোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রহমান, উর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনোয়ার হোসেন এবং বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  মনিরুল ইসলাম ও মুকসুদপুর সংবাদ সম্পাদক হায়দার হোসেন।

যন্ত্রের উদ্ভাবক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার কাম গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের সাহায্যে জমিতে একই যন্ত্রে একসাথে ধানের চারা রোপন ও ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা যায়। এতে কৃষকের অর্থ ও সময় সাশ্রয় করা সম্ভব। মাটির গভীরে সার প্রয়োগ করা যায় বিধায় প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় শতকরা ৩০ ভাগ ইউরিয়া সার কম লাগে।  এ যন্ত্রের সাহায্যে অত্যন্ত কম খরচ ও কম সময়ে অধিক জমিতে চারা রোপন করা যায় এবং বীজতলা তৈরির জন্য আলাদা জমির প্রয়োজন নেই।’

তিনি আরো বলেন, ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের সাহায্যে বোরো মৌসুমে ট্রেতে উৎপাদিত মাত্র ২৫ দিন বয়সী চারা রোপণ করা যায়। চারার উচ্চতা সাধারণত ১২-১৫ সে.মি. হলেই তা মেশিনে রোপণের উপযুক্ত হয়। উদ্ভাবিত যন্ত্রের সাহায্যে ঘন্টায় প্রায় দেড়-দুই বিঘা জমিতে চারা রোপণ ও গুটি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করা সম্ভব। প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় উদ্ভাবিত এই যন্ত্র ব্যবহার করে ধানের চারা রোপণ ও ইউরিয়া সার বাবদ বিঘা প্রতি কৃষকের সাশ্রয় হবে প্রায় ১৫০০ টাকা।

বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা  মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘বোরো মৌসুমে কৃষক সাধারণত জমিতে বিঘা প্রতি ৩৮ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করে থাকে, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার কাম দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগ যন্ত্রের সাহায্যে বিঘায় ২৮ কেজি ইউরিয়া সার প্রয়োগ করেও প্রচলিত পদ্ধতির তুলনায় ১০ ভাগ বেশি ধান উৎপাদন করা যায়।’

প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এবং ফরিদপুরের ভাঙ্গা ব্রি আঞ্চলিক কার্যালয়রে প্রধান ড. আমির হোসেন বলেন ‘রাইস ট্রান্সপ্লান্টার ব্যবহারে একদিকে যেমন কৃষি শ্রমিকের অভাব দূর হবে অন্যদিকে শস্য উৎপাদন অনেকাংশে বৃদ্ধি পাবে, এতে কৃষকরা উপকৃত হবে।’

মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মুহাম্মদ আব্দুর রহমান বলেন, ‘কৃষির মানোন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, পুষ্টি এবং নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থা নিশ্চিতকল্পে ফসল উৎপাদনে লাগসই কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার তথা কৃষি যান্ত্রিকায়ণ এখন সময়ের দাবি।’



রাইজিংবিডি/গোপালগঞ্জ/২১ জানুয়ারি ২০১৮/বাদল সাহা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়