ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

রিকশা চালিয়েও রক্তদান!

রফিক সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩৫, ২১ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রিকশা চালিয়েও রক্তদান!

কালীগঞ্জ (গাজীপুর) সংবাদদাতা : একজন রিকশাচালকও যে রক্তদানের মহৎ কাজটি করতে পারেন, তারই যথার্থ উদাহরণ গাজীপুরের ছোট্ট শহর কালিগঞ্জের নাঈম।

২৩ বছরের এই টগবগে যুবকের পুরো নাম নাঈম দেওয়ান। বাড়ি এ উপজেলারই তুমলিয়া ইউনিয়নের চুয়ারিয়াখোলা গ্রামে। কালীগঞ্জের অলিগলিতে রিকশা নিয়ে ছোটা নাঈমের অন্য পরিচয় এখন ‘শ্রমজীবি স্বেচ্ছাসেবী’। এখানের রক্তদান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সবার কাছেই এ পরিচয়টি গড়ে উঠেছে তার।

নাঈমের প্রথম রক্তদানের ঘটনাটিও দারুণ। জানালেন এখানেরই রক্তদান স্বেচ্ছাসেবক কলেজ শিক্ষার্থী নূসরাত কবির।

নূসরাত জানান, মাস খানেক আগে তিনি নাঈমের রিকশায় যাচ্ছিলেন। এ সময় রক্তের প্রয়োজনে তার মোবাইল ফোনে কল আসে। একজন স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রক্ত নিয়ে কথা বলার সময় নাঈম খুব মনযোগ দিয়ে শোনেন। কথা শেষ হওয়ার এক পর্যায়ে নাঈম তাকে প্রশ্ন করেন রক্ত দিলে কোনো ক্ষতি হয় কিনা। জবাবে তিনি নাঈমকে রক্তদান সম্পর্কিত সম্পূর্ণ তথ্য বলেন। এতে করে তার মধ্যে থাকা ভুল ধারণা ভেঙ্গে যায় এবং তিনি সাথে সাথে রক্তদানে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু তার রক্তের গ্রুপ তিনি জানেন না বলে জানান। ওই সময়ই স্থানীয় একটি ক্লিনিকের সামনে নাঈমের রক্তের গ্রুপ টেস্ট করান নূসরাত। তার রক্তের গ্রুপ ‘বি পজেটিভ’।

পরে প্রায়ই নাঈমের সাথে দেখা হলে তিনি রক্তদানে তার আগ্রহের কথা জানাতেন। এ সময়ই একদিন স্থানীয় ক্লিনিকে একজন মূমুর্ষ রোগীকে বাঁচাতে ‘বি পজেটিভ’ রক্তের প্রয়োজন হয়। নাঈমকে ফোন করলে তিনি সাথে সাথে চলে আসেন রক্ত দিতে। অবশেষে তার রক্তদানের আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ হওয়ায় তিনি ছিলেন হাস্যোজ্জল ও উৎফুল্ল। সেদিন হাসিমুখে একজন মূমুর্ষ রোগীর প্রাণ বাঁচিয়ে চলে আসেন। পরে আরো রক্ত লাগলে জানাতে বলেন নাঈম।

১২ বছর বয়সেই নাঈম তার বাবা আব্দুর রহমানকে হারান। এ সময় জন্ম হয় ছোট বোন শাহনাজের। অভাব অনটনের সংসার, তাই ৫ম শ্রেণির পর তার লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যায়। মা মাসুদা বেগম অন্যের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে সংসার চালান। যে বয়সে স্কুলে যাওয়ার কথা আর খেলার মাঠে দৌড়ে বেড়ানোর কথা, সে বয়সে কিশোর নাঈম সংসার চালনায় মায়ের সাথে সহযোগীতার জন্য বাসে হেলপারের কাজ নেন। এখন সে টসবগে যুবক। জীবনের ভাল-মন্দের সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

নাঈম জানান, তিনি রক্তদান নিয়ে বিভিন্ন কুসংস্কারের কথা শুনেছেন। কিন্তু এখন এর সবই ভুল প্রমানিত হয়েছে। তার মতে, রক্তদানে মানুষ মানুষের জন্য এগিয়ে আসলে অনেক মৃত্যু পথযাত্রী মানুষ বেঁচে যাবে। মানুষে মানুষে সৃষ্টি হবে নতুন বন্ধন।

নূসরাত বলেন, ‘রক্তদান করতে গিয়ে যারা নানা তালবাহানায় সব সময় অজুহাত খোঁজেন, নাঈম দেওয়ান তাদের কাছে শুধু একজন হিরো নয়, সুপার হিরো। একজন শ্রমজীবি নাঈম যদি এত পরিশ্রম করে স্বেচ্ছাসেবীদের ডাকে রক্তদানে এগিয়ে আসতে পারে, তাহলে আমরা সুস্থ্য-সবল আরাম প্রিয় মানুষেরা কেন পারব না?’

রক্তদানের ব্যাপারে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডাক্তার মোহাম্মদ ছাদেকুর রহমান আকন্দ বলেন, ‘যে কোন পেশার একজন সুস্থ্য সবল মানুষ প্রতি চার মাস অন্তর অন্তর রক্ত দিতে পারেন। রক্তদানে শরীর ভাল থাকে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়।’ 



রাইজিংবিডি/কালীগঞ্জ (গাজীপুর)/২১ এপ্রিল ২০১৮/রফিক সরকার/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়