ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

৯ বছরে মামলা ৯০ হাজার, আসামি ২৬ লাখ: বিএনপি

এসকে রেজা পারভেজ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪৭, ৬ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৯ বছরে মামলা ৯০ হাজার, আসামি ২৬ লাখ: বিএনপি

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : ২০০৯ সাল থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ৯০ হাজার ৩৪০টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ২৫ লাখ ৭০ হাজার ৫৪৭ জনকে। এই সময়ে আসামি হিসেবে দলের ৭৫ হাজার ৯২৫ জন নেতাকর্মীকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই পরিসংখ্যান তুলে ধরেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।  

তিনি জানান, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির ১ হাজার ৫১২ জন নেতাকর্মী নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে  বিএনপির নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার সংখ্যা ৭৮২। মোট গুম হয়েছেন ১ হাজার ২০৪ জন। এর মধ্যে ৫৮১ জনকে পরবর্তীকালে অনেকদিন পর গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। গুম হয়ে আছেন এখন পর্যন্ত ৪২৩ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুরুতর জখম হয়েছেন ১০ হাজার ১২৬ জন।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এগুলো রেকর্ড রয়েছে। এছাড়া আরো আছে যেগুলো রেকর্ড করা সম্ভব হয়নি।’

মির্জা ফখরুল জানান, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে এক মাসে বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবী মামলা দায়ের করা হয়েছে ৪ হাজার ১৪৯টি। এজহারগুলোতে নাম দিয়ে দায়ের করা মামলায় জ্ঞাত আসামি হচ্ছে ৮৬ হাজার ৬৯২ জন। আর অজ্ঞাত হচ্ছে ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৭৭ জন। জ্ঞাত এবং অজ্ঞাত মিলিয়ে ৩ লাখ ৬২ হাজার ৯৬৯ জন। এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছে ৪ হাজার ৬৮৪ জন। রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে ২৪৭ জনকে।

সরকার একাদশতম জাতীয় সংসদ নির্বাচন একতরফা করতে সম্ভাব্য সবরকম ষড়যন্ত্র করছে অভিযোগ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আজকে তারা জনগণের মধ্যে এই আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে যে, তারা ভোটারবিহীন এবং বিরোধীদলবিহীন আরো একটি নির্বাচন করার কুটকৌশল অবলম্বন করছে।’

আলাপ আলোচনার মাধ্যমে রাজনৈতিক সংকটের সমাধানের কথা পুনর্ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে রাজনৈতিক সংকট সে সম্পর্কে আমরা বহুবার বলেছি। আমরা বলেছি যে, জনগণের ভোটাধিকার হরণ করে জনগণের মৌলিক ও গণতান্ত্রিক অধিকার হরণ করে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কখনো নির্মান করা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে জনগণের আশা আকাঙ্খার প্রতিফলন ঘটে না- এই ধরনের কোনো নির্বাচন হলে কখনো গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব না।’

‘সেই জন্যই আমরা বারবার বলে আসছি যে, আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধানে আসা উচিত ছিলো। ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে থেকে বলছি। কিন্তু এই সরকার জনগণকে তাদের চিন্তার মধ্যেই আনে না। জনগণকে তাদের প্রয়োজন নেই। সেজন্য রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করে দখলদারিত্বের মাধ্যমে ক্ষমতায় টিকে আছে।’

আগামী নির্বাচন নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের বক্তব্যের প্রসঙ্গ তুলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘দেশে বিদেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তারা সবাই বলছে যে, একটা অবাধ নির্বাচন হবে, সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে এবং লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি থাকবে, সবাই ভোট দিতে পারবে।’

‘আজকের এই পরিসংখ্যানে এই তথ্যে, একটা জিনিসই প্রমানিত হয় যে, সরকার সম্ভাব্য সব রকমের চেষ্টা চালাচ্ছে যেন বিএনপি নির্বাচনে যেতে না পারে। যেন বিএনপি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে তাকে কারাগারে আটকে রাখা যায়, তারেক রহমানকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে নির্বাসিত রাখা যায় এবং সিনিয়র নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে হওয়া মামলাগুলো এই সরকার থাকতেই দ্রুত শেষ করা যায়।’

তিনি বলেন, ‘জনগণ এই অবস্থার পরিবর্তন চায়। এই সরকার পরিবর্তন করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চায় তারা। কিন্তু সেই নির্বাচনে যেন বিরোধী দল অংশগ্রহণ করতে না পারে সরকার তার সব রকম ষড়যন্ত্র করে রেখেছে।’

সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘আবার আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে হবে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে এবং সকল মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। বিএনপি যে ৭ দফা দিয়েছে সেই দাবিগুলো মেনে নিলে তাহলেই কেবল নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি হতে পারে তার আগে নয়।’

‘আমরা একটা সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। দেশের মানুষ ভোট দিতে পারুক এবং নির্বাচনের মধ্য দিয়ে যাতে সরকার পরিবর্তন হয় এবং জনগণের আশা-আকাঙ্খা পূরণ হয় সেটিই চাই,’ বলেন মির্জা ফখরুল।

বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ‘গায়েবী ও মিথ্যা মামলা’র চিত্র তুলে ধরে সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল আরো বলেন, ‘সরকারের একবারও বোধোদয় হচ্ছে না যে, এই কাজগুলো করে তারা সবাইকে বিপদে ফেলছে। এই কাজগুলোর সঙ্গে যারা জড়িত, যারা এই মামলা দিয়েছেন বা লিখেছেন, যারা এই মামলাগুলো করছেন; এসব মিথ্যা মামলা সম্পর্কে ভবিষ্যতে যদি কোনদিন চ্যালেঞ্জ করে কোন কিছু করা হয় প্রমাণ করা যায়; তাহলে সবাই বিপদে পড়বে, আইনত বিপদে পড়বে।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সরকার নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য যত ধরনের কুটকৌশল ও কর্মকান্ড আছে, সবগুলোই তারা চালাচ্ছে। পৃথিবীর কোথাও এমন দৃশ্য নেই যে, নির্বাচনের আগে নির্বাচনের পরিবেশ নষ্ট করার জন্য সরকার যা যা করা দরকার তাই তাই করছে। সরকার বিএনপিকে নির্বাচন থেকে দূরে রাখার জন্য এই কর্মকান্ডগুলো করছে।’

‘আমরা বিশ্বাস করি সরকার যেসব বেআইনি কাজ করেছে, সেসব কাজে তারা আজ আতঙ্কিত। যদি জনগণ ভোট দিতে পারে তাহলে আওয়ামী লীগের যে পাত্তা থাকবে না এবং তাদের অধিকাংশ প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হবে তারা তা জানে। সেই জন্যই তারা বেশি আতঙ্কিত আর এজন্যই তারা বিএনপিকে নির্বাচনের বাইরে রাখতে চায়”, বলেন বিএনপির এই নীতি নির্ধারক।

মিথ্যা মামলা প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, ‘যে অফিসার বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেছেন তার বিরুদ্ধে কেন সরকার ডিপার্টমেন্টাল অ্যাকশন নেবে না, তার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তাকে কেন শাস্তি দেয়া হবে না; এই আলোকে আমরা একটি রিট পিটিশন করার চিন্তা করছি।’

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতাদের মধ্যে মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবির রিজভী, খায়রুল কবির খোকন, ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ অক্টোবর ২০১৮/রেজা/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়