ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

পাবনার অসহায় এক বাকহারা পরিবার

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৪০, ১৭ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পাবনার অসহায় এক বাকহারা পরিবার

পাবনা প্রতিনিধি: ফজলু সরকার (৫০), খুশি খাতুন (৪৭) ও রত্না খাতুন (৪০)। এরা একই পরিবারের তিন ভাই-বোন। এরা সবাই বাক প্রতিবন্ধী। এদের বাবা জয়নাল আবেদিন, তিনিও ছিলেন বাক প্রতিবন্ধী।

বাবা এখন বেঁচে নেই। ২০০১ সালে তিনি মারা যান। বাবা মারা যাওয়ার পর সংসারের দায়িত্ব এসে পড়ে জ্যেষ্ঠ সন্তান ফজলুর ওপর। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি।  তার পরিবারে আরো আছেন বৃদ্ধ মা রাবেয়া বেগম,  ছেলে নূর মোহাম্মদ ও মেয়ে লিমা পারভীন।

পাবনার চাটমোহর উপজেলার নিমাইচড়া ইউনিয়নের ধানকুনিয়া গ্রামের এই পরিবারটির বসবাস। বাকহারা তিন ভাইবোনের মধ্যে একমাত্র খুশি খাতুন ভাতা কার্ড পেলেও ভাতা জোটেনি অন্য দু’ভাইবোনের এবং তাদের বৃদ্ধ মা রাবেয়া বেগমের।  নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন চলছে এই পরিবারের সদস্যদের।

স্থানীয়রা জানান, ফজলু সরকার ঈশ্বরদীতে চাতাল শ্রমিকের কাজ করেন। অন্যদিকে বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় খুশি ও রত্না’র বিয়ে ভেঙ্গেছে বহুবার। বড় ভাই ফজলু সরকারই এখন তাদের ভরসা। ফজলুর স্ত্রী নূরজাহান বেগম সংসারের এমন করুণ অবস্থা দেখে চট্টগ্রামে গিয়ে গার্মেন্টস-এ কাজ করেন। পরিবারের সাথে নেই কোন যোগাযোগ। ছোট ভাই চাঁদ সরকারও পৃথক হয়েছেন বহুদিন আগে!

তবে শত কষ্টের মাঝেও নিজের দুই ছেলে-মেয়েকে লেখাপড়া শেখাতে কার্পণ্য করেননি ফজলু সরকার।

ছেলে নূর মোহাম্মদ পাবনা পলিটেকনিক ইনিস্টিটিউটে পাওয়ার টেকনোলজির শেষ বর্ষের ছাত্র। আর মেয়ে লিমা পারভীন ধানকুনিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র।

বাক প্রতিবন্ধী ফজলু যা আয় করেন তা দিয়ে নিদারুণ কষ্টে জীবনযাপন করে পরিবারটি। কয়েকবছর আগে এই পরিবারের খুশি খাতুনকে একটি ভাতা কার্ড করে দিয়েছিলেন স্থানীয় ইউপি সদস্য।  এদের আর কারোর ভাগ্যেই এই ভাতা কার্ড জোটেনি।

ফজলু সরকারের বাড়িতে গেলে তিনি ইশারায় তার কষ্টের কথা বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন। এ সময় তাঁর মা রাবেয়া খাতুন বলেন, ‘বোবা দুই মিয়েক বিয়্যা দিবের পারলাম না। তারও বয়েস বাইড়ে গ্যালো। বড় ছাওয়ালও (ফজলু) কথা বলবার পারে না। আমার কপালডাই খারাপ। ভোট আসলিই চেয়ারম্যান-মেম্বররা ভাতার কার্ড কইরে দিবি কয়, কিন্তুক পরে আর খবর লেয় না। এখন নাতিই ভরসা।’

অসহায় পরিবারটির ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমারকে অবগত করা হলে তিনি জানান, বাকহারা পরিবারের সদস্যদের ব্যাপারে খোঁজখবর নিয়ে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিনি সহযোগিতার ব্যাবস্থা করবেন।




রাইজিংবিডি/পাবনা/১৭ অক্টোবর ২০১৮/শাহীন রহমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়