ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

যেখানে শুধুই লাল শাপলার রাজত্ব

বাদল সাহা || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৩১ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেখানে শুধুই লাল শাপলার রাজত্ব

গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি: বাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। লাল শাপলায় মন কাড়েনা এমন কেউ বোধ হয় নেই। সেই লাল শাপলায় আচ্ছাদিত হয়ে আছে গোপালগঞ্জের অনেক বিল। যা দেখে মোহিত হচ্ছেন মানুষ।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলার বিভিন্ন বিলে ফুটে থাকা লাল শাপলা বিলের সৌন্দর্য্কে বাড়িয়ে দিয়েছে বহুগুণে। বিলের পর বিল জুড়ে ছড়িয়ে আছে রাশি রাশি লাল শাপলার হাসি। সবুজ পাতার মধ্যে ফুঁটে থাকা লাল শাপলা যেন আমাদেরই প্রিয় লাল-সবুজের পতাকা।

প্রাকৃতিক এ সৌন্দর্য উপভোগে কেবল স্থানীয়রাই নন, দূর-দুরান্ত থেকে আসছেন অনেক পর্যটক। এসব স্থানে মৌসুমী পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার দাবি সৌন্দর্য পিপাসুদের। পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা পেলে বিনোদন কেন্দ্র হতে পারে এসব শাপলার বিল।

দেখা গেছে, জেলার বিভিন্ন বিলের দৃশ্যই এখন অপরূপ। ভোরে লাল সূর্যের সোনালী আভার ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথেই যেন নিজের রূপকেও মেলে ধরছে এই লাল শাপলা। ভোরের শিশিরে ভেজা লাল শাপলা লাল সূর্যের সোনালী আভার সাথে মিলে মিশে যেন একাকার।
 


গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া ও কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দির বিল, জোয়ারিয়ার বিলসহ অন্ততঃ ২৫টি বিলে এখন লাল শাপলার রাজত্ব। বিলের যেদিকেই চোখ যাবে রঙে রঙে মনটাই যেন হয়ে উঠবে রঙীণ।

স্থানীয়রা জানান, অনেক বছর আগে এসব বিলে সাদা শাপলার জন্ম নিলেও বিগত ১৯৮৮ সালের বন্যার পর থেকে শুরু হয় লাল শাপলার রাজ। চারিদিক লালে লালে একাকার হয়ে যায়। এসব বিল সাধারণতঃ এক ফসলি জমি। বোরো মৌসুমেই শুধুমাত্র ধান চাষ করেন কৃষকেরা। এর পর জমিতে বর্ষার পানি এসে যায়। শুরু হয় লাল শাপলার দিন।

লাল শাপলার অপরূপ সৌন্দর্য স্থানীয় নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য হয়ে উঠেছে আয়েরও উৎস। বিলের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য দর্শনে প্রতিনিয়ত ভিড় করছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ নানা বয়সী মানুষ। নৌকায় করে বিলগুলোতে ঘুরে ঘুরেও উপভোগ করছেন সৌন্দর্য। বিলগুলো বছরের ৬ মাস তলিয়ে থাকায় কোন কাজ থাকে না এলাকাবাসীর। ফলে এ মৌসুমে আগত পর্যটকদের নৌকায় করে বিলে ঘুরিয়ে যে আয় হয় তা দিয়ে চালাচ্ছেন সংসার। এছাড়া শাপলা শুধু সৌন্দর্যই নয় ব্যবহৃত হচ্ছে খাদ্যে তরকারি হিসাবে। এলাকার লোকজন সময় পেলেই নৌকায় করে বাড়িতে তুলে নিয়ে যায় এই শাপলা।

দর্শনার্থীদের ভিড় দেখে কোটালীপাড়ার কান্দির বিলে মৌসুমী পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে সম্প্রতি ‘শাপলালয়’ এর উদ্বোধন করা হয়। গোপালগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার উদ্বোধন করেন। কান্দি ইউনিয়নের শেখ হাসিনা আদর্শ মহাবিদ্যালয়ের সাথেই এই ‘শাপলালয়’। পর্যটকদের বিল দিয়ে চলাচলের জন্য কয়েকটি নৌকা, শাপলা মাচাং ও ঘাটলাসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করে ‘শাপলালয়’ করা হয়েছে।
 


উদ্বোধনকালে কোটালীপাড়ার ইউএনও এস এম মাহফুজুর রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান হাজরা, জেলা পরিষদ সদস্য রিনা মন্ডল, ইউপি চেয়ারম্যান উত্তম কুমার বাড়ৈ, শেখ হাসিনা মহাবিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ দিলীপ ভাবুক, সহযোগী অধ্যাপক মিন্টু রায় উপস্থিত ছিলেন।

কোটালীপাড়া উপজেলার কান্দি ইউনিয়েনর চেয়ারম্যান উত্তম কুমার বাড়ৈ বলেন, ‘ কান্দি ইউনিয়নের সর্বত্রই লাল শাপলায় ভরে রয়েছে। মনের ক্ষুধা মেটানোর জন্য ভ্রমণ পিপাসুদের এসব বিলে আসা প্রয়োজন।’

ইউএনও এ.এস.এম মাহফুজুর রহমান বলেন, ‘টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধি সৌধ, কোটালীপাড়ায় কবি সুকান্তের বাড়ি ছাড়াও টুঙ্গিপাড়া-কোটালীপাড়ার বিভিন্ন বিলে লাল শাপলা, পদ্ম ফুলের বিল রয়েছে। এসব অপরূপ দৃশ্য ও ঐতিহাসিক স্থান দেখার জন্য পর্যটকদের আসা উচিত।

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোখলেসুর রহমান সরকার বলেন, ‘প্রাকৃতিক ভাবে জন্ম নেওয়া লাল শাপলার সৌন্দর্য যাতে কোন ভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সেদিকে নজর দেওয়া হয়েছে। সাথে দর্শনার্থীদের জন্য সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। যাতে তারা লাল শপলার সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারেন।’





রাইজিংবিডি/ গোপালগঞ্জ/৩১ অক্টোবর ২০১৮/বাদল সাহা/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়