ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

নাম তার ‘মানবতা বিপণি’

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:২৩, ২২ নভেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নাম তার ‘মানবতা বিপণি’

পাবনা প্রতিনিধি: নাম তার ‘মানবতা বিপণি’। একটু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। পাবনার বেড়া উপজেলার কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এই উদ্যোগটি নিয়েছেন ।

কাশিনাথপুর বাসস্ট্যান্ডের পাশে এই ‘মানবতা বিপণি’ স্থাপন করা হয়েছে গত ১২ নভেম্বর। যাত্রা শুরুর মাত্র এক সপ্তাহেই বেশ সাড়া ফেলেছে উদ্যোগটি।

উদ্যোগটি এরকম- স্বচ্ছল মানুষ নিজের অব্যবহৃত তবে ব্যবহার উপযোগি কাপড়-চোপড়, জুতা-স্যান্ডেল ‘মানবতা বিপণি’ সাইনবোর্ড সম্বলিত একটি বক্সে রেখে আসবেন। আর অসহায়, দরিদ্র ও দুস্থ মানুষ তার প্রয়োজনীয় জিনিস নির্দ্বিধায় সেখান থেকে নিয়ে যেতে পারবেন। সেই বক্সের মধ্যে রাখা থাকবে কাপড়-চোপড় জুতা-স্যান্ডেল এইসব।

স্থাপনের পর মানুষের মাঝে আলোচনায় চলে আসে ‘মানবতা বিপণি’। প্রথম দিকে স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাদের ব্যবহার উপযোগী অপ্রয়োজনীয় কাপড়চোপড় ও জুতা-স্যান্ডেল দিয়ে শুরু করলেও এখন অন্যান্য অনেকেই তাদের জিনিসপত্র উৎসাহের সঙ্গেই রেখে যাচ্ছেন।

কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউল হোসেন বলেন, ‘এই এলাকায় অনেক গরীব মানুষ আছে, যাদের শীতবস্ত্র তো দূরের কথা, পড়নের কাপড়-চোপড়ও জোটে না। প্রায় প্রতিদিনই স্কুলে গরীব-অসহায় ব্যক্তিরা সাহায্যের জন্য আসে। এ অবস্থায় আমি আমার শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে পরামর্শ করে এই উদ্যোগ নিয়েছি।’

ওই স্কুলের নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী জানায়, প্রতি বছর বিভিন্ন মানুষ ঢাকঢোল পিটিয়ে শীতবস্ত্র বিতরণ করে কিন্তু অনেকেই তা পায় না। তারা আরও জানায়, অসহায় মানুষের স্বার্থে এটি স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের সমাজে এমন অনেক ব্যক্তি আছে যাদের বাড়িতে অব্যবহৃত অনেক পুরাতন কিংবা নতুন কাপড়, জুতা-স্যান্ডেল বা থালা-বাসন থাকে, যা ফেলে রেখে নষ্ট করে। সেইগুলো নষ্ট না করে যদি এভাবে ‘মানবতা বিপণি’তে রেখে যেতে পারেন, তবে আমরা এই বিপণিতে সেই সকল কাপড় বা শীতবস্ত্রগুলো সুন্দর করে সাজিয়ে রাখবো এবং অসহায় মানুষের প্রয়োজন অনুসারে বিনামূল্যে দিয়ে দেব।

কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের সভাপতি ডা. আমিরুল ইসলাম সানু বলেন, ‘এটি করার আরেকটি উদ্দেশ্য হলো- প্রথমত আমাদের শিক্ষার্থীদের সততার শিক্ষা দেওয়া। দ্বিতীয়ত, মানুষকে সচেতন করা। বিত্তবান মানুষ অসহায় মানুষের পাশে যেন দাঁড়ায়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা পরবর্তীতে অসহায় মানুষকে দিনে এক বেলা করে খাবার দেওয়ার স্বপ্ন বুকে লালন করছি, জানি না কবে এটা বাস্তবে রূপ লাভ করবে।’

কাশিনাথপুরের দুই ব্যবসায়ী লাভলু আজিজ ও মোস্তফা শোয়েব জানান, এটি স্থাপনের প্রথম দিনেই তারা বাড়িতে জমে থাকা শীতের কাপড় ও জুতা-স্যান্ডেল দিয়ে এসেছেন। পরিচিত বিত্তবানদেরও সম্পৃক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করছেন তারা।

কাশিনাথপুর বিজ্ঞান স্কুলের প্রধান শিক্ষক আলাউল হোসেন জানান, প্রতিদিন ৫/৭ জন স্বচ্ছল মানুষ এই মানবতা বিপণিতে ৮-১০টি করে তাদের অব্যবহৃত কাপড় দিচ্ছে। আর প্রতিদিন ১৫-২০ জন অসহায় মানুষ কাপড় নিচ্ছে। এভাবে গত এক ৯দিনে অন্তত ৩০০ পিস কাপড় অসহায় দু:স্থ মানুষ পেয়েছে।

এখান থেকে কাপড় পেয়ে উচ্ছসিত একজন দুস্থ মানুষ বলেন, ‘উদ্যোগটা খুবই ভাল। মানুষ উপকার পাচ্ছে। বিশেষ করে শীতের মধ্যে বেশি উপকার পাবে মানুষ।’

 

 

 

 

রাইজিংবিডি/পাবনা/২২ নভেম্বর ২০১৮/শাহীন রহমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়