জমে উঠেছে কক্সবাজার বইমেলা
সুজাউদ্দিন রুবেল : সূর্যটা হেলে পড়তেই বইপ্রেমী মানুষের ভিড়। এ বই, ও বই ছেঁকে সংগ্রহ করছেন পছন্দের বইটি। কিশোর থেকে বৃদ্ধ সব বয়সি পাঠকের ভিড়ে জমে উঠেছে কক্সবাজার বইমেলা।
এবারের বইমেলায় কমবেশি সব ধরনের বই-ই পাঠকের পছন্দের তালিকায় রয়েছে। তারমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, জয়া চ্যাটার্জীর ‘বাংলা ভাগ হল’, রকিব হাসানের ‘ভূতের পাহাড়’, ড. জাফর ইকবালের বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী ‘রবোনগরী’ এর মতো বইগুলোর পাঠক তুলনামূলক বেশি।
কিশোর পাঠকদের চাহিদার শীর্ষে রয়েছে গোয়েন্দা সিরিজ, রম্য সিরিজ, কিশোর ক্লাসিক, বিজ্ঞানভিত্তিক, তথ্যপ্রযুক্তিবিষয়ক বইগুলো। এ ছাড়াও, মেলায় কক্সবাজারের কবি মানিক বৈরাগীর ‘নৈনিতালের দিন’ বইটির প্রতিও আগ্রহ দেখা গেছে পাঠকদের।
পাঠকেরা বলছেন, সরাসরি বই পড়ার ক্ষুধা অন্য কোনোভাবে পূরণ করা যায় না। তাই ডিজিটাল মাধ্যম স্মার্টফোন, ট্যাব অথবা ল্যাপটপের সাহায্যে গুগল দুনিয়ায় বই না খুঁজে বইমেলায় নিয়মিত ছুটে আসছেন পাঠকেরা। মেলা উপলক্ষে প্রতিটি বইয়ে ‘ছাড়’ থাকায় নিজেদের পছন্দের সব বইগুলো সংগ্রহ করছেন তারা।
বুধবার বিকেলে পাঞ্জেরী প্রকাশনীর স্টলে নিজের পছন্দের বই খুঁজছেন হাশেমিয়া আলিয়া মাদ্রাসার ১০ শ্রেণির ছাত্র ইয়াহিয়া হাসনাত। হাসনাত বলে, ‘মেলা থেকে বই সংগ্রহ করার মধ্যে এক ধরনের আনন্দ আছে। এখানে পছন্দের সব বই-ই পাওয়া যায়। বিশেষ করে প্রিয় লেখক রকিব হাসানের গোয়েন্দা সিরিজগুলো পাওয়া যাচ্ছে। তা ছাড়া, প্রত্যেক বইয়ে ২৫ শতাংশ ছাড় আছে। তাই বন্ধুদের নিয়ে পর পর তিনদিন বই কিনতে এসেছি।’
বেদারুল আলম নামের একজন পাঠক জানান, মেলা আয়োজনের সময় নির্ধারণে আরো সচেতন হওয়া উচিত ছিল। প্রথমত ঈদের পর, দ্বিতীয়ত বৃষ্টির সময়ে মেলা আয়োজন করা উচিত হয়নি। সঠিক সময় নির্ধারণ করে মেলা আয়োজন করা গেলে পাঠকদের আরো বেশি সাড়া পাওয়া যেত।
মেলায় অংশগ্রহণকারী দি ইউনির্ভাসিটি প্রেস লিমিটেডের সেলস অফিসার শংকর দাশ বলেন, ‘তাদের প্রকাশনার বেশির ভাগই ইতিহাস এবং মুক্তিযুদ্ধনির্ভর। জেলা পর্যায়ের মেলা হিসেবে শুরু থেকেই ক্রেতাদের বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। এখানকার মানুষের বই পড়ার প্রতি আগ্রহ ভালো। বিশেষ করে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান একসঙ্গে অনেকগুলো বই অর্ডার করে নিয়ে যাচ্ছেন। আশা করি শেষ পর্যন্ত ভালোই সাড়া মিলবে।’
এবারের মেলায় কিছু বিদেশি পাঠকও দেখা গেছে। উখিয়ার রোহিঙ্গা শিবিরের এনজিওতে কর্মরত বিদেশিরা মাঝেমধ্যে বইমেলা ঘুরে যাচ্ছেন। ইংরেজি ভার্সনের কিছু কিছু বইও কিনছেন। মঙ্গলবার দি ইউনির্ভাসিটি প্রেস লিমিটেডের স্টল থেকে ‘ব্যাংকার টু দ্য পুয়র’ বইটি সংগ্রহ করেছেন একজন বিদেশি। বইটি লিখেছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মোহাম্মদ ইউনুচ। এ ছাড়াও ইংরেজি ভার্সনের ‘বঙ্গবন্ধু ট্রাম্প অ্যান্ড ট্রাজেডি’ বইটিও বিদেশিরা কিনেছেন বলে জানিয়েছেন বিক্রেতারা।
কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরির শহীদ দৌলত ময়দানে সপ্তাহব্যাপী কক্সবাজার বইমেলা শুরু হয় গত ১৫ জুন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের উদ্যোগে আয়োজিত মেলার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছেন কক্সবাজার জেলা প্রশাসন।
মেলা আয়োজক কমিটির সদস্য সচিব তাপস রক্ষিত বলেন, ‘এবারের মেলায় ৪২টি প্রকাশনা অংশগ্রহণ করেছে। এর মধ্যে দেশের সেরা সেরা প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলোও আছে। মেলা উপলক্ষে প্রত্যেক বইয়ে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড় আছে। অন্যান্য সময়ের মতো বেশ ভালোই বিক্রি হচ্ছে। ’
রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/১৯ জুন ২০১৯/সুজাউদ্দিন রুবেল/সাইফুল
রাইজিংবিডি.কম
আরো পড়ুন