ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এজবাস্টনের রোমাঞ্চে শেষ হাসি নিউজিল্যান্ডের

আবু হোসেন পরাগ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৯:০৫, ১৯ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এজবাস্টনের রোমাঞ্চে শেষ হাসি নিউজিল্যান্ডের

সেঞ্চুরি করে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ছেন কেন উইলিয়ামসন

ক্রীড়া প্রতিবেদক : ২০১৫ বিশ্বকাপের দুই সেমিফাইনালিস্টের লড়াই। নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা ম্যাচে চার বছর আগের ইডেন পার্ক যেন ফিরে এলো এজবাস্টনে! যেন একই চিত্রনাট্যের পুনরাবৃত্তি।

কত কিছুই যে মিলে গেল চার বছর আগে-পরের দুই ম্যাচে। আগেরবার ফিল্ডিংয়ে একের পর এক সুযোগ হাতছাড়া করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবারও তাই। আগেরবার গ্রান্ট এলিয়টের ৭৩ বলে ৮৪ রানের এক ইনিংস নিউজিল্যান্ডকে এনে দিয়েছিল ফাইনালের টিকিট। এবার নিউজিল্যান্ডকে পার করেছে কেন উইলিয়ামসনের সেঞ্চুরি। আগেরবার শেষ ওভারে ছক্কায় ম্যাচ শেষ করেছিলেন এলিয়ট। এবার শেষ ওভারে ছক্কা-চারে ইতি টানেন উইলিয়ামসন।

এমন অনেক মিলে যাওয়া রোমাঞ্চকর ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে নিউজিল্যান্ড। এই হারে দক্ষিণ আফ্রিকার সেমিফাইনালের আশাও কার্যত শেষ হয়ে গেছে। আর নিউজিল্যান্ড সেমিফাইনালের পথে এগিয়ে গেছে আরেক ধাপ।

বুধবার ভেজা আউটফিল্ডের কারণে দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচের দৈর্ঘ্য নেমে এসেছিল ৪৯ ওভারে। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা ৬ উইকেটে করেছিল ২৪১ রান। নিউজিল্যান্ড সেটি পেরিয়ে যায় ৩ বল বাকি রেখে।

শেষ ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ৮ রান। আন্দিলে ফিকোয়াওয়ের প্রথম বলে মিচেল স্যান্টনার নেন এক রান। পরের বলে ছক্কা হাঁকিয়ে স্কোর লেভেল করার পাশাপাশি সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন উইলিয়ামসন। পরের বলে চার হাঁকিয়ে দলের জয়ও নিশ্চিত করেন কিউই অধিনায়ক।

১৩৮ বলে ৯ চার ও একটি ছক্কায় ১০৬ রানে অপরাজিত ছিলেন উইলিয়ামসন। অধিনায়কের সঙ্গে ষষ্ঠ উইকেটে ৯১ রানের জুটির গড়ার পথে ৪৭ বলে ৬০ রান করে জয়ে অবদান রাখেন কলিন ডি গ্র্যান্ডহোম।

এজবাস্টনের মন্থর উইকেটে রান করাটা সহজ ছিল না। লক্ষ্য তাড়ায় নিউজিল্যান্ড ১২ রানেই হারিয়েছিল কলিন মানরোকে। এরপর মার্টিন গাপটিল ও উইলিয়ামসন ৬০ রানের জুটিতে এগিয়ে নেন দলকে। কিন্তু এরপরই ৮ রানের ব্যবধানে কিউইরা হারিয়ে ফেলে তিন ব্যাটসম্যানকে।

ফিকোয়াওয়ের বাউন্সার সামলে ভারসাম্য রাখতে না পেরে পা দিয়ে স্টাম্প ভেঙে হিট উইকেট হন গাপটিল (৩৫)। রস টেলর ক্রিস মরিসের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে ক্যাচ দেন উইকেটের পেছনে। টম ল্যাথামও উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন মরিসের পরের ওভারে। তখন ৮০ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে বিপদে নিউজিল্যান্ড।

পঞ্চম উইকেটে জেমস নিশামের সঙ্গে ৫৭ রানের জুটি গড়েন উইলিয়ামসন। আক্রমণে ফিরে নিশামকে (২৩) ফিরিয়ে এ জুটি ভাঙেন মরিস। এরপরই উইলিয়ামসন-গ্র্যান্ডহোমের সেই জুটি।

তবে দুজনই সুযোগ দিয়েছেন একাধিকবার। বিশেষ করে ইমরান তাহিরের শেষ ওভারে, ইনিংসের ৩৮তম। প্রথম বলে শর্ট মিড উইকেটে উইলিয়ামসনের দেওয়া হাফ-চান্সটা নিতে পারেননি ডেভিড মিলার। চতুর্থ বলে একই জায়গায় তিনি গ্র্যান্ডহোমের ক্যাচটা ঝাঁপিয়েও হাতে জমাতে পারেননি। শেষ বলে উইলিয়ামসনের বিরুদ্ধে তাহির কট বিহাইন্ডের আবেদন করলেও সাড়া পাননি উইকেটকিপারসহ অন্য সতীর্থদের থেকে। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল ডি ককের গ্লাভসে যাওয়ার আগে ব্যাটের কানা ছুঁয়েছিল!

তখন ৭০ রানে ব্যাট করছিলেন উইলিয়ামসন। ওই ওভারে দুই ব্যাটসম্যান ফিরলে ৩ উইকেট হাতে নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সামনে সমীকরণ দাঁড়াত ১১ ওভারে ৬৯ রান। দুর্ভাগ্য তাহিরের, ১০ ওভারে ৩৩ রান দিয়ে ৩৩টি ডট বল করেও উইকেট পাননি। পরে উইলিয়ামসনকে রান আউট করার সুযোগও হাতছাড়া করেন মিলার। উইলিয়ামসন-গ্র্যান্ডহোম এরপর এগিয়ে নিয়েছেন দলকে। আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে গ্র্যান্ডহোম ফিফটি তুলে নেন ৩৯ বলে।

শেষ দুই ওভারে নিউজিল্যান্ডের দরকার ছিল ১৪ রান। এরপরই শুরু শেষের থ্রিলার। ৪৮তম ওভারে লুঙ্গি এনগিডির প্রথম বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে অং অফে ফাফ ডু প্লেসির দারুণ ক্যাচে ফেরেন গ্র্যান্ডহোম। পরের চার বলে আসে ২ রান। ৭ বলে চাই ১২। শেষ বলটা এনগিডি দিয়েছিলেন স্লোয়ার। ঠাণ্ডা মাথায় থার্ডম্যান দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে ব্যবধান কমান উইলিয়ামসন।

সেই চারে ৯২ থেকে উইলিয়ামসন পৌঁছে যান ৯৬-এ। এরপর শেষ ওভারে ছক্কায় সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর জয়সূচক রানটি নেন চার মেরে। ম্যাচসেরার পুরস্কারও উঠেছে তার হাতেই।

এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাও শুরুতেই হয়েছিল ডি কককে। এরপর হাশিম আমলার ৮৩ বলে ৫৫, এইডেন মার্করামের ৩৮, ডেভিড মিলারের ৩৬ ও ভন ডার ডুসেনের অপরাজিত ৬৭ রানের সুবাদে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছিল প্রোটিয়ারা। ৬৪ বলে ২ চার ও ৩ ছক্কায় ইনিংসটি সাজান ডুসেন। ৫৯ রানে ৩ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ডের সেরা বোলার লোকি ফার্গুসন।

পাঁচ ম্যাচে চার জয়ে ৯ পয়েন্ট নিয়ে ইংল্যান্ডকে টপকে শীর্ষে উঠেছে নিউজিল্যান্ড। বৃষ্টিতে ভারতের সঙ্গে পয়েন্ট ভাগাভাগি করেছিল কিউইরা। ছয় ম্যাচে চতুর্থ হারে অষ্টম স্থানে আছে দক্ষিণ আফ্রিকা।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুন ২০১৯/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়