ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

এক বছরে ৫ কোটি টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় করল ওয়ালটন

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫০, ২২ জানুয়ারি ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এক বছরে ৫ কোটি টাকার বিদ্যুৎ সাশ্রয় করল ওয়ালটন

ছবি : শাহীন ভূঁইয়া

আরিফ সাওন, চন্দ্রা (গাজীপুর) থেকে : গত এক বছরে এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সাশ্রয় করেছে ওয়ালটন। এতে সাশ্রয় হয়েছে ৫ কোটি টাকা।

সেভ এনার্জি, সেভ মানি, সেভ প্লানেট- এই স্লোগান নিয়ে ২০১৮ সালের শুরুতে ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলমের উদ্যোগে ও নেতৃত্বে যাত্রা শুরু করে পাওয়ার সেভিং কমিটি।

বিদ্যুতের অপচয় ও অপব্যবহার রোধ করে পরিবেশবান্ধব কারখানা গড়ার লক্ষ্যে যাত্রা শুরু করে মাত্র এক বছরে এক মেগাওয়াট (১ হাজার কিলোওয়াট) বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে দেশের শীর্ষস্থানীয় ইলেকট্রনিক্স, ইলেকট্রিক্যাল ও হোম অ্যাপ্লায়েন্স পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানটি।

গাজীপুরের কালিয়াকৈরের চন্দ্রায় ওয়ালটন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কে গত বছর শুরু হওয়া এ উদ্যোগ চলমান রয়েছে। চলতি বছরে আরো বেশি বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। নেওয়া হয়েছে নতুন কিছু উদ্যোগ।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের উদ্যোগ গ্রহণ করে সফল হওয়ায় পাওয়ার সেভিং কমিটিকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। মঙ্গলবার বিকেলে ওয়ালটন ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্কের কনফারেন্স রুমে এ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন পাওয়ার সেভিং কমিটির সভাপতি ও ওয়ালটন গ্রুপের পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম।

তিনি বলেন, পাওয়ার সেভিং শুধু ওয়ালটনের বিষয় নয়, এটা ইউনিভার্সাল। এটা শুরু হয় ইউরোপে। আমরা একটু দেরিতে শুরু করেছি। মাত্র এক বছরে আমরা এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সেভ করেছি। এটা ছোটখাট ব্যাপার নয়। অপচয় রোধ করে ৫ কোটি টাকা আয় হয়েছে। ৫ কোটি টাকা আয় করা সহজ কথা নয়। সাশ্রয় করে আমরা আয়ে যোগ করতে পারলাম। সকলের চেষ্টায় এটা সম্ভব হয়েছে। এর সুফল শুধু ওয়ালটন ভোগ করবে না। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই সুফল আমাদের দেশের মানুষ ভোগ করবে। দেশের উপকার হবে। এক মেগাওয়াট বিদ্যুতে মাঝারি ধরনের একটা ফ্যাক্টরি বা মোটামুটি একটা শহরের বিদ্যুৎ চাহিদা মেটানো সম্ভব।

তিনি জানান, চলতি বছরে ২.৩ মেগাওয়াট বিদ্যুত সাশ্রয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া, মানুষের বর্জ্য ও কিচেন ওয়েস্টেজ ব্যবহার করে পরিবেশবান্ধব বায়োগ্যাস প্ল্যান্ট স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।



পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ওয়ালটন কাজ করে যাচ্ছে, জানিয়ে ওয়ালটনের এই পরিচালক বলেন, পরিবেশ নিয়ে কাজ করার জন্য গতবছরও সরকারের পক্ষ থেকে ওয়ালটনকে পরিবেশ পদক প্রদান করে সম্মানিত করা হয়েছে। অনেক প্রতিষ্ঠান থাকতেও আমাদের সম্মানিত করা হয়েছে। আপনারা ওয়ালটনকে এগিয়ে নেন। নিজেকে এগিয়ে নেন। দেশকে এগিয়ে নেন। অনেক জায়গায় অনেক কিছু অপচয় হয়। আমরা যদি অপচয় রোধের চিন্তা করি, তাহলে তা থেকে আমরা অনেক সুফল ভোগ করতে পারি। ইতোমধ্যে আমরা সেই সুফল পেতে শুরু করেছি। যা আমাদের এবং আমাদের দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির জন্য ইতিবাচক। এই ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের পণ্যের গুণগত মান বৃদ্ধি পাবে এবং খরচও কমে যাবে।

এস এম মাহবুবুল আলম বলেন, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের এই পদ্ধতি অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করলে অনেক বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে। সাশ্রয় হওয়া বিদ্যুৎ অন্য জায়গায় ব্যবহার করতে পারবে সরকার। এতে দেশে বিদ্যুতের ঘাটতি কমবে।

তিনি সকল প্রতিষ্ঠানকে বিদ্যুৎ সাশ্রয় করার আহ্বান জানান।

উৎপাদন বিভাগের প্রধান আলমগীর আলম সরকার এবং উপ-প্রধান ইউসুফ আলী জানান, এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে উৎপাদন ব্যয় কমেছে। উৎপাদন ব্যয় কমায় আগের চেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যে পণ্য বাজারজাত করা সম্ভব হচ্ছে। এতে দেশের মানুষ উপকৃত হচ্ছেন। কারণ, তারা কম দামে পছন্দের পণ্য পাচ্ছেন।

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের পদ্ধতি সম্পর্কে ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স বিভাগের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মো. শেখ আব্দুল আউয়াল জানান, ইন্ডাকশন মোটর সিস্টেমের পরিবর্তে আধুনিক সার্ভো মোটর ও ইনভার্টার প্রযুক্তির অন্তর্ভূক্তি, এনার্জি সেভিং লাইটের পরিবর্তে এলইডি লাইট ব্যবহার করা হয়েছে।

মেকানিক্যাল বিভাগের প্রধান ইঞ্জিনিয়ার মো. নিজাম উদ্দিন মজুমদার বলেন, বিভিন্ন মেশিন মোডিফিকেশন যেমন: এয়ার কম্প্রেসর, ভ্যাকুয়াম পাম্প এবং ওয়াটার পাম্প সিস্টেমে ক্লোজ কন্ট্রোল সিস্টেম (চাহিদা বাড়ার সাথে সাথে সংয়ক্রিয়ভাবে সরবরাহ বাড়ে এবং চাহিদা কমার সাথে সাথে সংয়ক্রিয়ভাবে কমে) ব্যবহার করে আধুনিক ও অটোমেশন পদ্ধতিতে রূপান্তর করা হয়েছে। মেশিন ইকুইপমেন্ট এমনভাবে সিলেক্ট করা হয়েছে যেখানে বিদ্যুৎ সাশ্রয় হয়।

পাওয়ার সেভিং কমিটির সমন্বয়ক ইঞ্জিনিয়ার হাবীব মিয়াজী বলেন, পাওয়ার সেভিংয়ের কাজ করতে গিয়ে অনেক গবেষণা করতে হয়েছে। সম্মানিত সভাপতি এবং কমিটির সদস্যদের সহযোগিতায় সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। ভবিষ্যতে আরো পাওয়ার সাশ্রয় করার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাব।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ওয়ালটনের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল এস এম শাহাদাৎ আলম। তিনি বলেন, সাশ্রয় হওয়া ৫ কোটি টাকার মধ্যে ২৫ লাখ টাকা ওয়ালটনের সকল পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী বাৎসরিক লভ্যাংশ হিসেবে পাবেন।

এজন্য তিনি পাওয়ার সেভিং কমিটিকে ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানান।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ওয়ালটনের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।





রাইজিংবিডি/ঢাকা/২২ জানুয়ারি ২০১৯/সাওন/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়