ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘ওয়ালটন মানসম্মত পণ্য তৈরি করে’

এম এ রহমান মাসুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:১৪, ১৭ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ওয়ালটন মানসম্মত পণ্য তৈরি করে’

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেছেন, ওয়ালটনের কারখানায় আমি কিছুদিন আগে পরিদর্শন করে এসেছি। সেখানে গিয়ে দেখে মনে হয়েছে তারা অনেক মানসম্মত পণ্য তৈরি করে।

তিনি বলেন, ‘তারা বিভিন্ন দেশে পণ্য রপ্তানি করছে। আমি খুব আশ্চর্যান্বিত যে, আমাদের দেশে টেলিভিশন, মোবাইল ফোন, রেফ্রিজারেটরের মতো ইলেকটনিক্স পণ্য তৈরি হয়।’

মঙ্গলবার সেগুনবাগিচায় এনবিআর কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এ প্রশংসা করেন। আলোচনায় ইলেকট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স, কম্পিউটার, মোবাইল অ্যাসোসিয়েশন প্রতিনিধিরা এ আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

ওয়ালটনের প্রশংসা করে তিনি আরো বলেন, ‘তাদের কম্প্রেসার অনেক ভালো মানের হয়। এমনকি তারা ইউরোপ এবং বিশ্বের অনেক দেশেই পণ্য রপ্তানি করছে।

আমরা চাই, ইলেকট্রনিক্স পণ্য উৎপাদনকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ওয়ালটনের মতো নিজেরা উৎপাদনে যাক।  রপ্তানি খাত আরো সম্প্রসারিত হোক। অন্তত ৫০ বিলিয়ন ডলার হোক। আমরাও যুক্তিসঙ্গতভাবে এ সকল পণ্য উৎপাদনে প্রণোদনা দিয়ে আসছি। সামনেও দেবো।’

দেশে অনেক বড় বড় কোম্পানি রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমরা চাচ্ছি ওইসব বড় কোম্পানি উৎপাদনে আসুক। তারা ইলেক্ট্রনিক, রেফ্রিজারেটর, কম্পিউটার, মোবাইল ফোনসেট ও অন্যান্য পণ্য উৎপাদন করুক। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরে ওইসব পণ্য রপ্তানি করুক। আমরা আপনাদের সেই দিকে জোড় দিতে বলছি। প্রয়োজনীয় সহায়তা আমরা দিতে রাজি রয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের দেশের ওয়ালটনের উৎপাদিত পণ্য এখন দেশের চাহিদা মিটিয়ে ইউরোপে যাচ্ছে। এই ধরনের বড় কোম্পানি দেশে অনেক রয়েছে। তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। ভাল পণ্য উৎপাদন করে রপ্তানি করার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। কারণ আমাদের দেশের গ্রোথ বাড়াতে চাই।’

সভায় বেসিসের সহ-সভাপতি (অর্থ) মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আইটি-আইটিইএস-এর জন্য ২০২৪ সাল পর্যন্ত করপোরেট কর মওকুফ রয়েছে। কিন্তু এনবিআরের কাছ থেকে এই করপোরেট কর মওকুফ সনদ পেতে পেতে ২-৩ মাস সময় লেগে যায়। এতে বেশ ঝামেলা পোহাতে হয়। আইটি-আইটিইএস প্রতিষ্ঠানকে ২০২৪ পর্যন্ত করপোরেট কর মওকুফ সনদ দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। সেক্ষেত্রে প্রতিবছর আইটি/আইটিইএস প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম সচল রয়েছে কিনা তা যাচাই করে বেসিস প্রত্যয়নপত্র প্রদান করবে।’

তথ্যপ্রযুক্তি খাতের নিত্য নতুন সেবা ও নতুন নতুন উদ্ভাবন যুক্ত হচ্ছে। এজন্য তথ্যপ্রযুক্তি খাতের সেবার পরিসর বাড়ছে। এজন্যে আইটিএসের নতুন খাতগুলো যেমন সিস্টেম ইন্টিগ্রেশন, ক্লাউড সার্ভিস, প্ল্যাটফর্ম সার্ভিস, সফটওয়্যার সার্ভিস, আইটি ট্রেনিং, এএমসি, ইনফরমেশন সিস্টেমস, অডিট সার্ভিস ইত্যাদি খাত আইটিএসের সংজ্ঞায় যুক্ত করার দাবি করা হয় বেসিসের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি সফটওয়্যার ই-ডেলিভারির জন্য নতুন এইচ এস কোড প্রবর্তনের জন্য বেসিস থেকে দাবি রাখা হয়।

বেসিস থেকে আরও দাবি করা হয়, ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের ক্ষেত্রে ব্যাংক এবং পেমেন্ট নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পুরো পেমেন্ট সিস্টেমকে আরো সহজ ও রেগুলার মনিটরিংয়ের আওতায় আনতে হবে। এতে সরকার বিপুল পরিমাণ রাজস্ব (বাৎসরিক প্রায় ৪শ কোটি টাকা) আয় করতে পারবে।

বেসিসের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআরের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আইটি ও আইটিইএসের জন্য ১ বছর মেয়াদী করপোরেট কর মওকুফ সনদ ৩ বছর পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে।’

আমদানিকে নিরুসাহিত করার জন্য আমদানি শুল্ক (সিডি), সম্পূরক শুল্ক (এসডি) এবং নিয়ন্ত্রন শুল্ক (আরডি) বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ইলেকট্রিক্যাল মার্চেন্ডাইস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন।

সভায় বাংলাদেশ মোবাইল ফোন ম্যানুফ্যাকাচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি রুহুল আলম আল মাহবুব বলেন, ‘বর্তমানে দেশে মোবাইল ফোন উৎপাদন হচ্ছে। বর্তমানে ৩০ শতাংশ ম্যানুফ্যাকচারিং হচ্ছে, ২০২০ সালের মধ্যে ৯০ শতাংশ হবে। এছাড়া আমরা রপ্তানি করতে পারবো।’ তিনি এ খাতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা ও মেশিনারিজ স্থাপনে এসএমটি লাইন স্থাপনের সময়সীমা ২০২০ সাল পর্যন্ত বর্ধিত করার প্রস্তাব করেন।

তিনি বলেন, ‘মোবাইল ফোনের মাদারবোর্ড উৎপাদনের সুযোগ দিলে বড় বড় কোম্পানি এদেশে কারখানা স্থাপন করবে। তৈরি হবে এ খাতের ব্যাকওয়াক লিঙ্কেজ প্রতিষ্ঠান।’ এ খাতের জন্য তিনি দীর্ঘমেয়াদী নীতি সহায়তা দাবি করেন।

সংগঠনের একজন সহ সভাপতি বলেন, ‘আইটি খাতের জন্য গত অর্থবছর বাজেটে একটি নির্দেশনা ছিল; ফলে সে খাত সুবিধা পাচ্ছে ও এগিয়ে যাচ্ছে।’ মোবাইল ফোন উৎপাদন খাতের জন্য আগামী অর্থবছর বাজেটে সে রকম একটি নির্দেশনার প্রস্তাব করেন তিনি। আন্ডার ইনভয়েসিং এর মাধ্যমে স্মার্ট ফোন আমদানি হচ্ছে- এদিকে নজর দিয়ে আমদানি শুল্ক বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়।’

রেফ্রিজারেটর ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং ইলেট্রনিক্স ও ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড হোম অ্যাপ্লায়েন্স ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের উপদেষ্টা এস এম শোয়েব হোসেন নোবেল সভায় বলেন, ‘আমরা কম্প্রেসার কারখানা করেছি।  এজন্য এনবিআর থেকে কোনো নীতি সহায়তা পাইনি। আমরা বলেছি তৈরিকৃত কম্প্রেসার আমদানিতে মাত্র ৫ শতাংশ শুল্ক দিতে হয়।  অথচ কম্প্রেসার তৈরিতে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ৫ শতাংশ থেকে ১৫ শতাংশ। আমরা চাই দেশীয় শিল্প রক্ষায় শুল্ক বৈষম্য হ্রাস করে যৌক্তিক পর্যায়ে আনা হোক।  তা না হলে কেউ শিল্প স্থাপনে এগিয়ে আসবে না।’

তিনি বলেন, ‘উৎপাদনকারী, আংশিক উৎপাদনকারী ও সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানকে আলাদা আলাদা নীতির আওতায় শুল্ক সুবিধা দাবি করছি।  কারণ যে সম্পূর্ণ পণ্য দেশে তৈরি করে তার শুল্ক সুবিধা বেশি হওয়া উচিত।  এ তিন জাতীয় প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে একই রকম শুল্ক সুবিধা হতে পারে না।’

বাজেট আলোচনায় নোবেল বলেন, ‘রেফ্রিজারেটর, কম্প্রেসার, টেলিভিশন, এলইডি লাইটসহ যে সকল পণ্য সম্পূর্ণ দেশ তৈরি হয় তার জন্য সুরক্ষা প্রয়োজন।  কারণ আন্ডারইনভয়েসের মাধ্যমে পণ্য আমদানি করে দেশীয় শিল্পকে ধ্বংস করা হচ্ছে।  ওই সকল পণ্যের দাম সুনির্দিষ্ট করার পাশাপাশি আমদানি শুল্ক বৃদ্ধি করার সুপারিশ করছি। এ ছাড়া, দেশীয় শিল্পের সুরক্ষায় কাঁচামাল আমদানিতে আরো কিছু শুল্ক সুবিধা দেওয়া উচিত।’
 

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ এপ্রিল ২০১৯/এম এ রহমান/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়