ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:০৫, ৯ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিন

আবারো কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণ ও হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। ঢাকার অদূরে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুরের নয়াপাড়া এলাকায় মাল্টি ফ্যাবস লিমিটেড নামের একটি পোশাক কারখানায় বয়লার বিস্ফোরণে ১৩ জন নিহত ও প্রায় অর্ধশত আহত হয়েছেন।

ঈদের ছুটির পর মঙ্গলবার ওই কারখানা খোলার কথা ছিল। তবে আগের দিন ডায়িং ইউনিটের বয়লার সেকশন চালু করা হয়। সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দে বয়লার বিস্ফোরণ ঘটলে চারতলা ভবনের নিচতলা ও দুতলার দুই পাশের দেয়াল, দরজা-জানালা ও মেশিনপত্র উড়ে যায় এবং বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকে। এ সময় কারখানার সামনের রাস্তা দিয়ে যাতায়াতকারী কয়েকজন পথচারীও আহত হন। বিস্ফোরণের ফলে আশেপাশের কারখানার ভবনগুলো কেঁপে ওঠে এবং দরজা-জানালার কাঁচ ভেঙে যায়।

বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা এই প্রথম নয়। এর আগেও অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে এই বয়লার বিস্ফোরণে। সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী গত এক বছরে সারা দেশে এ ধরনের ঘটনায় অন্তত ৭৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত বছর ২৩ জানুয়ারি গাজীপুরের পুবাইলে স্মার্ট মেটাল কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডে বয়লার বিস্ফোরণে নিহত হয় ছয়জন। ওই বছরের ১০ সেপ্টেম্বর টঙ্গীর টাম্পাকো ফয়েল কারাখানায় একই ধরনের দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ৪২ জনের। এতে আহত হন আরো প্রায় অর্ধশত। এ বছরের ১৯ এপ্রিল দিনাজপুরের গোপালগঞ্জ যমুনা অটো রাইস মিলে বয়লার বিস্ফোরণে ১৭ জন নিহত এবং ২৫ জন আহত হন।

প্রশ্ন হচ্ছে কেন বারবার এধরনের ঘটনা ঘটছে। অভিযোগ রয়েছে, সারা দেশে পাঁচ হাজারের বেশি ঝুঁকিপূর্ণ শিল্পপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কল-কারাখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতর যথাযথ আইন প্রয়োগ না করায় শ্রমিকের মৃত্যু হচ্ছে। এসব শিল্পপ্রতিষ্ঠান বা কল-কারখানায় নিরাপত্তা ত্রুটির কারণে মাঝেমধ্যেই বড় বড় বিস্ফোরণ ও দুর্ঘটনা ঘটছে। এতে হতাহত হচ্ছেন শত শত শ্রমিক।

ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, কারখানা মালিকদের গাফিলতির কারণে এসব দুর্ঘটনা ঘটছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বয়লারের মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে যায়। কিন্তু মেয়াদ শেষ হলেও মালিকরা গাফিলতির কারণে তা পরিবর্তন করেন না। যদিও বিষয়টি দেখভালের দায়িত্ব শ্রম মন্ত্রণালয়ের কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের। এ ছাড়া দক্ষ কর্মী, টেকনিশিয়ান এবং যথাযথভাবে পরিচালনা ও সুপারভিশনের অভাবে বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে বারবার।

এ বিষয়ে কল-কারখানা পরিদর্শন অধিদফতর তরফে বলা হচ্ছে, তাদের প্রতিষ্ঠান থেকে বয়লারের অনুমতি দেওয়া হয়। দেশে সাড়ে পাঁচ হাজার নিবন্ধিত বয়লারের জন্য পরিদর্শক আছেন মাত্র ছয়জন। এগুলো বছরে একবার করে পরীক্ষা করতে হলেও একেকজন পরিদর্শককে ৩৬৫ দিনে ৯১৬টি বয়লার পরীক্ষা করতে হবে।

এ সম্পর্কে শ্রমিকদের অভিযোগ, কারখানা মালিকদের দায়িত্বহীন ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কারখানা পরিচালনার কারণে বারবার এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটছে। তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াও দুর্ঘটনা পুনরাবৃত্তির অন্যতম কারণ।

দেখা গেছে, শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকদের মুনাফার দিকে যতোটা মনোযোগ থাকে নিরাপত্তার দিকে তারা ততোটাই উদাসীন থাকেন। এটা কাম্য হতে পারে না। অপরাধ করে পার পাওয়া গেলে, শ্রমিকদের ঝুঁকির মধ্যে রেখে মুনাফা বৃদ্ধির সুযোগ অসৎ ব্যবসায়ীরা নেবেই। আর এ ধরনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটতেই থাকবে।

তাই শ্রমিকদের নিরাপদ কর্ম পরিবেশের জন্য কারখানার নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে। ঘটনার জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। বয়লার বিস্ফোরণের ঘটনা সুষ্ঠু তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদান করতে হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ জুলাই ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়