ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন : দ্রুত বাস্তবায়ন হোক

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৯, ২১ জুলাই ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন আইন : দ্রুত বাস্তবায়ন হোক

মন্ত্রিসভা সম্প্রতি মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন (সংশোধন) আইন ২০১৭’র অনুমোদন দিয়েছে। এখন থেকে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে সরকারের অনুমতি লাগবে। আইনে মানবদেহে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান ও গ্রহণের ক্ষেত্রে আত্মীয়ের পরিধি বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে।

এছাড়া মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেউ যদি অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন করেন তাহলে তাদের দুই বছরের জেল অথবা ৫ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হবে। আগে এই আইন কেউ অমান্য করলে তাকে সাত বছরের জেল অথবা ৩ লাখ টাকা জরিমানা অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত করা হতো।

এ আইন বাস্তবায়িত হলে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, পুত্র-কন্যা, স্বামী-স্ত্রী ছাড়াও আপন দাদা-দাদি, নানা-নানি, নাতি-নাতনি, আপন চাচাতো,খালাতো, মামাতো, ফুপাতো ভাই-বোনরাও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান ও গ্রহণ করতে পারবেন। মৃত ব্যক্তির অঙ্গপ্রত্যঙ্গও অন্যের দেহে সংযোজন করা যাবে।

এর আগে এ সংক্রান্ত যে আইন বিদ্যমান রয়েছে তাতে শুধু পুত্র-কন্যা, পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী এবং আপন চাচা-ফুপু-মামা-খালা এই ১২ জন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ দান ও গ্রহণ করতে পারেন। তবে চোখ ও অস্থিমজ্জা সংযোজনের ক্ষেত্রে নিকটাত্মীয় হওয়ার আবশ্যকতা নেই। এ ছাড়া প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী কোনো হাসপাতাল সরকারের অনুমতি ছাড়া অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সংযোজন করতে পারবে না। এই আইন পাস হওয়ার পর ৬০ দিনের মধ্যে এই অনুমোদন নিতে হবে। তবে যেসব সরকারি হাসপাতালে বিশেষায়িত ইউনিট আছে তাদের এই অনুমতি লাগবে না।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আশরাফ শামীম জানিয়েছেন, সংশোধিত আইনে কিছু সংজ্ঞা পরিমার্জিত ও পুনর্গঠন এবং কিছু বিষয় সংযোজন হয়েছে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, প্রস্তাবিত আইন মানবদেহের অঙ্গপ্রত্যঙ্গের অবৈধ পাচার রোধের পাশাপাশি এ নিয়ে ব্যবসা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখবে। চিকিৎসা সেবার উৎকর্ষসাধনের সাথে সঙ্গতি রেখে বিদ্যমান চিকিৎসা সেবার মান উন্নয়নে এ আইন করা হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

আইন অনুযায়ী অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বলতে হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, কিডনি, অন্ত্র, যকৃৎ, টিস্যুসহ মানবদেহে সংযোজনযোগ্য যে কোনো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বোঝায়। বিদ্যমান আইনে সরাসরি রক্ত-সম্পর্কীয় আত্মীয় ছাড়া অন্য কারও কাছ থেকে কিডনি গ্রহণ নিষিদ্ধ। কিন্তু দেশে যথাযথ বিধিমালার অভাবে কিডনি বেচাকেনার ক্ষেত্রে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছিল।

সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী দেশে কিডনির অবৈধ বাণিজ্য চলে আসছে দীর্ঘদিন ধরে। মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নিয়ে ব্যবসা এবং অবৈধ পাচারের কাজ করছে একটি চক্র। দেশের বিভিন্ন স্থানে কিডনি ব্যবসাকে কেন্দ্র করে দালাল চক্রের তৎপরতা রয়েছে। অভাবের তাড়নায় ও দালাল চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেকেই তাদের কিডনি বিক্রি করে দেন। কিন্তু কিডনি নিয়ে এই অবৈধ ও অমানবিক ব্যবসা বন্ধ হওয়া জরুরি।

আমাদের প্রত্যাশা সংশোধিত আইনে এসব অবৈধ তৎপরতা বন্ধ হবে। এখন এই আইন দ্রুত বাস্তবায়ন হওয়া প্রয়োজন। আশা করা যায় এ আইন চূড়ান্ত হলে দেশে কিডনি প্রতিস্থাপনসহ অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গের সংযোজন নিয়ে দীর্ঘদিনের জটিলতার অবসান হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/২১ জুলাই ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়