ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

মূল্যবৃদ্ধি রোধে চাই কঠোর পদক্ষেপ

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
মূল্যবৃদ্ধি রোধে চাই কঠোর পদক্ষেপ

কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না চালের বাজার। মূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা যাচ্ছে না কিছুতেই। শুল্ক কমিয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে কয়েক লাখ টন চাল আমদানি করা হলেও বাজারে তার প্রভাব নেই। দাম আরো বাড়তে পারে, ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে এমন গুজবও। অসাধু ব্যবসায়ীরা বাজারে কারসাজি করছে, এমন অভিযোগ উঠছে। গুদামে মজুদ রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানো হচ্ছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে অবিলম্বে এর প্রতিকার না হলে চালের বাজার সাধারণ মানুষের আয়ত্তের বাইরে চলে যাবে অচিরেই।

বর্তমানে সবচেয়ে কম দামের চাল হলো গুটি স্বর্ণা, যা প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা দরে। মোটা চাল ৪৮-৫০ টাকা কেজি। মান অনুযায়ী প্রতিকেজি মিনিকেটের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকা। একইভাবে প্রতিকেজি নাজিরশাইল চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকা দরে। বিআর আটাশ চালের দাম ৫০ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে রয়েছে।

চালের বাজারে দাম বৃদ্ধির জন্য প্রথমে অজুহাত দেয়া হয়েছে অতিবর্ষণ ও বন্যাজনিত কারণে ফসলহানিসহ খাদ্যমজুদ কমে যাওয়া। জরুরি পরিস্থিতি সামাল দিতে চাল আমদানির ওপর সব ধরনের শুল্ক প্রত্যাহার করে নেয় সরকার। বেসরকারী পর্যায়ে চাল আমদানিও শুরু হয়। সরকারও ভারত, ভিয়েতনাম, মিয়ানমার, কম্পোডিয়া ও থাইল্যান্ড থেকে চাল আমদানি শুরু করে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছা থাকলেও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না কিছুতেই।

এ বছরের এপ্রিলে হাওরে বন্যার পর ফসলহানি যতটা ঘটেছে, তার চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ে খাদ্যশস্যের বাজারে। সে সময়ে মোটা ও সরু সব ধরনের চালের দাম ঊর্ধ্বমুখী হতে শুরু করে। পরবর্তীতে সারা দেশ বন্যার কবলে পড়ে, ঘূর্ণিঝড় মোরায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় উপকূলীয় অঞ্চল। এসবের সঙ্গে যুক্ত হয় ধানে ব্লাস্ট রোগের সংক্রমণ। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় প্রধান ফসল বোরো। আর প্রায় পুরোটাই নষ্ট হয় আউশ। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় মাঠে থাকা আমন ধানের।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্র অনুযায়ী, গত বোরোতে চালের উৎপাদন ২০ লাখ টন কম হয়েছে। চালের আমদানি বাড়াতে গত ২০ জুন চাল আমদানিতে শুল্কহার ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১০ শতাংশ করে, কিন্তু এরপরও বাজারে তেমন প্রভাব না পড়ায় গত ১৭ আগস্ট আমদানি শুল্ক আবার কমিয়ে ২ শতাংশ করা হয়। বেসরকারি আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক কমিয়ে আনার পর বেসরকারি পর্যায়ে আমদানি বাড়তে থাকে। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বেসরকারি পর্যায়ে দেশে চাল এসেছে প্রায় পাঁচ লাখ ২০ হাজার টন। আরো ১৭ লাখ টন চাল আমদানির এলসি খোলা হয়েছে। কিন্তু এর পরও বাজারে এর কোনো প্রভাব দেখা যাচ্ছে না।

চালের দাম বাড়ার জন্য মিল মালিকদের দায়ী করে দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। পাইকারি ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করছেন, মিলাররা চাল আটকে রেখে দিচ্ছেন, চাহিদামতো সরবরাহ করছেন না। এছাড়া বাজারে নানা রকম গুজব ছড়ানো হচ্ছে। এক শ্রেণির মিল মালিক ও ব্যবসায়ী চাল নিয়ে চালবাজি করছে উল্লেখ করে খাদ্যমন্ত্রী বলেছেন, ‘চাল নিয়ে দেশকে একটা বিভ্রাটের মধ্যে ফেলার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তবে বাস্তবতা হচ্ছে, কোরবানির ঈদের পর গত দুই সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে ছয় থেকে সাত টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। এ অবস্থায় মূল্যবৃদ্ধি রোধে ও অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি বন্ধে সরকারকে দ্রুত ও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আর শুধু আমদানি করলেই হবে না পাশাপাশি কাজের বিনিময়ে খাদ্য এবং খোলাবাজারে চাল বিক্রির উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। মূল্য নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার মনিটরিং করতে হবে মন্ত্রণালয় ও টিসিবিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়