ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

জাতিসংঘ যুক্ত হলে ফেরত প্রক্রিয়া জোরদার হবে

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ৫ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জাতিসংঘ যুক্ত হলে ফেরত প্রক্রিয়া জোরদার হবে

রাখাইনে অবশেষে প্রথমবারের মতো কূটনীতিকদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের সুযোগ দিয়েছে মিয়ানমার সরকার। তবে মিয়ানমারে কর্মরত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, সংস্থার সদস্য ও সাংবাদিকদের সমন্বয়ে গঠিত দলটিকে কেবল সরকারের নির্ধারিত এলাকায় যেতে দেওয়া হয়। এছাড়া স্বাধীনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা দেখতে দেওয়া হয়নি তাদের। গত ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরুর পর এই প্রথম সেখানে বাইরের কাউকে পরিদর্শন করতে দেওয়া হলো।

কিন্তু এ প্রতিনিধি দল সেখানে যেসব দৃশ্য অবলোকন করেছেন বলে জানিয়েছেন তা নজিরবিহীন ও ভয়ঙ্কর।  মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগ ও গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেয়ার ভয়ঙ্কর নজির দেখে শিউরে উঠেছে- যা পরিদর্শনের পর এক যৌথ বিবৃতিতে প্রতিনিধি দলটি বলেছেন, মানুষের অবর্ণনীয় দুর্ভোগেএবং গ্রামের পর গ্রাম পুড়িয়ে দেওয়ার দৃশ্য দেখে শিউরে উঠেছেন তারা। তারা জানান, সেখানে গ্রামগুলো পুড়িয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং কোনো জনবসতির চিহ্ন নেই।

মিয়ানমার সরকারের নির্ধারিত এলাকার পরিস্থিতিই যদি এমন বীভৎস হয়, তবে যেসব এলাকা তাদের দেখতে দেয়া হয়নি তার পরিস্থিতি কত ভয়াবহ তা সহজেই অনুমেয়। যে ধরনের বর্বরতার চিহ্ন তারা সেখানে দেখেছেন তা রোহিঙ্গা সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সামরিক বাহিনীর জাতিগত নিধনের যে দাবি জাতিসংঘ করেছিল, তার সত্যতাই প্রমাণ করেছে। তারা বলেন, এ নির্মমতা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।

আমরা মনে করি রাখাইনে পরিদর্শনের পর প্রতিনিধিদল যে প্রতিবেদন দিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দেশগুলো সেসব আমলে নিয়ে বৈশ্যিকভাবে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করলে পরিস্থিতির উন্নতি হতে পারে। এখনও যেসব দেশ মিয়ানমারকে সমর্থন করছে, কূটনীতিকদের এ বিবরণ পাওয়ার পর তাদের মনোভাব পাল্টাবে। কেবল বাণিজ্য ও ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থে একটি জাতি নিধনের সমর্থন কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না। এ ধরনের অপরাধের পক্ষ নেয়াকেও মানবতাবিরোধী অপরাধ বলা যায়।

রোহিঙ্গা সংকটের দ্রুত সমাধানের জন্য এ সংকটে সবচেয়ে ভুক্তভোগী বাংলাদেশসহ মানবাধিকারের পক্ষের দেশগুলোকে আরও বেশি সোচ্চার হতে হবে। কারণ রাখাইন এখনও অবরুদ্ধ এবং বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করছে আরো কয়েক হাজার রোহিঙ্গা। রাখাইনে অভিযান শুরুর পর এ পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আগে থেকে আছে আরো চার লাখ। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার মানবিক কারণে তাদের আশ্রয় দিয়েছে।

এ অবস্থায় বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশের তৎপরতার কারণে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। মিয়ানমারের রাষ্ট্রীয় কাউন্সেলর সু চির দফতরের মন্ত্রী ঢাকা সফর করে যাচাই সাপেক্ষে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছেন। এরপরই কূটনীতিক ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিদের রাখাইন পরিদর্শনে নেয়া হয়। আপাতদৃষ্টিতে তাদের কিছুটা ইতিবাচক ভূমিকা দেখা গেলেও এতে খুশি হওয়ার কারণ নেই। কেননা তারা সমস্যা সমাধানে প্রকৃতই আন্তরিক, নাকি বৈশ্বিক চাপ সামাল দিতে লোকদেখানো পদক্ষেপ নিচ্ছে, সময়ই তা বলে দেবে।

এর আগেও ১৯৯২ সালে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথ ঘোষণা দিয়েছিল মিয়ানমার। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। এবারও যেন তারা কোনো কৌশল করে পার পেয়ে যেতে না পারে তার জন্য আমাদের জোর কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে হবে। আমরা মনে করি রোহিঙ্গা সংকট সমাধান ও বাংলাদেশ থেকে তাদের ফেরত নেওয়ার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘ অন্তর্ভুক্ত হলে বিষয়টি আরো জোরালো হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৫ অক্টোবর ২০১৭/আলী নওশের

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়