ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

যে কোনো মূল্যে থামাতে হবে বেপরোয়া চালকদের

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৫০, ১৮ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যে কোনো মূল্যে থামাতে হবে বেপরোয়া চালকদের

বেপরোয়া চালকের প্রতিযোগিতায় অকালে ঝরে গেছে কলেজছাত্র রাজীব হোসেনর প্রাণ। গত ৩ এপ্রিল রাজধানীর কারওয়ান বাজার এলাকায় রাস্তায় দুই বাসের মাঝে চাপা পড়ে রাজীবের ডান হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। মাথায়ও আঘাত লাগে তার। দুই সপ্তাহ চিকিৎসাধীন থাকার পর রাজীব চলে গেছেন না ফেরার দেশে। ১৬ এপ্রিল রাতে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসকরা অনেক চেষ্টা করেও বাঁচাতে পারেননি রাজীবকে।
 
রাজধানীর মহাখালীর তিতুমীর কলেজের স্নাতক শ্রেণির ছাত্র রাজীব সেদিন বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের গেটে দাঁড়িয়ে ছিলেন। পেছন থেকে স্বজন নামের একটি বাস ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিক দিয়ে ঢুকে বিআরটিসির গা ঘেঁষে যেতে থাকে। এ সময় দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।

রাজীবের মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে তার সব স্বপ্নও নিভে গেছে। তৃতীয় শ্রেণির ছাত্র থাকাকালে মাকে হারান রাজীব। বাবাকে হারান অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়। এরপর  রাজধানীর মতিঝিলে এক খালার কাছে চলে আসেন। সেখানে থেকেই পড়ালেখার পাশাপাশি একটি কম্পিউটারের দোকানে খণ্ডকালীন কাজ করতেন রাজীব। সেই অর্থ দিয়ে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ুয়া দুই ভাইয়ের খরচ চালাতেন। রাজীবের আশা ছিল নিজ পায়ে দাঁড়ানোর পাশাপাশি ছোট দুটি ভাইকেও যোগ্য করে গড়ে তোলা। কিন্তু সব শেষ হয়ে গেছে বেপরোয়া চালকদের অসুস্থ প্রতিযোগিতায়।

শুধু রাজীব নয়, প্রায় প্রতিদিন হৃদয়হীন বাসচালকদের এমন অসুস্থ প্রতিযোগিতার শিকার হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজীবের হাত কাটা যাওয়ার পর এই রাজধানীতেই নিউমার্কেটের কাছে দুই বাসের চাপায় এক গৃহবধুর মেরুদণ্ড ভেঙ্গেছে। ফার্মগেটে এক ছাত্রী গুরুতর আঘাত পেয়েছে তার পায়ে। আর ১৭ এপ্রিল গোপালগঞ্জে হাত হারিয়েছে এক যুবক। বাসে থাকা ওই যুবকের হাত ছিড়ে নিয়ে যায় বেপরোয়া এক ট্রাক চালক। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রতিদিন সড়কে প্রাণ ঝরছে অনেক মানুষের। আহত বা পঙ্গু হয়ে যাচ্ছেন অনেকে।

সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, রাজীবের হাত বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর আদালতে এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে  রাজীবকে কেন এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। ওই রিট এখনো বিচারাধীন। রাজীবের মৃত্যু হলেও  মামলা চালিয়ে যাবার কথা বলেছেন রিটকারী আইনজীবী। এছাড়া রাজীবের জন্য চাকরির ব্যবস্থা করার কথাও বলেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আমরা আশা করব, হাইকোর্টে দ্রুত এই মামলার নিষ্পত্তি হবে এবং রাজীবের ছোট দুই ভাই ক্ষতিপূরণের সেই অর্থ পাবে। চাকরিসহ যেসব সুবিধা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল সংশ্লিষ্ট মহল যেন তা ভুলে না যান। রাজীবের অসহায় দুই ভাইয়ের পাশে দাঁড়াবেন তারা এমনটিই প্রত্যাশা আমাদের।

সড়কে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে যেসব নিয়মকানুন রয়েছে চালকরা তা যেন সঠিকভাবে মেনে চলেন সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যে কোনো মূল্যে থামাতে হবে বেপরোয়া চালকদের। রাজধানীসহ দেশের সর্বত্র সড়কগুলোতে বেপরোয়া চালকদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ও হাইওয়ে পুলিশকে আরো তৎপর হতে হবে। পরিবহন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এবং দুর্ঘটনা কমিয়ে নিরাপদ সড়ক গড়ে তুলতে ট্রাফিক আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ও নিশ্চিন্তকরণ জরুরী। চালকরা যেন নির্দিষ্ট গতিবেগের চেয়ে বেশি গতিতে গাড়ি চালাতে না পারেন এবং যথাযথভাবে ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে চলেন সে বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ এপ্রিল ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়