ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

মহান বিজয় দিবস

গড়ে তুলতে হবে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ

আলী নওশের || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১২, ১৬ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
গড়ে তুলতে হবে সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ

মহান বিজয় দিবস আজ । বাঙালি জাতির হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে আনন্দের ও গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে নয় মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ শেষে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাক হানাদার বাহিনী আত্মসমর্পণ করে। বহু ত্যাগ-তিতিক্ষার মাধ্যমে পূর্ব দিগন্তে উদিত হয় বিজয়ের লাল সূর্য। অভ্যুদয় ঘটে স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশের। অগণিত মানুষের আত্মত্যাগের ফসল আমাদের এই স্বাধীনতা।

আজ আমরা গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মহানায়ক অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যিনি কোটি কোটি মানুষকে স্বাধীনতার পক্ষে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। আমরা স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের এবং সেই নারীদের, যারা যুদ্ধকালে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন। স্মরণ করি ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধিকার আন্দোলনের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা আত্মাহুতি দিয়েছেন, বীরত্মের সঙ্গে লড়াই করেছেন, তাদেরও। স্মরণ করছি সেই সময়ের কোটি কোটি মানুষকে, যারা হানাদার বাহিনীর অত্যাচার-নিপীড়ন থেকে বাঁচতে ঘরবাড়ি ছেড়ে পরবাসী হয়েছিলেন। তারা বনে-জঙ্গলে রাত কাটিয়েছেন, নিজে না খেয়ে একজন মুক্তিযোদ্ধাকে খাওয়ানোর চেষ্টা করেছেন।

আমাদের এ বিজয় এমনি এমনি আসেনি। তার জন্য আমাদের অনেক মূল্য দিতে হয়েছে। অনেক রক্ত দিতে হয়েছে। অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে। বায়ান্নর একুশে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণ-আন্দোলন, সত্তরের নির্বাচন, একাত্তরের শুরুতে অসহযোগ আন্দোলনসহ অনেক আন্দোলন-সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, বহু আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের সেই মুক্তির ক্ষেত্র তৈরি হয়েছিল। যে পাকিস্তানি শোষকরা আমাদের পদানত করে রেখেছিল, তাদের সেই শৃঙ্খল ভাঙার কাজটি মোটেও কোনো সহজ কাজ ছিল না।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি বাহিনী গণহত্যায় নামলে নিরস্ত্র বাঙালি বসে থাকেনি, তারাও হাতে অস্ত্র তুলে নেয়। এক অসম যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে। অবশেষে এক সাগর রক্তের বিনিময়ে ৯ মাস যুদ্ধের পর চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। এ ক্ষেত্রে আমরা ঋণী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। এদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক অধিকার তথা স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে সফল নেতৃত্ব দেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কোটি কোটি মানুষকে তিনি স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে তুলেছিলেন। তাইতো বাঙালি জাতি যত দিন বেঁচে থাকবে, বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করবে,  মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গৌরব করবে, অহংকার করবে।

এ কথা সত্য, ৪৭ বছরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন অনেক। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, কৃষি, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে এগিয়েছে দেশ। মানবসম্পদ উন্নয়ন সূচকেও অনেক উন্নয়নশীল দেশের চেয়ে বেশি অগ্রগতি আমাদের। এ অগ্রগতি ধরে রেখে আমাদের আরো অগ্রসর হতে হবে। অর্থনৈতিকভাবে আমাদের আরও এগিয়ে যেতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত মূল্যবোধ রক্ষায় হতে হবে যত্নবান। তবেই বিজয় হয়ে উঠবে অর্থবহ। পাশাপাশি আমাদের সতর্ক থাকতে হবে স্বাধীনতা বিরোধীদের সম্পর্কে। কেননা, দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি এখনো তৎপর।

একটি জাতির শক্তির প্রধান উৎস ঐক্য। প্রায় সব ক্ষেত্রেই অগ্রগতির জন্য এই ঐক্যের প্রয়োজন। মহান বিজয় দিবসে আমাদের প্রত্যয় হোক সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য ধরে এগিয়ে যাওয়া। আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধভাবে এবং মুক্তযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিতে হবে। স্বাধীনতার বিরুদ্ধে এখনো যেসব ষড়যন্ত্র চলছে তার মূলোৎপাটন করতে হবে। অসাম্প্রদায়িক বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশকে ত্বরান্বিত করে সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হবে। এ বছরের বিজয় দিবসে এটিই হোক আমাদের দৃঢ় অঙ্গীকার।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ ডিসেম্বর ২০১৮/আলী নওশের/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়