ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

‘ঘ’ ইউনিটে অস্বাভাবিক ফল : ‘যাচাই বাছাই হবে’

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:১৬, ১৭ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘ঘ’ ইউনিটে অস্বাভাবিক ফল : ‘যাচাই বাছাই হবে’

আবু বকর ইয়ামিন : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এবারের ভর্তি পরীক্ষায় ইউনিটভিত্তিক ফলে ব্যাপক তারতম্য দেখা গেছে। এক ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় অকৃতকার্য ছাত্র অন্য ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান পেয়েছে। এ নিয়ে ক্যাম্পাসে সমালোচনার ঝড় বইছে।

এ বিষয়ে ‘ঘ’ ইউনিট পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেছেন, যাদের রেজাল্ট অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে তাদের যাচাই বাছাই করা হবে। ভিন্ন কিছু প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাবি ‘ঘ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। প্রকাশিত ফলে দেখা যায়, ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয় ৭০ হাজার ৪৪০ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ১৮ হাজার ৪৬৩ শিক্ষার্থী। পাসের হার ২৬ দশমিক ২১ শতাংশ।

ফল প্রকাশের পর পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে আলোচনায় আসে ‘ঘ’ ইউনিটে একাধিক শিক্ষার্থীর আস্বাভাবিক ফলের বিষয়টি। ‘ঘ' ইউনিটে মেধা তালিয়ায় ১০০ ক্রমের মধ্যে থাকা ৭০ জনের বেশি শিক্ষার্থী তাদের নিজ নিজ অনুষদের ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণই হতে পারেননি।

এই ইউনিটে প্রথম স্থান পাওয়া জাহিদ হাসান আকাশ তার নিজ অনুষদ ‘গ’ ইউনিটের পরীক্ষায় পাস করতে পারেননি। অন্যদিকে তাসনিম বিন আলম নামের একজন তার ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় ফেল করলেও ‘ঘ’ ইউনিট থেকে অস্বাভাবিক নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হন। 

গত ১৪ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত ‘গ’ ইউনিটের লিখিত পরীক্ষায় আকাশ মোট নম্বর পান ৩৪ দশমিক ৩২। এর মধ্যে বাংলায় পেয়েছিলেন ১০ দশমিক ৮, ইংরেজিতে ২ দশমিক ৪০, হিসাব বিজ্ঞানে ৫ দশমিক ২৮, ব্যবসায় নীতিতে ৬ দশমিক ৭২  বাংলায়  ১০ দশমিক ৮, ইংরেজিতে ২ দশমিক ৪০ এবং ফিন্যান্সে ৯ দশমিক ৮৪।

অথচ 'ঘ' ইউনিটের পরীক্ষায় আকাশ বাংলায় ৩০ এর মধ্যে ৩০, ইংরেজিতে ৩০ এর মধ্যে ২৭ দশমিক ৩০ পেয়েছেন। তিনি লিখিত পরীক্ষায় সব মিলিয়ে ১২০ এর মধ্যে ১১৪ দশমিক ৩০ পেয়ে প্রথম স্থান লাভ করেছেন।

অন্যদিকে তাসনিম ‘ঘ’ ইউনিটে ১২০ নম্বরের মধ্যে ১০৯ দশমিক ৫০ পেয়ে পেয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকার বিজ্ঞান শাখায় প্রথম স্থান অধিকার করেছেন। অথচ বিজ্ঞান শাখার এই শিক্ষার্থী তার নিজের অনুষদ ‘ক’ ইউনিটের পরীক্ষায় ১২০ নম্বরের মধ্যে ৪৩ দশমিক ৭৫ পেয়ে ফেল করেছিলেন।

এ বিষয়ে দ্বীনা সুলতানা নামের এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে লিখেছেন- ১২০ এর মধ্যে ১১৪ কিভাবে সম্ভব। এটি গত ২০ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে।  আমরা কি শুধু এসব দেখে যাবো? কিছুই করার নেই আমাদের?

হোসেন রুবেল তৌসিফ নামের আরেকজন উল্লেখ করেছেন- বাংলায় যে প্রশ্ন হয়েছে তাতে ৩০ এর মধ্যে ৩০ পাওয়া সম্ভব না। ইংরেজি সন্দেহজনক। সাধারণ জ্ঞানে প্রশ্নেই একটা ভুল ছিল। এছাড়া ৩/৪ টা প্রশ্ন এমন ছিল যে সবাই ভুল করবে। তবুও সে ২৫ টার মধ্যে ২৪টা কিভাবে শিওর করলো। আর আন্তর্জাতিকে কোনো বাপের বেটা নাই যে ২৪টা শিউর করবে। বাঘা বাঘা সাধারণ জ্ঞানের শিক্ষক দুই পার্ট মিলিয়ে ৪৫টা শিউর করতে পারেনি।

কেউ কেউ বলছেন, যে ছেলে নিজের ইউনিটে ইংরিজেতে পায় ২ দশমিক ৪০ সে কিভাবে ঘ ইউনিটে ২৭ দশমিক ৩০ পায়। বাংলায় কিভাবে ২৫ টাতে ২৫ টাই কনফার্ম করে৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখা দরকার।

অনেকে বিতর্কিত এ পরীক্ষা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন তারা।

এর আগে ১২ অক্টোবর পরীক্ষার দিনই এই ইউনিটের প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ওঠে। এই অভিযোগের মধ্যেই ফল প্রকাশ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে মেধাতালিকায় থাকা কিছু শিক্ষার্থীর দুই ইউনিটের ফলাফলের মধ্যে ব্যাপক পার্থক্য ফুটে ওঠে৷

‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষার ফলাফল যাচাই করে দেখা গেছে এই ইউনিটে সর্বোচ্চ মেধাতালিকায় থাকা একাধিক ভর্তিচ্ছু তাদের নিজের ইউনিটের পরীক্ষায় পাসই করতে পারেননি।

এ বিষয়ে ‘ঘ’ ইউনিট পরীক্ষার প্রধান সমন্বয়কারী সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সাদেকা হালিম বলেন, আমরা ফলাফল হয়ে গেলেই তার সার্টিফিকেট দিয়ে ভর্তি করে ফেলি না। যাদের রেজাল্ট অস্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে তাদের যাচাই বাছাই করা হবে। ভিন্ন কিছু প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘জালিয়াতি চক্রের কেউ ছাড় পাবে না। যে যখন যেই অবস্থায় চিহ্নিত হবে, তখনই তার ভর্তি বাতিলসহ তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ অক্টোবর ২০১৮/ইয়ামিন/এনএ 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়