ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘যুবতী রাধে’ তুমি কার?

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩৮, ২০ এপ্রিল ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘যুবতী রাধে’ তুমি কার?

সুমি মির্জা, মার্জিয়া তুরিন

আমিনুল ইসলাম শান্ত : ‘বাংলাদেশি আইডল’খ্যাত সংগীতশিল্পী মার্জিয়া তুরিন। ‘সরলপুর’ নামে এ গায়িকার একটি ব্যান্ড দল রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে এক বাউলের লেখা ‘যুবতী রাধে’ শিরোনামে একটি গান গায় ব্যান্ড দলটি। গানটি বিভিন্ন টেলিভিশন অনুষ্ঠানেও গেয়েছেন তারা। এরপর সংগীতপ্রেমীদের মনে গানটি জায়গা করে নেয়।

সম্প্রতি সংগীতশিল্পী সুমি মির্জা এই গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন। গানটি সুমি মির্জার ইউটিউব চ্যানেল প্রকাশ করা হয়েছে। সুমি গানটি ইউটিউবে প্রকাশ করার পরই সরলপুর ব্যান্ড অভিযোগ করেছে, তাদের অনুমতি ছাড়া গানটি গেয়েছেন সুমি মির্জা। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ সংগীতাঙ্গনেও প্রশ্ন উঠেছে ‘যুবতী রাধে’ গানটির স্বত্ব আসলে কার?   

মার্জিয়া তুরিন বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। এ প্রসঙ্গে রাইজিংবিডির সঙ্গে  তুরিনের কথা হয়। তুরিন বলেন, ‘‘২০০৮ সালে বকশিগঞ্জের এক সাধুর কাছ থেকে গানটি পাই। তখন তিনি খুবই বৃদ্ধ ছিলেন, তার সঙ্গে একজন সাধন সঙ্গীনীও ছিল। এই সাধুর কাছে পুরো গানটি পাইনি, ৩০ ভাগ পেয়েছিলাম। তারপর আমাদের ব্যান্ড দলের সদস্য আল আমিন ভাই এবং তপন বাকি সত্তর ভাগ গান রচনা করেন। পরে গানটির কম্পোজিশন করেন তপন অর্থাৎ আমার স্বামী। এরপর আমরা গানটি ফোক ও রক ভার্সনে গাওয়ার চেষ্টা করি। ২০১২ সালে গানটি আমরা রেকর্ড করি। আমাদের ব্যান্ড দলের কোনো অ্যালবাম প্রকাশিত হয়নি। এ কারণে গানটি আর অ্যালবাম আকারে প্রকাশ করিনি। কিন্তু তারপরও সরলপুরের গান হিসেবে যেভাবে গানটি মানুষের কাছে পৌঁছেছে তাতে আমরা খুব সৌভাগ্যবান। সবাই জানেন এটি সরলপুর ব্যান্ডের গান। কিন্তু আমি জানি না, সুমি কীভাবে এ তথ্য এড়িয়ে গিয়ে বলল, ‘এটি সংগৃহীত’। গানটির ৩০ ভাগ সংগৃহীত কিন্তু বাকি ৭০ ভাগকে সে কী বলবে তা আমার জানা নাই।’’

তিনি আরো বলেন, ‘যুবতী রাধে গানটি একটি কীর্তন গান। গাওয়ার সময় আমরাও তাই রেখেছিলাম, কিন্তু সুমি গানটি রোমান্টিক বেইজে গেয়েছে। এটি রাধা-কৃষ্ণের প্রেমলীলা নিয়ে একটি কীর্তন। আমি মনে করি, এই গানটি গাওয়ার আগে ও ইউটিউবে প্রকাশ করার আগে সুমির অবশ্যই আমাদের অনুমতি নেয়া দরকার ছিল। কিন্তু সেটা সে করে নাই। সুমির মাধ্যমে যেভাবে মানুষের কাছে গানটি তার বলে প্রচারিত হচ্ছে সেটা আসলে ভুল তথ্য। আসলে এ গানটি তার নয়। এটি আমাদের অনেক সাধনার অনেক কষ্টের ফসল। অনেক কষ্ট করে আমরা এই গানটি বের করেছি, অনেক শ্রম ব্যয় করেছি। এই গানটি আমাদের অনেক বড় সম্পদ। সুমিকে বলেছি, তার গাওয়া গানটি ইউটিউব থেকে সরিয়ে নিতে। কিন্তু না মুছে সে এখন ইউটিউবে সরলপুর ব্যান্ডের নাম উল্লেখ করেছে। এখন আমাদের ব্যান্ডের সদস্যরা চাচ্ছেন না তার গাওয়া এই গানটি ইউটিউবে থাকুক। সুমি যদি গানটি সরিয়ে না নেয় তবে আমরা আইনি পদক্ষেপ নেব।’

এ বিষয়ে কথা বলতে রাইজিংবিডি সংগীতশিল্পী সুমি মির্জার সঙ্গে যোগাযোগ করে। সুমি মির্জা বলেন, “আমি সরলপুর ব্যান্ডের গাওয়া ‘যুবতী রাধে’ গানটি শোনার পর অনুপ্রাণিত হয়ে ‘রাধে’ শিরোনামে একই গানটি গেয়েছি। কিন্তু গানটির মিউজিক ও সুর নতুন করে করা হয়েছে। আমার গাওয়া এই গানটি ইউটিউবে প্রকাশ করার পর সরলপুর ব্যান্ড আপত্তি তোলে। তারপর ইউটিউবে আমি সরলপুর ব্যান্ডের ক্রেডিট দিয়েছি। কিন্তু তারপরও তারা বিভিন্ন মানুষ দিয়ে আমাকে ফোন করাচ্ছে বিভিন্ন রকম হুমকি দিচ্ছে। এই গানটি এর আগেও যাযাবর ব্যান্ড গেয়েছে, কই সেখানে তো কোনো প্রশ্ন তোলা হয়নি?’

সুমি আরো বলেন, ‘আসলে এই গানটি একজন বাউলের গান। সেই বাউল এখন জীবিত নেই। জীবিত থাকলে আমি তার সঙ্গে কথা বলে নিতাম। সরলপুর ব্যান্ড বলছে, তারা ৩০ ভাগ গানের কথা বাউলের কাছ থেকে সংগ্রহ করেছে এবং বাকি ৭০ ভাগ গানের কথা সরলপুর ব্যান্ডের লেখা। এখন আমার কথা হচ্ছে, পুরো গান থেকে কোন অংশ তাদের লেখা আর কোন অংশ বাউলের লেখা সেটা তারা পৃথক করে দিক। তা হলে আমি বাউলের ৩০ ভাগ গানের সঙ্গে নতুন করে ৭০ ভাগ কোনো বড় গীতিকারকে দিয়ে রচনা করিয়ে নেব এবং নতুন করে গানটি গাইব। এসব বাউল গান আমাদের সংস্কৃতির অংশ। এগুলো আমাদের দেশের সম্পদ। এটা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি না।’  

তুরিনের সঙ্গে সুমির ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্ব নেই। গানটি প্রথম গেয়েছে সরলপুর ব্যান্ড কিন্তু গানটির কথা কার তা উল্লেখ ছিল না। ফলে গীতিকারের ক্রেডিট প্রথমে দিতে পারেননি সুমি। বিষয়টি সরলপুর ব্যান্ড সুমিকে জানালে সংশোধন করে দেন এই শিল্পী। বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ির কিছু নেই জানিয়ে সুমি বলেন, আমি এর সুষ্ঠু সমাধান চাই।    



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ এপ্রিল ২০১৮/শান্ত/মারুফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়