ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

‘শিল্পী সমিতির বিপরীতে অন্য সংগঠন টিকিয়ে রাখা কঠিন’

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ৬ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘শিল্পী সমিতির বিপরীতে অন্য সংগঠন টিকিয়ে রাখা কঠিন’

রাহাত সাইফুল : চলচ্চিত্র শিল্পীদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি। গত বছরের ৫ মে, ২০১৭-১৮ কমিটির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যেমন আনন্দ উল্লাস করেছেন শিল্পীরা তেমনি সমালোচনা ও দ্বন্দ্বেরও জন্ম দিয়েছেন।

নির্বাচনের আগে মিশা-জায়েদ প্যানেল ২১টি ইশতেহার ঘোষণা করেছিল। ২১টি ইশতেহার সামনে নিয়েই সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের চেয়ারে বসেন মিশা সওদাগর, জায়েদ খান। গতকাল নতুন এ কমিটি এক বছর পূর্ণ করল। দুই বছর মেয়াদী এই কমিটি গত এক বছরে কতটা সফল আর ব্যর্থ হয়েছে এসব বিষয়ে শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খানের সঙ্গে কথা বলেন রাইজিংবিডির এই প্রতিবেদক। এ আলাপচারিতার বিশেষ অংশ তুলে ধরা হলো-

রাইজিংবিডি : নির্বাচনের আগে আপনারা ২১টি ইশতেহার ঘোষণা করেছিলেন। গত এক বছরে তা কতটা পূরণ করতে পেরেছেন?
জায়েদ খান :
এরই মধ্যে আমরা ২০টি ইশতেহার পূরণ করেছি। একটি বাকি আছে। অসহায় শিল্পীদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করার কথা বলেছিলাম। একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই নিশ্চিত করতে অসচ্ছল শিল্পীদের জন্য বাসস্থানের ব্যবস্থা করতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করছি, খুব শিগগির এটাও পূরণ করতে পারব।

রাইজিংবিডি : পূরণ হওয়া ২০টি ইশতেহারের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য ইশতেহার কী কী?
জায়েদ খান :
যৌথ প্রযোজনার নামে চলচ্চিত্রে প্রতারণা বন্ধ করেছি। যৌথ প্রতারণার বিরুদ্ধে আমরা সামনে থেকে আন্দোলন করেছি। এরপর সঠিক নীতিমালা করা হয়েছে। যৌথ প্রযোজনার সিনেমায় প্রিভিউ কমিটিতে আগে শিল্পী সমিতির প্রতিনিধি ছিল না, এখন শিল্পী সমিতির সভাপতি এই কমিটির সদস্য। এটা আমাদের অর্জন। বিদেশি শিল্পীদের ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া কাজ করা বন্ধ করেছি।

আমরা বলেছিলাম, সব সিনিয়র শিল্পীদের নিয়ে একটা উপদেষ্টা কমিটি গঠন করব। সিনিয়র শিল্পীদের নিয়েও একটা উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছি। তাদের পরামর্শে কাজ করে যাচ্ছি। এছাড়া প্রজন্মের তারকা শিল্পীরাও এখন চলচ্চিত্রের খোঁজ-খবর নিয়মিত রাখেন। তারা এফডিসিতে আবার আগের মতো আনাগোনা করেন।

আমরা বলেছিলাম, শিল্পী সমিতিকে কঠামোগতভাবে ঢেলে সাজাব, আমরা তা করেছি। সবাইকে নিয়ে ইফতারের আয়োজন করেছি। মেঘবাড়িতে সিনিয়র-জুনিয়র শিল্পীদের নিয়ে পিকনিক করেছি। ঈদ বোনাস দিয়েছি ৭১ জনকে। যার মধ্যে কিছু ব্যক্তিগত অনুদানও ছিল। পূজার টাকাও দিয়েছি। শিল্পী সমিতির ফান্ড তৈরি করেছি। ফান্ড গঠন করতে ইতোমধ্যে একটি কনসার্ট করেছি। এ থেকে আমাদের ফান্ডে কিছু টাকা জমেছে। শিল্পীদের ডিজিটাল কার্ডের ব্যবস্থা করেছি। এর মধ্যে অনেকেই কার্ড নিয়েছেন।

শিল্পী সমিতির সদস্যপদের আবেদনের চাঁদা কমিয়ে একেবারেই সহনশীল পর্যায়ে এনেছি। আগে এটি ছিল ২৫ হাজার, এখন তা ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে। শিল্পীদের স্বাস্থ্য সেবার জন্য একটি হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এখানে আমাদের শিল্পীরা ৫০% ছাড়ে চিকিৎসা নিতে পারবেন।

রাইজিংবিডি : শিল্পীরা হাসপাতালে ৫০% ছাড় আদৌ পাচ্ছেন কিনা এ বিষয়ে জানতে চাই।
জায়েদ খান :
হ্যাঁ, শিল্পীরা এ সুবিধা পাচ্ছেন তো। এরই মধ্যে জ্যাকি আলমগীর, ফরহাদসহ কয়েকজন সেখান থেকে ৫০% ছাড়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। মজার বিষয় হচ্ছে, প্রথম কয়েকদিন ফ্রি চিকিৎসা দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

রাইজিংবিডি : প্রায় ২৭০ জন সদস্যর সদস্যপদ শিল্পী সমিতি থেকে বাদ দেয়া হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। এ বিষয় জানতে চাচ্ছি।
জায়েদ খান :
আমরা শিল্পীদের যাছাই-বাছাই করছি। এটা করা খুব দরকার ছিল। অনেকেই বলে আসছিল যারা শিল্পী নয় তারাও শিল্পী সমিতির সদস্য। আমরা সিনিয়র শিল্পীদের মতামত নিয়ে ২৮০জন সদস্যকে সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকি। এর মধ্যে অনেকেই উপস্থিত হননি। এর মধ্যে কিছু সহযোগী সদস্য করেছি। আবার কিছু সদস্যপদ স্থগিত করেছি। যারা উপস্থিত হননি তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা নিব। এখানে আমরা কাউকে বাদ দিইনি। আমরা যাচাই-বাছাই করতে গিয়ে দেখলাম শিল্পী সিমিতিতে এমন কিছু শিল্পী আছে যারা শিল্পী সমিতির জন্য অসম্মানজনক। মাছের ব্যবসা করে, ধোলাই খালে পার্টসের ব্যবসা করে, দর্জি এমন অনেকে সমিতির সদস্য হয়ে আছেন! এদের কেউ কেউ দুই একটা সিনেমায় অভিনয় করেছেন কিন্তু অনেকে কখনো অভিনয়ই করেননি। তবু রহস্যজনকভাবে তারা সদস্যপদ পেয়েছেন। ২০-২৫জন পেয়েছি যারা সিনেমায় অভিনয় করেছে কিন্তু কোনো সিনেমাই মুক্তি পায়নি। আসলে যারা শিল্পী তাদের নিয়ে সমিতি সাজাতে চাই। ভোটার বাড়ানোর জন্য নয়।

রাইজিংবিডি : আপনাদের নতুন কমিটির এক বছর পূর্ণ হয়েছে। সমিতির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) কবে নাগাদ করবেন?
জায়েদ খান :
রোজা চলে আসছে। রোজায় একটি ইফতার পার্টি করব। আর ঈদের পর এজিএম করব।

রাইজিংবিডি : শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে। এতে করে শিল্পীদের মধ্যে বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। ‘উত্তপ্ত’ শিল্পী সমিতি এক বছরে কতটা শান্ত হয়েছে?
জায়েদ খান :
অনেকের সঙ্গেই মনোমালিন্যতা দূর হয়েছে। এখন প্রায় সবাই সমিতির চাঁদা দিচ্ছেন। সবাইকে বুঝতে হবে শিল্পীদের মূল সংগঠন একটাই। সেটা হচ্ছে শিল্পী সমিতি। শিল্পী সমিতির বিপরীতে অন্য সংগঠন টিকিয়ে রাখা কঠিন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৬ মে ২০১৮/রাহাত/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়