ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

আমি হেড বাবুর্চি আর ববিতা সহকারী : সুচন্দা

আমিনুল ইসলাম শান্ত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৮, ১৭ জুন ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
আমি হেড বাবুর্চি আর ববিতা সহকারী : সুচন্দা

কোহিনূর আক্তার সুচন্দা

ঈদে কোনো না কোনো একটি পদের রান্না আমাকে করতে হতো। হয় পোলাও, না হলে মিষ্টান্ন জাতীয় কিছু, না হলে গরুর রেজালা কিংবা গরুর মাংস অথবা মুরগির মাংস। মানে রান্নাটা ভালো হোক কিংবা খারাপ সেটা বড় বিষয় নয়, কিন্তু কোনো একটি পদ আমাকে নিজ হাতে রান্না করতেই হতো।

ছোটবেলায় ঈদে রান্না নিয়ে একটি মজার ঘটনা বলি। আমার বয়স তখন ৭ বা ৮ বছর। বাবার চাকরির সুবাদে আমরা তখন বাগেরহাট থাকি। আমাদের বাসায় দাদা-দাদি, আমার ছোট ফুফি বেড়াতে এসেছেন। এ সময় আমার মা আমাকে বললেন, ‘তুমি মুরগির মাংস রান্না করো।’ মাংসে কতটুকু মসলা বা কী দিতে হবে মা দেখিয়ে দিলেন। কিন্তু রান্নাটা কীভাবে করব? এ নিয়ে ভীষণ দ্বিধায় পড়ে গেলাম। কারণ এটাই আমার প্রথম মুরগির মাংস রান্না। মাকে জিজ্ঞেস করলাম, কীভাবে রান্না করব? মা বিস্তারিত বুঝিয়ে দিলেন। যেভাবে রেসিপিটা বুঝিয়ে দিলেন আমি সেভাবেই সবকিছু রেডি করে রান্না শুরু করলাম। এদিকে চিন্তায় ঘেমে যাচ্ছি। ভয় হচ্ছিল যদি রান্না ভালো না হয় তবে বকা খেতে হবে। যাই হোক, রান্না শুরু করলাম। ভেতরে ভেতরে আল্লাহকে ডাকছি আর বলছি, আল্লাহ রান্নাটা যেন ভালো হয়। রান্নাটা যখন প্রায় শেষ তখন লবণ দেখলাম ঠিকই আছে।

রান্নার আগেই মা বলেছিলেন, মুরগির মাংস যেন পাতলা ঝোল ঝোল করে রান্না করি। মাংসের সঙ্গে আলুও দিয়েছিলাম। কিন্তু মাংসের ঝোল শুকিয়ে গিয়েছিল। যে কারণে চিন্তায় পড়ে গেলাম। এখন কী করি? মহাবিপদ! শেষ পর্যন্ত উপায় না পেয়ে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে মাকে জানালাম। মা বললেন, আলাদা করে পানি গরম করো। তারপর গরম পানি পরিমাণ মতো মাংসে দাও। নাড়াচাড়া দিয়ে কিছুক্ষণ চুলায় রাখো। এরপর যখন দেখবে বলক উঠেছে, তখন তুমি যতটুকু ঝোল রাখতে চাও ততটুকু ঝোলসহ তরকারী নামিয়ে ফেলবে। মায়ের নির্দেশনা অনুযায়ী রান্না শেষ করি। এই ছিল আমার প্রথম রান্নার অভিজ্ঞতা।

এরপর দাদা-দাদিসহ সবাই আমার রান্না করা ওই মুরগির মাংস খেয়ে খুব প্রশংসা করেছিলেন। দাদা তো আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। পরে দাদা দেশের বাড়ি যশোরে এসে আমাদের সমস্ত আত্মীয়-স্বজনের কাছে আমার রান্নার প্রশংসা করেন। দাদা আমার ডাকনাম রেখেছিলেন ‘চাঁদনী’। আমার নাম ধরে দাদা বলেছিলেন, চাঁদনী আমার বংশের বড় নাতনী। তার হাতের রান্না করা মুরগির মাংস খেয়ে এসেছি। তার রান্না যে কত মজার তা বলে বুঝানো যাবে না। পরবর্তী সময়ে আমরা যখন যশোরে চলে আসি তখন আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে জোর করে ধরে বলে, তুমি নাকি দারুণ মুরগির মাংস রান্না করতে পারো? আমাদের তুমি এবার মুরগির মাংস রান্না করে খাওয়াবে।

আমাদের পরিবার ও বংশে এখনো আমার রান্নার খ্যাতি আছি। এখনো দেখা যায়, ববিতা যুক্তরাষ্ট্রে রয়েছে। সেখানে কোনো একটি পদ রান্না করবে তখন আমাকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করে, বুবু এটা কীভাবে রান্না করব? তারপর ফোনে আমি বলে দেই। আমার রান্না শুধু পরিবারের লোকজনই না চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকেই খেয়েছেন। সবাই বলে, আমার রান্না নাকি খুব সুস্বাদু হয়। আমার ভাইয়েরা তো বিদেশে থাকে। ওরা যদি দেশে থাকে তবে শীতে ভাই-বোনেরা মিলে ববিতার বাসার ছাদে খাওয়ার আয়োজন করি। এসময় চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকেই উপস্থিত থাকেন। এর আগে আলমগীর, রুনা লায়লা, ফারুক, সোহেল রানা, শাবনূরসহ সবাই মিলে এ আয়োজন করেছি। এ ধরণের আয়োজন করলে দেখা যায়, আমি তখন হেড বাবুর্চি আর ববিতা আমার সহকারী হিসেবে রান্নার সব কিছু এগিয়ে দেয়। তারপর ছাদে বড় আকারের টেবিল পেতে কড়াই, হাড়ি টেবিলের উপর রেখে সবাই মিলে একসঙ্গে খাই। আমরা এভাবে সবাই খুব মজা করি।

শ্রুতিলিখন : আমিনুল ইসলাম শান্ত



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ জুন ২০১৮/শান্ত/তারা        

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়