ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

উৎসবের নাম ‘বাউত’

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫০, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
উৎসবের নাম ‘বাউত’

পাবনা প্রতিনিধি : বাউত উৎসব। নামকরণটি পাবনার আঞ্চলিক। আসলে বড় বিলের স্বল্প পানিতে মাছ শিকারের খেলা।পাবনার চলন বিলে এমন উৎসব ফি বছরের।

এবারও ভাঙ্গুড়ায় রুহুল বিলে এই উৎসবে গতকাল হাজারো মানুষের ঢল নেমেছিল।

দেখা যায়, ভোরের আলো ফুটতে না ফুটতেই বিল অভিমুখে মানুষের ঢল। কারো কাঁধে পলো, আবার কারো হাতে ঠেলা জাল, বাদাই জাল সহ মাছ ধরার নানান উপকরণ। নছিমন-করিমন, মোটর সাইকেল, বাই সাইকেলে দুর-দুরান্ত থেকে মানুষ জড়ো হচ্ছে এক স্থানে। সে এক মনকাড়া দৃশ্য।

শিশু থেকে বৃদ্ধ, সববয়সী মানুষের উপস্থিতিতে বিলপাড়ে তৈরি হয় উৎসবমুখর পরিবেশ। এরপর দল বেঁধে বিলের পানিতে নেমে মাছ শিকারের আনন্দে মেতে ওঠেন তারা।

 


প্রতি বছরের অগ্রহায়ণ মাসের শেষের দিকে সপ্তাহে দুইদিন চলে এই মাছ শিকার। পাবনার বিভিন্ন উপজেলা ছাড়াও আশপাশের জেলার মানুষও যোগ দেন বাউত উৎসবে। শুধু রুহুল বিলেই নয়, পাবনার খলিশাগাড়ি বিল, আফরার বিল, ডিকশীর বিল, চলনবিলসহ বিভিন্ন বিল ও জলাশয়ে এই মৌসুমে দল বেঁধে চলে মাছ শিকারের এই মহোৎসব।

পলো ও ধর্মজাল নিয়ে মাছ শিকারে এসেছিলেন চাটমোহর উপজেলার পার্শ্বডাঙ্গা গ্রামের হাকিম উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, আটঘরিয়া উপজেলার উত্তরচক গ্রামের আব্দুল আজিজ, রফিকুল ইসলাম। তারা বললেন, অনেকটা শখের বসে বাউত উৎসবে মাছ ধরতে আসি। মাছ পাওয়া, না পাওয়া নিয়ে আমাদের আফসোস নেই। সবাই মিলে মাছ শিকারের আনন্দই যে আলাদা।

দিন দিন জলাশয় ও বিলের আয়তন কমে যাওয়ায় কমে গেছে মাছ, ভাটা পড়েছে উৎসবের রঙে। মাছ শিকারে আসা ফরিদপুর উপজেলার বনওয়ারীনগর গ্রামের আবুল কাশেম, জনাব আলী জানান, চলনবিলে দেশী মাছ অনেক কমে গেছে। আগে প্রচুর মাছ মিলতো। শোল, গজার, বোয়াল, কাতলসহ অনেক রকম মাছ পাওয়া যেত। এখন তার অর্ধেকই পাওয়া যায়না। তাদের অভিযোগ, প্রভাবশালীদের দখলে চলে যাচ্ছে মাছের অভয়াশ্রম। বিল-জলাশয় খনন করে মাছের অভয়াশ্রম বাড়ানো গেলে মাছের উৎপাদন বাড়বে।

 


এদিকে, গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য হিসেবে বাউত উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে নানা উদ্যোগ গ্রহণের কথা জানালেন উপজেলা প্রশাসন ও মৎস বিভাগ। ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো: আরিফুজ্জামান বলেন, ‘গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অংশ এই বাউত উৎসব। এটাকে টিকিয়ে রাখতে উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিল, জলাশয় খনন করে পরিধি বাড়ানোর চেষ্টা করা হবে।’

ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস কর্মকর্তা আব্দুল মতীন বলেন, ‘যেসব জলাশয় অবৈধ দখলে রয়েছে সেগুলো উদ্ধার করা হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে জলাশয় খনন করে মাছের উৎপাদন বাড়াতে সরকার কাজ করছে। আমরাও বর্ষা মৌসুমে বিলে মাছের পোনা অবমুক্ত করি। মাছ ধরা উৎসবকে ধরে রাখতে কাজ করছে মৎস বিভাগ।’

 

 

রাইজিংবিডি/পাবনা/১৩ ডিসেম্বর ২০১৭/শাহীন রহমান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়