ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

বুক রিভিউ

রিনির হাত দেখার পর

সঞ্জয় সরকার || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রিনির হাত দেখার পর

সঞ্জয় সরকার : ইভান অনিরুদ্ধ একজন তরুণ গল্পকার। লিখছেন বেশ আগে থেকেই। কিন্তু এতদিন তার প্রকাশ সীমাবদ্ধ ছিল পত্র-পত্রিকার সাহিত্য পাতা ও লিটল ম্যাগাজিনে। এবার অমর একুশে গ্রন্থমেলায় তিনি তার প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত বেশকিছু ছোট গল্প মলাটবন্দি  করেছেন। তার ষোলটি গল্প নিয়ে প্রকাশিত সংকলনটির নাম ‘রিনির হাত দেখার পর’।

পাঁচ ফর্মায় অফসেট কাগজে মুদ্রিত বইটি প্রকাশ করেছে প্রতিভা প্রকাশ। প্রচ্ছদ এঁকেছেন রাজিব রায়। আর ভূমিকা লিখেছেন কথাসাহিত্যিক জাকির তালুকদার।

ইভানের গল্পের নানা চরিত্রগুলোর কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন-‘মতিন সাহেব, হাসান, বদরুল, চন্দ্রানি ও রিনিকে মনে হয় অনেক দিনের চেনা। আর সবিস্ময়ে এটাও আবিষ্কার করি যে-আমরাই তাহারা! তাহারাই আমরা!’

বইয়ের শুরুর গল্পটির শিরোনাম ‘মতিন সাহেবের ইলিশ খাওয়া’। গল্পের বিষয়-একজন অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি স্কুল শিক্ষকের সাংসারিক জীবনের নানা টানাপোড়েন। পয়লা বৈশাখের নব্য সংস্কৃতি ‘পান্তা-ইলিশ খাওয়া’কেও সরল গদ্যে ব্যাঙ্গ করেছেন গল্পকার। একই ধাঁচের আর দু’টি গল্প হচ্ছে-‘কানের দুল’ ও ‘স্বপ্ন থেকে দুঃস্বপ্ন’। নিম্ন  মধ্যবিত্ত ও দরিদ্র পরিবারের সাংসারিক টানাপোড়েনের চিত্র ফুটিয়ে তুলতে অতি দক্ষতায় তুলি চালিয়েছেন ইভান। গ্রামীণ জীবনের নানা কুসংস্কার ও এর পরিণতির চিত্র তুলে ধরেছেন ‘পরী বুবু’ গল্পের ‘পরী’ চরিত্রের মাধ্যমে। ‘বাদলের জন্য কষ্ট’ গল্পে ওঠে এসেছে অকালে মারা যাওয়া স্বামীর স্মৃতিকে আগলে রেখে এতিম সন্তানকে নিয়ে এক অসহায় নারীর বেঁচে থাকার দুঃসহ যন্ত্রণার চিত্র। ‘তিথি’ নামের ওই নারী চরিত্রের মধ্যে পাঠক অসংখ্য বাঙালি নারীর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাবেন। ‘পা’ এবং ‘প্রতিশোধ’ গল্প দু’টি ভিন্ন ধাচের। তবে কোনোটাই সমাজচিত্র বহির্ভূত নয়। রাজনৈতিক অপসংস্কৃতির প্রভাবে সমাজে কত কিছুর উলট-পালট ঘটে-তার বাস্তব উদাহরণ মিলবে এ দু’টি গদ্যে। মুক্তিযুদ্ধের খণ্ডচিত্র তুলে ধরেছেন ‘ক্ষত’ গল্পে। এ গল্পের ‘রাহেলা’ চরিত্রের মধ্যে পাওয়া যাবে একাত্তরে নির্যাতিতা হাজারও রাহেলার প্রতিচ্ছবি। তেমনি ইদ্রিস মেম্বারের লুলুপ চরিত্রটির বর্ণনা পড়তে পড়তে অনেকে ফিরে যাবেন একাত্তরের দিনগুলিতে। গল্পকার হিসেবে ইভান কতটা পাকাপোক্ত-তা বোঝা যাবে তার ‘জলজট’ গল্পটি পড়লেই। সাধারণ মানুষের কষ্ট লাঘবে আমাদের নীতি নির্ধারকরা মাঝে মাঝে কতটা উদাসীনতার পরিচয় দেন-ইভান তার চমৎকার এক ব্যাঙ্গচিত্র এঁকেছেন গদ্যশৈলীতে। ইভানের বাকি গল্পগুলো মূলত প্রেমের। কিন্তু প্রতিটি গল্পে শব্দ-শিল্পের ছোঁয়া আছে। আছে মফস্বল জীবনের নানা উপাদান-অনুষঙ্গের ছায়াচিত্র। গল্পের চরিত্র হিসেবে নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দরিদ্র ও অতি দরিদ্র জীবনকে বেছে নিয়েছেন গল্পকার।

প্রয়াত কথা সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের গল্প বলার একটি নিজস্ব স্টাইল ছিল। প্রতিটি গল্পকে রহস্যময় করে তুলতেন তিনি। তার কিছুটা প্রভাব পড়েছে ইভান অনিরুদ্ধ’র ওপর। হুমায়ূন আহমেদের গল্প শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত যেমন এক টানে পড়ে ফেলা যায়-তেমনি ইভানের গল্প পাঠেও কোনো ক্লান্তি বা বিরক্তি আসে না। গল্পই পাঠককে শেষ স্তবক পর্যন্ত নিয়ে যায়। কাজেই বলা যায়-‘রিনির হাত দেখার পর’ শিরোনামে প্রকাশিত ইভানের এ গল্প সংকলনটি নিশ্চয়ই পাঠকপ্রিয় হবে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়