ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

কানাডায় মডেলিং ছেড়ে দেশে এসে...

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:৩১, ২০ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
কানাডায় মডেলিং ছেড়ে দেশে এসে...

আরিফ সাওন : তের বছর কানাডায় থাকার পর ২০১৩ সালে দেশে ফেরেন সামিয়া ইসলাম। তার বিশ্বাস সেখানে থাকলে হয়তো এতোদিনে হলিউড সিনেমায় দেখা যেত তাকে।

কানাডায় মডেলিং করে বেশ খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। সেখানকার সিনেমায়ও অভিনয় করেছেন তিনি। নৃত্যেও বেশ দখল রয়েছে তার। হলিউডের আইফা ওয়ার্ডে ড্যান্স করেছেন।

এক পর্যায়ে এসে হঠাৎ সিদ্ধান্ত নিলেন দেশে ফিরবেন। প্রথমত বাবার জন্য, দ্বিতীয়ত দেশের জন্য কিছু করবেন। ফিরে এলেন, সেখানকার বর্ণাঢ্য জীবন, অভিনয়, মডেলিং ও নিজের ব্যবসাসহ সব ছেড়ে।

সামিয়া বলেন, ‘শুধু চেহারা থাকলে কানাডায় অভিনয় বা মডেলিং করা যায় না। ট্যালেন্ট লাগে। তবে বাংলাদেশে তার ব্যতিক্রম।’ তিনি জানান, এ কারণেই তিনি এখানে এসে আর মডেলিং বা অভিনয়ের সঙ্গে জড়াননি।

সুদূর কানাডায় সব ছেড়ে ছেড়ে দেশে এসে ব্যবসা করছেন সামিয়া। থ্রি সিক্সটি এন্টারটেইনমেন্ট লিমিটেড, ম্যাট হাউস সল্যুশন্স, ফেমাস ফাউন্টেন ও অ্যাড ফ্যাক্টরি নামের প্রতিষ্ঠানের স্বত্তাধিকারী তিনি। তবে ব্যবসায়ী পরিচয়ের পাশাপাশি এখন তিনি ‘এনিমেল লাভার’ ও ‘স্যোশাল ওয়ার্কার’ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। কানাডায় থাকতেও এনিমেলের প্রতি তার টান ছিলো।

এর আগে ২০০৮ সালে একবার দেশে এসে সামিয়া একটি সিনেমা নির্মাণ করেন। ‘পাথান’ নামের সিনেমাটি এখন মুক্তির অপেক্ষায়। এটার ডিরেক্টর ও স্ক্রিপ্ট রাইটার আশিষ খোন্দকার। তখনও সামিয়া কানাডায় মডেলিং শুরু করেননি। এই সিনেমার পর তার ইচেছ হয় অভিনয় শেখার। তারপর কানাডা গিয়ে শুরু হয় শেখা।

সামিয়ার বাবা বিশিষ্ট ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম। মা ড. খালেদা বেগম। দুই ভাইও ব্যবসায়ী। সামিয়ার জন্ম ১৯৮১ সালের ২৬ মার্চ। তার চাচা মো. নূরুল ইসলাম বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ছিলেন। ১৯৭৬ সালের ১৩ জুলাই থেকে ১৯৮৭ সালের ১২ এপ্রিল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সময় দায়িত্ব পালন করেন। আরেক চাচা মতিউল ইসলাম ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট ফাইন্যান্স কোম্পানি লি.(আইআইডিএফসি)- এর চেয়ারম্যান।

সামিয়া ও তার বাবার মত এনিমেল লাভার মতিউল ইসলামও। বনেদি পরিবারের হলেও সামিয়ার জীবনযাপন একেবারেই সাদাসিধে।

দেশে ফেরা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘বাবার বেশ বয়স হয়েছে। তাই তার জন্য দেশে ফেরাটা খুব জরুরি ছিলো। এছাড়া ভাবলাম দেশে গেলে অন্তত দেশের জন্য কিছু করতে পারবো।’



গাছের প্রতি তার রয়েছে বিশেষ প্রেম। ভাবছেন আগামীতে গাছই হবে তার বিজ্ঞাপনী প্রতিষ্ঠানের প্রধান উপকরণ। সামিয়া বলেন, ‘বিজ্ঞাপনে গাছ ব্যবহার করলে পরিবেশের ভারসাম্য এবং সৌন্দর্য অনেকাংশে বেড়ে যাবে।’ পরিবেশের কথা চিন্তা করে ইতোমধ্যে ইকোপার্কও করেছেন তিনি।

এছাড়া গত তিন বছর ধরে সামিয়া একটি ব্যতিক্রমি কাজ করে যাচ্ছেন। চলার পথে কোথাও কোন বিড়াল পেলে, ধরে বাসায় নিয়ে যান। তাকে গোসল করিয়ে, খাবার খাইয়ে নিজের পরিবারের সদস্য করে নেন। তার পরিবারে বিড়াল সদস্যের সংখ্যা ১৫। বেশির ভাগ বিড়াল নিয়ে এসেছেন নিজের বাসার নিচ থেকেই। বাকিগুলো রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নিয়ে এসেছেন।

তিনি বলেন, ‘দিনে অন্তত দু’ঘণ্টা বিড়ালের জন্য ব্যয় হয়। প্রতিদিন বিড়ালগুলোকে দু’বার খাবার দেওয়া হয়; সকাল নয়টায় ও সন্ধ্যা সাতটায়। মুরগীর গলা, পা ও ডানা দিয়ে সকালে চিকেন খিচুড়ি এবং রাতে চিড়া দিয়ে ভুনা ফিস খাওয়ানো হয়। ১৫টি বিড়ালকে তিনটি আলাদা পাত্রে খেতে দেওয়া হয়। কারণ, কারো সঙ্গে কারো দ্বন্দ থাকলে, সে এক সঙ্গে এক পাত্রে খেতে চায় না।’

তিনি আরো বলেন, ‘ওদের বাসায় রেখে আসি। কখনো কখনো নিজেরা মারামারি করে। রাতে গিয়ে দেখতে হয় কারো কোথাও আঘাত লেগেছে কিনা। কোন আঘাত লাগলে বা অসুস্থ হলে সেই ভাবে চিকিৎসা দিতে হয়।’

বিড়ালদের জন্য সামিয়া মুন্সিগঞ্জে একটি ‘ক্যাট রিক্রিয়েশন সেন্টার’ (ক্যাট র‌্যাঞ্চ) করছেন। শিগগিরই এই সেন্টারটি উদ্বোধন করা হবে। এটাই হবে দেশের প্রথম ‘ক্যাট রিক্রিয়েশন সেন্টার’। তার ইচ্ছে দেশে অন্তত ২০টি ‘ক্যাট রিক্রিয়েশন সেন্টার’ করবেন। সামিয়া বলেন, ‘এ সেন্টার থেকে যা আয় হবে, তার একটা অংশ অসহায় ও দুস্থ মানুষদের সেবায় ব্যয় করা হবে।’

হঠাৎ করে বিড়াল পালনের দিকে ঝোঁক সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার জন্মের আগে থেকেই আমাদের বাসায় অ্যালসেশিয়ান কুকুর ছিলো। এখনো আমার তিনটি রয়েছে। তিন বছর আগে চিন্তা করলাম কুকুর তো আছে, এবার বিড়াল পুষে দেখি। প্রথম দিকে ধরতে ভয় লাগতো। ধরতে গেলে খাঁখাঁক করে উঠতো। এখন আর ভয় লাগে না। তিন বছরে অনেক কিছু বুঝে গেছি। আদর পেলে ওরা গুড়গুড় শব্দ করে। রাগলে ফোঁস করে, খাঁখাঁক করে। ওদের রোগ হলে সেটাও বোঝা যায়।’

সামিয়া বলেন, ‘আমরা সব এনিমেল নিয়ে ব্যালান্স করছি। কোন একটা প্রাণি বিলুপ্ত হলে তার কোনো না কোনো প্রভাব আমাদের উপর পড়বেই। আমার ইচ্ছা, সচেতনতা সৃষ্টির জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন এনিমেল নিয়ে টেলিভিশনে সপ্তাহে একটা করে প্রোগ্রাম করা।’

বিড়াল পুষে কেমন লাগছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘বিড়াল খুবই মজার প্রাণি। না পাললে বোঝা যায় না। মানুষের একেক জনের যেমন একেক রকম পার্সোনালিটি, বিড়ালেরও ঠিক তেমনই। আমার ১৫টা বিড়ালের ১৫টিরই ডিফরেন্ট পার্সোনালিটি। যে আদর পছন্দ করে, তাকে জড়িয়ে ধরা যায়। আর যে আদর পছন্দ করে না, তাকে জড়িয়ে ধরলে খ্যাক করে মার দেবে। ও যেটা পছন্দ করছে না, সেটা করা যাবে না। তাহলে সে বিরক্ত হবে। এতে সম্পর্ক নষ্ট হবে। মানুষের ক্ষেত্রেও ঠিক এমন।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ আগস্ট ২০১৭/ সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়