ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘পারিবারিক স্বাদ পাওয়া যায় টিএসসির ইফতারে’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৮:৩২, ২০ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘পারিবারিক স্বাদ পাওয়া যায় টিএসসির ইফতারে’

হোসাইন মোহাম্মদ সাগর : শেষ বিকেলের রোদটুকু পড়ে এসেছে। আবির, অনির্বান, রাইনা, সেতু আর সানি ইফতার নিয়ে হাজির হলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) তে। লাল ইটের ভবনগুলোর মাঝে সবুজ চত্ত্বরে গোল হয়ে বসলেন ইফতারের উদ্দেশ্যে। শুধু ওরা পাঁচজন নয়, এই মাঠে রয়েছে আরো হাজারখানেক সদস্য। যারা ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে একত্রে ইফতার করেন এখানে।

মাঠের মধ্যে ছোট ছোট দলে গোল হয়ে বসেন সবাই। কোনোটিতে তিনজন আবার কোনোটিতে ত্রিশ। সন্ধ্যা নামার আগেই এখানে সমাগম ঘটে এরকম শতাধিক দলের। সবুজ ঘাসের ওপর খবরের কাগজ বিছিয়ে ইফতারের পাশাপাশি চলে জমজমাট আড্ডা।

টিএসসিতে ইফতারের ব্যপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাইনা আহসান জানান, ‘এই জায়গাটা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য খুবই জনপ্রিয় একটি স্থান। এখানকার সামাজিক পরিবেশের জন্য অনেকেই এখানে ইফতার করতে আসেন। আর বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে ইফতার করার মজাটাও অন্যরকম। সবাই মিলে ইফতার করতে বেশ ভালো লাগে। তাই সুযোগ পেলেই এখানে আসি। পরিবার ছেড়ে পরিবারের একটু স্বাদ পাওয়া যায় যেন এখানে’।



শুধু কি বন্ধু? টিএসসির মূল অডিটোরিয়াম, গেমস রুম, ক্যাফেটেরিয়া, কিংবা সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কার্যালয়েও চলে নানা ধরনের ইফতার আয়োজন। এসবের আয়োজনে থাকে বিভিন্ন জেলা সংগঠন, টিএসসির সামাজিক সংগঠন ও বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ এক অন্যরকম পরিবেশ। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষক-কর্মকর্তারা এবং প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও তাদের পরিবার-পরিজন নিয়ে ইফতার করতে আসেন এখানে।

কথা হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের সাবেক ছাত্র ও সমাজসেবা কর্মকর্তা আসিফ ইমতিয়াজ সঙ্গে। রাইজিংবিডিকে তিনি বলেন, ‘ছাত্র জীবনকে অনেক মিস করি। অতি সম্প্রতি চাকরিতে যোগদান করেছি, কয়েকদিন পর থেকেই বিশ্ববিদ্যালয় অতীত হয়ে যাবে। সুন্দর কিছু স্মৃতি তৈরির জন্যই টিএসসির ইফতার আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।’

মুড়ি, ছোলা, খেজুর, জিলাপি, বেগুনি, পেঁয়াজু, চিকেন, পাকুড়া, বুন্দিয়া, আলুর চপের পাশাপাশি থাকে বিভিন্ন রকমের পানীয়, শরবত, জুস, কলা, আপেলসহ নানা জাতের ফল। কেউ কেউ ভালো রেস্তোরাঁ থেকে আনিয়ে নেন বিরিয়ানি বা পোলাও। অনেকেই আবার ইফতার তৈরি করে আনেন বাসা থেকে।

ইফতার উপলক্ষে সন্ধ্যা নাগাদ মুখরিত হয়ে ওঠে টিএসসি এলাকা। মূল ভবন ছাড়াও সড়কদ্বীপ, মিলন চত্বর, হাকিম
চত্বর, রোকেয়া হলের সামনে, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের ফটকসহ আশপাশের এলাকা সরগরম হয়ে ওঠে মানুষের পদচারণায়। শুধু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ুয়া তরুণদেরও ইফতারের প্রিয় স্থান এই টিএসসি। সবার উদ্দেশ্য সারা দিনের সিয়াম সাধনার পর বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে আনন্দে ইফতার করা।

টিএসসির ইফতারের আরো একটি দিক হলো এখানে ছিন্নমূল পথশিশুরাও সবার সঙ্গে খাবার খাওয়ার সুযোগ পায়। অনেকে আবার বিভিন্ন পাত্রে ইফতার সংগ্রহ করে পরিবারের জন্যও নিয়ে যায়। তাদের ইফতার সংগ্রহে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্ররাও বেশ সহানুভূতিশীল আচরণ করে থাকেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ জুন ২০১৭/সাগর/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়