ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

জীবনযন্ত্রণা আর সইতে পারছেন না মাহবুবা

সাফিউল ইসলাম সাকিব || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৮, ২১ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জীবনযন্ত্রণা আর সইতে পারছেন না মাহবুবা

সাফিউল ইসলাম সাকিব, সাভার : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার শিকার হয়েছিলেন যারা, তাদের একজন সাভারের মাহবুবা পারভীন।

রাজনীতিতে সক্রিয় এই নেত্রী  ঢাকা জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে সেদিনের জনসভায় একবারে মঞ্চের সামনের দিকে ছিলেন । মাহবুবার ভাষ্যমতে, দলের সিনিয়র নেতাদের বক্তব্য শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বক্তব্য শুরুর প্রাক্কালেই ঘটে গ্রেনেডের বিস্ফোরণ। এরপরই জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে পরে যান তিনি।

মৃত ভেবে লাশ ঘরে পাঠানো হয়েছিল মাহবুবাকে। সেই সময় সংবাদপত্রেও গ্রেনেড হামলার পর ঘটনাস্থলে মাহবুবার নিথর দেহ মাটিতে পরে থাকার ছবি প্রকাশ পায়। কিন্তু সেদিন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের লাশ ঘরে আওয়ামী লীগের এক নেতার চোখে ধরা পরে মাহবুবার হৃদস্পন্দন। দ্বিতীয় মেয়াদে জীবন ফিরে পান মাহবুবা। কিন্তু সেই জীবন এখন দূর্বিষহ হয়ে উঠেছে মাহবুবার কাছে।

দেহে গ্রেনেডের ১৮০০ স্প্লিন্টারের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন মাহবুবা পারভীন। দূর্বিষহ জীবন যন্ত্রণা আর সইতে পারছেন না তিনি।যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে নিজেই নিজের মৃত্যু কামনা করছেন।খুঁজছেন আত্মহত্যার পথ । মাহবুবা পারভীন বলেন, ‘তের বছর ধরে যন্ত্রণায় ভূগছি। এক বেলা মেডিসিন না খেলেই গ্রেনেডের স্প্লিন্টারগুলো যন্ত্রণা শুরু করে। আগের চেয়ে ডায়াবেটিস বেড়ে গেছে।  ডান চোখে কম দেখি । অন্যের সাহায্য ছাড়া ঘর থেকে পা বাইরে ফেলতে পারি না। এই জীবন আর ভালো লাগছে না। আল্লাহর কাছে মৃত্যু চেয়েও পাচ্ছি না। এখন আমার আত্মহত্যাই একমাত্র সমাধান।’

সাভারের বাজার রোডে বেড়ে ওঠা মাহবুবা পারভীন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন লেখাপড়ার জীবন থেকেই। শেষে যুক্ত হয়েছিলেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সঙ্গে। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালোবাসা ছাড়া নিজ দলের সহকর্মীদের নিকট থেকে সামান্য সহমর্মিতাও পাননি বলে জানান এই নেত্রী।

এ ব্যাপারে ক্ষুব্ধ মাহবুবা বলেন, ‘এমনকি গ্রেনেড হামলার বর্ষপূর্তির দিনেও স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেউ খোঁজ নেন না। সাভারের আওয়ামী লীগ নেতারাও দূরে ঠেলে রেখেছেন  দিনের পর দিন। বছরের পর বছর কেটে গেছে কিন্তু কেউ কোনদিন খবর নেননি। মাহবুবা বেঁচে আছে না মরে গেছে সেটা তাদের কাছে গুরুত্বের বিষয় নয়।’

মাহবুবা পারভীনকে দেখতে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা (বামে), গ্রেনেড হামলার পর পরে থাকা মাহবুবা পারভীন


প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করেন মাহবুবা পারভীন। প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে প্রতিমাসেই দশ হাজার টাকা ভাতা পান মাহবুবা। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া দশ লক্ষ টাকার সঞ্চয়পত্র থেকে আরও দশ হাজার টাকা পান প্রতিমাসে। তাতেই নির্ভর করে মাহবুবার চিকিৎসাসহ অন্যান্য ব্যয় চলছে। তবে এতে দারিদ্রতার সূচক থেকে বের হয়ে স্বচ্ছল জীবন যাপন কখনও সম্ভব হয়নি মাহবুবার।

জীবনসঙ্গী হিসেবে যাকে পেয়েছিলেন মাহবুবা, তিনি বিমান বাহিনীর সাবেক ফ্লাইট সার্জেন্ট এমএ মাসুদ। গ্রেনেড হামলার পর দূর্বিষহ জীবনে স্বামীই ছিলেন মাহবুবার কাছে বেঁচে থাকার একমাত্র  অবলম্বন। দিনের পর দিন তিনিই প্রেরণা যুগিয়ে গেছেন মাহবুবার মনে। কিন্তু ২০১৬ সালের ১৫ নভেম্বর স্বামীর মৃত্যুর পর পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছেন মাহবুবা।

মাহবুবা বলেন, ‘রাতে যখন স্প্লিন্টারের যন্ত্রণায় ঘুম থেকে লাফিয়ে উঠতাম, তখন তার (স্বামীর) সেবা যত্নে কিছুটা স্বস্তি পেতাম। লোকাল বাসে হাসপাতালে যাতায়াতকালে ছায়ার মত পাশে থাকতেন তিনি। কিন্তু এখন তার অভাব আমাকে আরও অসহায় করেছে। শরীরে যন্ত্রণার মাত্রা আরও বেড়ে গেছে। জীবন এখন আমার কাছে একটি অভিশাপ।’

 

 

রাইজিংবিডি/ সাভার/ ২১ আগষ্ট ২০১৭/ সাফিউল ইসলাম সাকিব/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়