ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

‘আলো ও ছায়া’র কবি

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:৩১, ১২ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘আলো ও ছায়া’র কবি

শাহ মতিন টিপু : নাই কিরে সুখ? নাই কিরে সুখ?/ এ ধরা কি শুধু বিষাদময়?/যতনে জ্বলিয়া কাঁদিয়া মরিতে/ কেবলি কি নর জনম লয়?/ কাঁদাইতে শুধু বিশ্বরচয়িতা/ সৃজেন কি নরে এমন করে ?

আবার- ‘আপনারে লয়ে বিব্রত রহিতে/আসে নাই কেহ অবনী ‘পরে,/সকলের তরে সকলে আমরা/ প্রত্যেকে মোরা পরের তরে ।’ আবার- ‘করিতে পারি না কাজ/সদা ভয় সদা লাজ/ সংশয়ে সংকল্প সদা টলে / পাছে লোকে কিছু বলে।’

কবিতার এসব চরণই বলে দেয় কে এর রচয়িতা? তিনি কামিনী রায়।আজ এই কবির জন্মদিন।বরিশাল জেলার বাসন্ডা গ্রামে ১৮৬৪ সালের ১২ অক্টোবর তার জন্ম। তিনি ব্রিটিশ ভারতের প্রথম বাঙালী গ্র্যাজুয়েট। পিতৃ প্রদত্ত নাম কামিনী সেন। বিয়ের পর স্বামী কেদার নাথ রায়ের পদবি যুক্ত হয়ে হন কামিনী রায়।

পিতা চন্ডিচরণ সেন ছিলেন তৎকালীন প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ, বিচারক। তিনি ছিলেন ব্রাহ্মধর্মাবলম্বী। তার কাকা নীতিশ রায় ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের জাঁদরেল ব্যারিস্টার। পরে যিনি কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। কামিনী রায়ের বোন যামিনী সেন ছিলেন তৎকালীন সময়ের প্রখ্যাত চিকিৎসক। তিনি নেপালের রাজ পরিবারের চিকিৎসক ছিলেন। এতেই স্পষ্ট, তিনি কেমন পরিবারের ছিলেন।

কোলকাতার বেথুন কলেজ থেকে তিনি ১৮৮৬ সালে সংস্কৃত ভাষায় সম্মানসহ স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। কৈশোরেই কামিনী রায় সাহিত্য রচনা শুরু করেন এবং কবিত্ব-শক্তির প্রকাশ ঘটান।  তার প্রথম কাব্য ‘আলো ও ছায়া’ (১৮৮৯)। তার লেখা কাব্যের মধ্যে ‘নির্মাল্য’, ‘পৌরাণিকা’, ‘মাল্য ও নির্মল্য’, ‘দীপ ও ধুপ’, ‘জীবন পথে’ ও ‘শ্রাদ্ধিকী’ উল্লেখযোগ্য।

একথা নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, কামিনী রায় একজন প্রথিতযশা বাঙালি কবি, সমাজকর্মী এবং নারীবাদী লেখিকা। নারীবাদী হলেও উগ্র ছিলেন না। বাঙালী ললনাদের মতোই ছিল তার শান্ত স্বভাব। তবে নারীদের অধিকার প্রতিষ্ঠার সব আন্দোলন সংগ্রামের অগ্রভাগে থেকে নেতৃত্ব দিতেন তিনি। তিনি নারী-পুরুষের সমান অধিকার নিয়েও আন্দোলন করেন। নারীর ভোটাধিকার আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিলেন তিনি। তাদের আন্দোলনের ফলেই তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে বাঙালী নারীর ভোটাধিকার প্রদান করে। কামিনী রায়কে ব্রিটিশ সরকার ‘নারী শ্রম তদন্ত কমিশন’ এর সদস্য মনোনীত করে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কবি কামিনী রায়কে তার অসামান্য কবি প্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯২৯ খ্রিস্টাব্দে ‘জগত্তারিনী’ স্বর্ণপদক প্রদান করে। তিনি ১৯৩০ সালে বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মেলনের ২৯তম অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন।

কবি হেমচন্দ্রের মানসকন্যা। তার প্রথম কাব্য গ্রন্থটির ভূমিকা লিখেছিলেন কবি হেমচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। ত্রিশ বছর বয়সে সাত সন্তানের পিতা বিপত্নীক কেদার নাথ রায়ের সঙ্গে কামিনী রায়ের বিয়ে হয়। আচার্য জগদীশচন্দ্র বসুর সঙ্গে কামিনী সেনের (বিয়ের পূর্বে) ভালবাসা হলেও বিয়ে হয়নি। আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রায় কামিনী রায়কে ভালবাসতেন। তবে এই ভালবাসা ছিল এক তরফা। জীবনসঙ্গিনী হিসেবে কামিনী রায়কে না পেয়ে প্রফুল্লচন্দ্র রায় চিরকুমারই থেকে যান। এক পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। কিন্তু বিয়ের ১২ বছর পর (১৯১০ খ্রি.) স্বামীর মৃত্যু হয়। এর তিন বছর পর শিশুসন্তান অশোকের মৃত্যু হয়। স্বামী এবং পুত্রের মৃত্যুর পর দুঃখ বেদনা নিয়েই পরবর্তী জীবন অতিবাহিত করেন।

শেষ বয়সে তিনি ঝাড়খন্ডের হাজারীবাগে বসবাস করতেন। ১৯৩৩-এর ২৭ সেপ্টেম্বর ৬৯ বছর বয়সে এই বিদুষি  কবির মৃত্যু হয়।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ অক্টোবর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়