ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

এল হেমন্তের দিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৬ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
এল হেমন্তের দিন

শাহ মতিন টিপু : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গীতবিতানের দু’টি চরণ এরকম- ‘আজি এল হেমন্তের দিন/কুহেলীবিলীন, ভূষণবিহীন’। অল্প কথায় বিশ্ববরেণ্য কবি বুঝিয়ে দিলেন হেমন্তকে।শরৎ আর শীতের মধ্যস্থ ঋতু হেমন্তের না আছে শীতের কুহেলী, না আছে শরতের ভূষণ।

আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম গেয়েছেন-  ‘উত্তরীয় লুটায় আমার/ ধানের খেতে হিমেল হাওয়ায়।/ আমার চাওয়া জড়িয়ে আছে/ নীল আকাশের সুনীল চাওয়ায়।/ ভাঁড়ির শীর্ণা নদীর কূলে/ আমার রবি-ফসল দুলে, /নবান্নেরই সুঘ্রাণে মোর/ চাষির মুখে টপ্পা গাওয়ায়।’ (হৈমন্তী তেওড়া) বাংলার মানুষ এখন বাংলা সনের হিসাব-নিকাশ খুব একটা মনে রাখেনা। তবে গ্রামীণ জীবনে অনেকেই খোঁজ রাখেন, অনেকেই জানেন আজ পয়লা কার্তিক। আজ হেমন্তের প্রথম দিন।

কার্তিককে বলা হয় বর্ষা আর শীতের মিলন ক্ষণ। কারণ, কার্তিক হচ্ছে, বর্ষার পরেই আগত ঋতু হেমন্তের প্রথম মাস। এ সময়ে বাংলাদেশের প্রকৃতিতে প্রগাঢ় সবুজ যেমন পাওয়া যায়, তেমনি পাওয়া যায় শীতের মিষ্টি আমেজও। বলা যায়, গ্রীষ্মের মাটি ফাঁটানো দাবদাহ নেই, বর্ষার অঝোর ধারায় ভিজে যাওয়া বা কাঁদা নেই, হাড় কাঁপানো শীত যে মাসে নেই তারই নাম কার্তিক।

কবি জীবনানন্দের ভাষায় নবান্নের কার্তিক। তিনি লেখেন, ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে এই বাংলায় / হয়তো মানুষ নয় হয়তোবা শাঁখচিল শালিকের বেশে,/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব কাঁঠাল ছায়ায়।’

কার্তিক হচ্ছে, দুই ঋতুর মোহনা। এ কারণেই, বাংলাদেশের প্রাণ ও প্রকৃতি দেখার সবচেয়ে সুন্দর সময় এই কার্তিক। এ মাসের তাপমাত্রাও  থাকে খুব আরামপ্রদ। হঠাৎ বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া নেই , সারাদিন থমথমে গুমোট মেঘলা আকাশ নেই,  গ্রীষ্মের গরম নেই, শীতের কনকনে ঠান্ডার সমস্যাও নেই।

হেমন্তে দেখা যায় অখন্ড নীল আকাশ। মিষ্টি সোনা রোদ বলতে যা বোঝা তা দেখা যায় এই হেমন্তেই। হেমন্তের শিশির ভেজা ঘাসের ডগা যেন মুক্তার মেলা। সকালে বা সন্ধায় অদৃশ্য আকারে ঝরে আকাশ থেকে।

আবহমানকাল থেকে কমনীয়তার প্রতীক শিশির। ভোরের কাঁচা রোদ, মৃদু হিমস্পর্শ প্রাণে শিহরণ জাগায়। বাংলাদেশে হেমন্ত আসে ধীর পদক্ষেপে। শীতের পরশ আলতো করে গায়ে মেখে। হেমন্তের ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা হয়।

নদীমাতৃক এ দেশের প্রধান কৃষি ফসল ধান। এক সময় বাংলায় বছর শুরু হতো হেমন্ত দিয়ে। সম্রাট আকবর অগ্রহায়ণ মাসকেই বছরের প্রথম মাস বা খাজনা তোলার মাস ঘোষণা দিয়েছিলেন। কারণ, ধান উৎপাদনের ঋতু হলো এই হেমন্ত। হেমন্তের প্রথম মাস কার্তিকে ধানে পাক ধরে। কার্তিকের শেষ দিকে গ্রামের মাঠে মাঠে ধান কাটার ধুম পড়ে যায়। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে পাকা ধানের গন্ধে মৌ মৌ গন্ধ।

জলবায়ু পরিবর্তনের ধাক্কা লেগেছে বাংলাদেশের ষড়ঋতুতে। ঋতুর উপস্থিতিতে ঘটছে তারতম্য। তারপরও কী কমে গেছে হেমন্তের আবেদন?




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৬ অক্টোবর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়