ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

বাংলা কবিতার বরপুত্র’র জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:২১, ২৩ অক্টোবর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাংলা কবিতার বরপুত্র’র জন্মদিন

শাহ মতিন টিপু : কালের স্পন্দন খুব করে যাঁর কবিতায় ঢেউ তুলেছে, তিনি বাংলা কবিতার বরপুত্র শামসুর রাহমান। কালের সকল প্রতিকূলতা জয় করে তিনি হয়েছিলেন অরিন্দম। বাংলা সাহিত্যের অন্যতম এই শ্রেষ্ঠ কবির ৮৯ তম জন্মদিন আজ।

শামসুর রাহমান দীর্ঘ ছয় দশক ধরে লেখালেখি করেছেন, সমকালকে ধারণ করে লিখেছেন অসংখ্য কবিতা। মুক্তিযুদ্ধ, নাগরিকতা ও প্রেম তাঁর কবিতায় দীর্ঘ পথ হেঁটেছে। আপন সত্তায় উদ্ভাসিত হয়ে দেশ ও কালকে তিনি নিজের করে নিয়েছেন। নাম লিখিয়েছেন কবিতার কারিগর হিসেবে। বিশেষত, তাঁর কাব্যে বাংলাদেশ ও সমকাল যেভাবে উদ্ভাসিত হয়েছে অন্য কারও কবিতায় এতটা প্রবলভাবে তা ফুটে ওঠেনি।

যার কবিতা আজও সকল বয়সের মানুষকে উজ্জীবিত করে। বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখা কবির অসংখ্য কবিতা ব্যাপকভাবে যোদ্ধাসহ সর্বস্তরের মানুষকে উৎসাহিত করেছে।

তিনি ছিলেন জনতার কবি। স্বাধীনতার কবি। দেশের ও দেশের মানুষের বিরুদ্ধে কোন অপশক্তি মাথাচাড়া দিয়ে উঠলে, কোন অনাচার হতে দেখলে নিজেকে একাত্ম করে নিতেন এবং তার জবাব দিতেন কবিতার ভাষায়।

কবি হাবিবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘আশা, বেদনা, ভালোবাসা, দ্রোহ কোনো কিছুই বাদ যায়নি তাঁর কবিতা থেকে।’

শামসুর রাহমানকে বলা হয় কবিতার বরপুত্র। আবার নাগরিক-কবিও বলা হয়। বাংলা কাব্যে সর্বসময় তিনি ছিলেন নাগরিকতার ধারক। তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে (১৯৫৯)। এখানে তাঁর ভাবনার মূলে রয়েছে ঢাকার বস্তি-গ্রাম-নগরের মিশ্র জনপদ। নাগরিক জীবনের ক্লান্তি, ব্যর্থতা, শোভাহীনতা, নিঃসঙ্গতা শামসুর রাহমান সংযোগ করেছেন তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থের অনেক স্তবকে। তাঁর লেখা কবিতা 'স্বাধীনতা তুমি' ও 'তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা' আজো মানুষের মুখে মুখে উচ্চারিত হয়।

শামসুর রাহমানের প্রথম কবিতার বই ‘প্রথম গান দ্বিতীয় মৃত্যুর আগে’ প্রকাশ পায় ১৯৬০ সালে। এর পর ষাট দশকে প্রকাশিত বইগুলো হচ্ছে ‘রৌদ্র করোটিতে’, ‘বিধ্বস্ত নীলিমা’, ‘নিরালোকে বসতি’, ‘নিজ বাসভূমে’। দেশ স্বাধীনের পর প্রকাশ পায় ‘বন্দি শিবির থেকে’, ‘মাতাল ঋতিক’সহ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত কবির ৬০টি কবিতার বই। এ ছাড়া শিশুতোষ, গল্পগ্রন্থ, উপন্যাস- ‘অক্টোপাস’ ও ‘অদ্ভুত আঁধার’, নাটক ও কবিতাগ্রসহ অনুবাদগ্রন্থ, নির্বাচিত কলাম, নির্বাচিত কবিতার চারখন্ডসহ কবির বিভিন্ন বিষয়ে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা শতাধিক।

সাহিত্যে অবদানের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, আদমজী পুরস্কার, একুশের পদক, কলকাতা থেকে আনন্দ পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার লাভ করেন।

কবির জন্ম ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর পুরনো ঢাকার মাহুতটুলিতে। ২০০৬ সালের ১৭ আগস্ট তিনি ঢাকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন।

আঠার বছর বয়সে তিনি লেখা শুরু করেন।  ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতকোত্তর করার পর কবি ১৯৫৭ সালে ডেইলি মর্নিং সান পত্রিকায় সহযোগী সম্পাদক হিসেবে কর্ম ও পেশাগত জীবন শুরু করেন। পরে পাকিস্তান রেডিওতেও চাকরি করেন। দেশ স্বাধীনের পর দৈনিক বাংলা পত্রিকায় যোগ দেন। এক পর্যায়ে এই পত্রিকার প্রধান সম্পাদকসহ সাপ্তাহিক বিচিত্রার সম্পাদক ছিলেন। পরবর্তীতে ‘মূলধারা’, ‘অধূনা’ নামে দুটি সাহিত্য পত্রিকা সম্পাদনা করেন।

কবির জন্মদিন উপলক্ষে বাংলা একাডেমি আজ সোমবার বিকেল চারটায় ‘শামসুর রাহমানের কবিতার দেশ’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। একাডেমির কবি শামসুর রাহমান মিলনায়তনে আলোচনা সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. তারেক রেজা। আলোচনায় অংশ নেবেন অধ্যাপক বেগম আখতার কামাল ও ড. অনু হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান।

এ ছাড়াও শ্রাবন প্রকাশনীর সহযোগী সংগঠন বইনিউজ আজ কবিতা পাঠের আয়োজন করেছে। এতে বিভিন্ন কবি নিবেদিত কবিতা পাঠ করবেন। জাতীয় জাদুঘরে কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে বিকেল পাঁচটায় এই অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৩ অক্টোবর ২০১৭/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়