ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

শৃঙ্খল ভেঙে এগিয়ে যাওয়া এক মেধাবীর গল্প

আমিনুর রহমান হৃদয় || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২৮, ১১ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শৃঙ্খল ভেঙে এগিয়ে যাওয়া এক মেধাবীর গল্প

তাইবুর মাসুদ এ্যালবার্ট শেখ

আমিনুর রহমান হৃদয় : পুরোদস্তুর ব্যবসায়িক পরিবারে তার জন্ম। পরিবারের অধিকাংশ সদস্যরা এসএসসি কিংবা এইচএসসি পাস করেই জড়িয়ে যেতেন ব্যবসায়। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কথা কেউ ভাবতেন না। পরিবারের সেই ব্যবসায়িক ধারা ডিঙিয়ে এ বছর সরকারি মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে মেধা তালিকায় ৯ম স্থান অধিকার করে নিয়েছেন তাইবুর মাসুদ এ্যালবার্ট শেখ।

উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় জন্ম এই মেধাবী শিক্ষার্থীর। দুই ভাই-এক বোনের মধ্যে সবার ছোট এ্যালবার্ট। বাবা শেখ রিয়াজউদ্দিন পেশায় একজন কাপড় ব্যবসায়ী আর মা মোছা. মিনারা আকতার গৃহিণী। সম্প্রতি এক আড্ডায় এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে কথা হয় রাইজিংবিডির।

ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যরা খুব সফল ছিল এ কথা জানিয়ে এ্যালবার্ট বলেন, ‘আমার পরিবারে ব্যবসার বাইরে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের কথা কেউ ভাবতো না। ব্যবসায়ী হিসেবেই পরিবারের সবাই প্রতিষ্ঠিত হতো। তবে আমার মায়ের ইচ্ছে ছিল তার ছেলে-মেয়েরা একটু পড়াশোনার সেক্টরটাতে আসুক। চেষ্টা করুক। মায়ের ভাবনায় আসে সন্তানরা যদি পড়াশোনায় চেষ্টা করার পরও ভালো না করতে পারে তাহলে তো ব্যবসা আছেই। তবে মা কখনো পড়াশোনায় চাপ দিত না। উৎসাহ দিত ভালো করার। বলা যায়, মূলত এই উৎসাহের জন্যই আমার বড় বোন দেশের একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পর সরকারি রাজস্ব কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন এবং আমার ভাই দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এমএসসি করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বলা যায় আমিও ভালোভাবেই পড়াশোনা চালিয়ে যেতে থাকি। ১ম থেকে ৫ম শ্রেণীতে ধাপে ধাপে প্রত্যেক শ্রেণীতেই ভালো করার লক্ষ্য ছিল।’

এই মেধাবী শিক্ষার্থী আরো বলেন, ‘৫ম শ্রেণীতে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাই। ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে উঠার পর জানতে পারি ক্যাডেট কলেজে শিক্ষার মান ভালো। এবার ক্যাডেট কলেজে ভর্তির জন্য পড়াশোনা শুরু করি। লিখিত ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণও হই। কিন্তু মেডিকেল ও মৌখিক পরীক্ষার সেকশনে উত্তীর্ণ হতে পারিনি। আর এজন্য ক্যাডেট কলেজে পড়ার সুযোগ হয়নি। স্থানীয় পীরগঞ্জ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হই। এরপর পীরগঞ্জ সরকারি কলেজ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে এইচএসসিতেও উত্তীর্ণ হই।’

‘আগে থেকেই  খুব বড় মাপের স্বপ্ন দেখতে আমি বিশ্বাসী না। আমার লক্ষ্য থাকতো প্রত্যেকটা ধাপই ভালো ভাবে উত্তীর্ণ করার। আর এজন্য পরিশ্রমও করতাম।’ বলছিলেন এ্যালবার্ট।

এইচএসসি’র বইয়ের পড়া মুখস্ত করার চেয়ে বুঝে বুঝে পড়ে আয়ত্ত করাটা ভর্তি পরীক্ষায় কাজে লেগেছে বলে জানান এই শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, ‘শুধু পড়লেই হবে না। ভর্তি পরীক্ষায় কি ধরনের প্রশ্ন আসে সেই সম্পর্কে আগে থেকেই ধারণা রাখতে হবে। আমার ক্ষেত্রে আমি এলাকার মেডিকেল কলেজে পড়ুয়া ভাইয়াদের কাছে তাদের অভিজ্ঞতা শুনতাম এবং পরামর্শ নিতাম। বড় ভাইদের পরামর্শ অনেকটা কাজে লেগেছে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য।’

মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষাতে মেধা তালিকায় সেরা দশে স্থান করে নেওয়ার লক্ষ্য ছিল কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষার্থী এ্যালবার্ট বলেন, ‘আমার প্রথম লক্ষ্য ছিল পরীক্ষার প্রস্তুতি ভালো ভাবে নেয়া এবং যা জানি তা বুঝে পরীক্ষায় উত্তর দেয়া। পরীক্ষায় কেন্দ্রে গিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই পরীক্ষা দিয়ে আসি। পরীক্ষা কেন্দ্র থেকে বের হয়ে শুনলাম সবার পরীক্ষাই ভালো হয়েছে। সবাই নাকি ৯০ এর ওপর নম্বর পাচ্ছে। তবে আমি তখনো নিশ্চিত হইনি যে আমি কতগুলো সঠিক উত্তর দিয়ে আসতে পেরেছি। রাতে বিভিন্ন ওয়েবসাইটে পরীক্ষার প্রশ্নগুলো দেয়া হয়েছিল। তখন আমার দেয়া উত্তরগুলোর সঙ্গে মিলানোর পর বুঝতে পারলাম যে ভালো কোনো একটা মেডিকেল কলেজে চান্স হবে। যেদিন রেজাল্ট আসবে সেদিন ধানমন্ডি লেকে বন্ধুদের সঙ্গে ছিলাম। রেজাল্ট নিয়ে একটু টেনশনও হচ্ছিল। রেজাল্ট আসলো। আমি যেমন নম্বর আশা করেছিলাম প্রায় তেমনটাই পেয়েছি। ৮৯ নম্বর পেয়ে উত্তীর্ণ হই। তবে হ্যাঁ, মেধা তালিকায় ৯ম স্থান অধিকার করাটা আমাকে একটু অবাক করেছে। আমার থেকে হয়তোবা অনেক ভালো ছাত্র আছে। যারা প্রত্যাশার চাপ বেশি নেওয়ার কারণে ফলাফল খারাপ করেছে-এমনটা মনে হয়েছে আমার।’

মেধাবী এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য একজন শিক্ষার্থীকে প্রথমে সঠিক পরিকল্পনা করতে হবে এবং প্রত্যেকটা ধাপেই ভালো করার চেষ্টা করতে হবে। প্রত্যেকটা ধাপ ভালো ভাবে অতিক্রম করার জন্য যথার্থ পরিশ্রম করা দরকার।’

আগামীতে যে শিক্ষার্থীরা সরকারি মেডিকেল কলেজ বা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চান তাদের উদ্দেশ্যে এ্যালবার্ট বলেন, ‘ভর্তির পরীক্ষার জন্য অযথা দুশ্চিন্তা না করে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন সম্পর্কে ধারণা নিয়ে এইচএসসি’র পাঠ্য বইগুলো খুব ভালো ভাবে মূলত এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যই বুঝে বুঝে পড়া উচিত। তাহলে কাঙ্ক্ষিত জায়গায় ভর্তির সুযোগ পাওয়া কখনোই কষ্টসাধ্য হবে না।’

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ ডিসেম্বর ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়