ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

রিকশা চালিয়ে পড়ালেখা

এম আর লিটন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০২, ২৬ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রিকশা চালিয়ে পড়ালেখা

পলাশ মিয়া

এম আর লিটন : অভাব-অনটনের কারণে শিক্ষাবঞ্চিত জীবন মেনে নিতে রাজি নন আত্মপ্রত্যয়ী তরুণ পলাশ মিয়া (২০)। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার পয়লা পূর্ব পাড়া গ্রামের বাসিন্দা পলাশ মিয়া তার জীবনযুদ্ধে এক লড়াকু সৈনিক। পিতা মো. ঠান্ডু মিয়া একজন ক্ষেতমজুর। পলাশ মিয়া পরিবারের তিন সন্তানের সবার বড়। তার ছোট এক ভাই ও এক বোন রয়েছে। দরিদ্র পরিবারের বড় ছেলে বলা কথা, ছোটবেলাতেই পরিবারের দায়িত্ব এসে চাপে কাধে।

২০০৮ সালে পলাশ যখন স্থানীয় এক হাইস্কুলে ৮ম শ্রেণিতে পড়ে, তখন পরিবারের অভাব-অনটনের কারণে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। অভাবের সংসারে বাবাকে সহযোগিতা করতে গ্রামের ক্ষেতখামারে কাজ করা শুরু করেন। এরপর স্থানীয় সমিতি থেকে লোন নিয়ে একটি রিকশা কিনে চালানো শুরু করেন।

পলাশের রিকশায় প্রতিদিন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা যাতায়াত করতো। তাদের দেখে পলাশের আবারও লেখাপড়া করার ইচ্ছে জাগে। এদিকে তার সমবয়সি বন্ধুরা হাইস্কুল পড়া শেষ করে কলেজে উঠেছে। কিন্তু পলাশের এ বিষয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ছিল না। সে জানতো পড়ালেখা করতে বয়সের প্রয়োজন হয় না। এছাড়াও তার বন্ধুরা তাকে পড়ালেখা করতে উৎসাহিত করে। ২০১২ সালে পলাশ আবারও হাইস্কুলে ৯ম শ্রেণীতে ভর্তি হয়। রিকশা চালানোর পাশাপাশি স্কুলে ক্লাস করা শুরু করে। পলাশের পরিশ্রম আরো বেড়ে যায়। একদিকে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়া, অন্যদিকে রিকশা চালিয়ে পরিবারের অর্থের জোগান। ক্লাসের আগে ও পরে রিকশা চালানোর কঠোর পরিশ্রম ও রাত জেগে লেখাপড়ার অধ্যবস্যায়ের মধ্য দিয়ে ২০১৪ সালে এসএসসি পাশ করে মহাদেবপুর ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হয়। এখানেই পলাশের জীবনের যুদ্ধ থেমে যায়নি। ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যদিয়ে তার স্বপ্নের জায়গা আরো বিকশিত হতে থাকে। রিকশা চালিয়ে কিছু টাকা জমিয়ে এবং কিছু টাকা লোন নিয়ে একটি হ্যালোবাইক কিনে। হ্যালোবাইক চালিয়ে এইচএসসি পাশ করে ২০১৬ সালে। বর্তমানে ঘিওর সরকারি কলেজে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধীনে ডিগ্রিতে পড়ছেন।

রাইজিংবিডিকে পলাশ বলেন, ‘ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছু করা যায়, আমার ইচ্ছা ছিল- যতই কষ্ট হোক আমি পড়বোই। বন্ধুরা আমাকে পড়তে অনেক উৎসাহ এবং সহযোগিতা করেছে তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’

তিনি আরো বললেন, ‘আমার স্বপ্ন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে চাকরি করবো এবং এলাকার সুবিধাবঞ্চিত ছেলেমেয়েদের পাশে দাঁড়াতে চাই।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৬ মার্চ ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ