ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নদী কেড়ে নিয়েছে সব, ফিরিয়ে দেবে?

হৃদয় সম্রাট || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৪, ২০ অক্টোবর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নদী কেড়ে নিয়েছে সব, ফিরিয়ে দেবে?

হৃদয় সম্রাট : নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। এই নদীগুলোই বাংলাকে করেছে সমৃদ্ধ আর সুন্দর। বাংলার নদীর প্রেমে পড়েনি এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর। বাংলার শ্রেষ্ঠ কবি মাইকেল মধুসূদন দত্ত পড়েছিলেন এই নদীর প্রেমে। তাই হয়তো তিনি লিখে গেছেন শ্রেষ্ঠ চতুর্দশপদী কবিতা ‘কপোতাক্ষ নদ’।

এই নদী যেমন আমাদের করেছে সমৃদ্ধশালী, ঠিক তেমনই কেড়ে নিয়েছে হাজারো মানুষের স্বপ্ন। স্বপ্ন কেড়ে নেওয়া মানুষগুলোর মধ্য একজন হলেন খালিদ ভূইয়া।

বরিশালের মেহেরগঞ্জে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন খালিদ ভূইয়া। ছোটবেলা কেটেছে নদীর সঙ্গে মিতালী করে। ইচ্ছা ছিল বড় হয়ে মানুষের পাশে দাড়াবে। বাবা মায়ের স্বপ্নপূরণ করবে। হাসি ফুটাবে তাদের মুখে। কিন্তু হতভাগা খালিদ আজও পূরণ করতে পারেনি তার বাবা মায়ের স্বপ্ন!

এখন তার বয়স ৬০ ছুই ছুই, পরিবারের সবাই থাকে বরিশালে। ঢাকায় ধানমন্ডি ১৫ নম্বরে অনেক কষ্টে জুটিয়ে নিয়েছেন নৈশ প্রহরীর কাজ। প্রতি মাসে থাকা খাওয়া বাবদ ৭০০০ টাকা পান। এই সামান্য কিছু টাকা দিয়ে চালিয়ে যাচ্ছেন জীবন সংগ্রাম। ছেলে-মেয়েকে পড়ানোর জন্য স্ত্রীকে কাজ করতে হয় মানুষের বাসায়। এভাবেই কেটে চলেছে তাদের জীবন।

তার এত দুর্দশার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইলিশা নদী আমাদের ভিটামাটি, পুকুর, ফসলের ক্ষেত সব নিয়ে গেছে। উঠে দাড়ানোর মতো পাইনি কোনো আর্থিক অনুদান, পেয়েছি শুধু মানুষের করুণা। এরপর আর শত চেষ্টা করেও আগের মতো হয়ে উঠতে পারিনি। স্ত্রী সন্তানকে দু’মুঠো খাবার দেওয়ার উদ্দেশ্যে গ্রাম ছেড়ে চলে আসি ঢাকায়।

আমার সব আত্মীয়-স্বজন থাকে গ্রামে। ফলে মাথা গোঁজার জায়গা পাইনি কোথাও। এমনও অনেক দিন কাটাতে হয়েছে, সারাদিনে এক বেলাও খাবার জোটেনি। অনেক চেষ্টার পর প্রতিবেশীর মাধ্যমে জুটে যায় এই চাকরি। প্রায় ১০ বছর ধরে আছি এখানে। সবাই আমাকে খালিদ মামা নামেই চিনে। প্রতিদিন সন্ধ্যা ৬টা থেকে সকাল ৬টা, ১২ ঘণ্টা আমাকে ডিউটি করতে হয় এখানে। এছাড়াও তিনি বলেন, এখানকার সভাপতি সাব অনেক ভালো। আমার কোনো রকম সমস্যা হলে তারা এগিয়ে আসেন। রাতের অভিজ্ঞতার আলোকে তিনি বলেন, রাতে তো অনেক শ্রেণীর মানুষ বের হয় নানা উদ্দেশ্যে। আমি সব সময় চেষ্টা করি এই মানুষগুলোর ওপর নজর রাখতে। কারণ অসৎ কেউ যেন কোনো ক্ষতি করতে না পারে, এর জন্যই তো আমাকে রেখেছেন তারা। তাই আমি তাদের হেফাজতে কাজ করি।

পরিবারের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ৪ সন্তান। দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। বড় ছেলে এবার ক্লাস ৯ এ পড়ছে। তার পড়ালেখার প্রতি আবার ভীষণ আগ্রহ। আমার ইচ্ছা আছে তাকে অনেক বড় করার কিন্তু ততদিন আমি বাঁচবো কিনা জানি না।

তবুও তিনি স্বপ্ন দেখেন, নদী গর্ভে চলে যাওয়া সম্পত্তি ফিরে পেয়েছেন। এর জন্যই প্রতি মাসে ৩০০ টাকা পানি খাজনা দিয়ে আসছেন। যাতে করে সম্পত্তিগুলো খাস বা অন্য নামে রেকর্ড না হয়ে যায়। তার ইচ্ছা আছে জমিতে আবারও ঘর তোলার। নদীর সেই কলকল শব্দ শোনার। ধানের সময়ে নিজ জমিতে ধান লাগানোর। বিপুল ধানের মধ্য দিয়ে নবান্নের সৃষ্টি করা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২০ অক্টোবর ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়