ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শালুক সন্ধ্যায় সাহিত্যিকদের মিলনমেলা

সাইফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৫, ৯ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শালুক সন্ধ্যায় সাহিত্যিকদের মিলনমেলা

রাইজিংবিডি ডেস্ক : লিটল ম্যাগাজিন সাহিত্য পত্রিকা কিংবা সংকলন নয়, এটি একটি কমিটমেন্ট নিয়ে প্রকাশিত হয়। যে লেখা বাণিজ্যিক পত্রিকা প্রকাশে সাহস করে না, সেই সব ব্যতিক্রমী ও ভিন্ন মাত্রার লেখা দিয়ে প্রকাশিত হয় লিটল ম্যাগাজিন। সেখানে শুধু তরুণরা নয়, সব বয়সের লেখকরাই লিখে থাকেন। যাদের লেখায় তারুণ্য ও ভিন্নতা আছে তাদের লেখা মুদ্রিত হয় লিটল ম্যাগাজিনে। সুতরাং হাত মকশ করার জন্য লিটল ম্যাগাজিন নয়, লিটল ম্যাগাজিনের লেখকদের কোনো বয়স নেই। তারা যেকোনো বয়সের হতে পারেন।

সাম্প্রতিক সময়ে লিটল ম্যাগাজিন চর্চার প্রবণতা কমে গেছে। অথচ এই বৈরি সময়ে লিটল ম্যাগাজিন চর্চা কিংবা প্রথার বিরুদ্ধে দাঁড়াবার কোনো বিকল্প নেই। লিটল ম্যাগাজিন সব সময় প্রথার বিরোধিতা করে। সব সময় এস্টাবলিশমেন্টের বিরুদ্ধে তার অবস্থান। আজ আবার সময় এসেছে প্রথাকে চ্যালেঞ্জ করাবার।

শালুক সম্পাদক ও কবি ওবায়েদ আকাশ উপরোক্ত কথাগুলো বলেন ‘সাম্প্রতিক সময়ে লিটল ম্যাগাজিন চর্চার প্রাসঙ্গিকতা ও অপরিহার্যতা’ নামক প্রবন্ধে। গত ৫ এপ্রিল, শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সাতিহ্য সন্ধ্যা ‘প্রতিস্রোত’-এর মূল আলোচনার বিষয়-প্রবন্ধ ছিল এটি। এই সাহিত্য সন্ধ্যাটির আয়োজক ছিল সাহিত্য ও চিন্তাশিল্পের ছোটপত্রিকা ‘শালুক’। পত্রিকাটি আগামী নভেম্বর মাসে ২০ বছরে পদার্পণ করবে।

পাঠক সমাবেশ কেন্দ্র। চারিদিকে বই আর বইয়ের ঘ্রাণে মইমই দশা। তখন বিকেল সাড়ে চারটা বাজতে মাত্র কয়েক মিনিট বাকি। ধীরে ধীরে পাঠক সমাবেশ কেন্দ্রের দোতলার শোরুমটি অংশগ্রহণেচ্ছু কবি-লেখক-শুভাকাঙ্ক্ষীর আগমনে মুখর হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরাও উপস্থিত হয়েছেন। ব্যানারে ঝুলছে ‘শালুক’ ও ‘প্রতিস্রোত’-এর শৈল্পিক অক্ষরলিপি। স্পষ্ট হয়ে আছে অনুষ্ঠান সূচি। পাঁচটা না বাজতেই উপস্থিতিদের আসীনে ভরে গেল সকল শূন্য চেয়ার। শালুকের পক্ষ থেকে আরো চেয়ার দেয়ার আহ্বান জানানো হলো। সাহিত্য পিপাসুরা আসছেন। এমন সময় মঞ্চ থেকে ভেসে এলো রবীন্দ্রসংগীত, সাকিরা পারভীনের কণ্ঠে “মেঘের’ পরে মেঘ জমেছে, আঁধার করে আসে।/আমায় কেন বসিয়ে রাখো একা দ্বারের পাশে।/কাজের দিনে নানা কাজে/থাকি নানা লোকের মাঝে/আজ আমি যে বসে আছি তোমারি আশ্বাসে।”...।

গানটি খুব দরদভরা কণ্ঠে গাইলেন সাকিরা। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন কবি মাহফুজ আল-হোসেন। শুরুতেই তিনি মঞ্চে ডেকে নিলেন শালুক সম্পাদক ওবায়েদ আকাশকে। পরে তিনি মূল আলোচনায় ‘সাম্প্রতিক সময়ে লিটল ম্যাগাজিন চর্চার প্রাসঙ্গিকতা ও অপরিহার্যতা’ বিষয়ক প্রবন্ধ পাঠ করলেন। প্রবন্ধের ওপর আলোচনা করেন কথাসাহিত্যিক অনন্ত মাহফুজ, কথাসাতিহিত্যিক মোজাফ্ফর হোসেন ও শিল্পী সঞ্জয় দে রিপন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন মাহফুজ আল-হোসেন।

পরে উপস্থাপকের দায়িত্ব চলে যান ওবায়েদ আকাশ। প্রসঙ্গের শেষ বক্তা হিসেবে ফ্লোর দেন মাহফুজ আল হোসেনকে। মাহফুজ আল-হোসেন লিটল ম্যাগাজিন শুরুর ইতিহাস তুলে ধরেন। পরে দর্শক সারি থেকে ভাস্কর আবেদীন দেশের আশির দশকের লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলন নিয়ে কথা বলেন। এ বিষয়ের ওপর কথা বলেন দর্শক সারি থেকে তরুন ইউসুফ।



এরপর নির্ধারিত ২০ কবির তালিকা থেকে কয়েকজনকে মঞ্চে ডেকে নেওয়া হয়  কবিতা পাঠ করতে। কবিতা পড়েন হাইকেল হাশমী, জুনান নাশিত, চয়ন শায়েরী ও আবদুর রাজ্জাক।

এরপর শুরু হয় নতুন পর্ব বই পরিচিতি। ২০১৯ সালে প্রকাশিত নির্বাচিত দশটি বই পরিচয় করিয়ে দেন ওবায়েদ আকাশ ও মাহফুজ আল-হোসেন। বইগুলো ছিল-দম-যোগিনীর তাল : জাফর সাদেক, ছুঁয়ে যাও না ছোঁয়ার ভান করে : আদিত্য নজরুল, তাঁবুকাব্য : তুষার কবির, জলের নিচে অনন্ত দুপুর : মাহবুব মিত্র, ছাঁটমানুষের জাগ : অমিত আশরাফ, কামার্ত নগরের কামিজ : মাহফুজা অনন্যা, হিমঘরে চাঁদের শয্যা : আহমেদ শিপলু এবং খড়কুটো ও জলের কাব্য : লিজা ফাহমিদা, প্রতীচ্যের বিউগল : মাহফুজ আল-হোসেন, সর্বনামের সুখদুঃখ : ওবায়েদ আকাশ।

কবিরা নতুন বই থেকে কবিতা পড়তে শুরু করলেন। পড়লেন ৫ কবি-লিজা ফাহমিদা, মাহবুব মিত্র, আদিত্য নজরুল, অমিত আশরাফ, মাহফুজা অনন্যা।

এরপর শুরু হয় ‘শালুক’-এর দুটি সংখ্যা ‘অন্য ভাষার সাহিত্য পাঠ’ ও ‘সিকদার আমিনুল হক সংখ্যা’র ওপর পাঠ পর্যালোচনা। এতে অংশ নেন  সরকার আবদুল মান্নান, জামিরুল শরীফ ও সুমন শামস।

শেষ পর্বে কবিতা পড়েন মামুন মুস্তাফা, সোহেল মাজহার, মনিরুজ্জামান মিন্টু, গিরীশ গৈরিক, রিসতিয়াক আহমেদ, কামরুল হাসান, আসাদুজ্জামান, সুমন শামস ও জামিরুল শরীফ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৯ এপ্রিল ২০১৯/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়