ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

দেশে ৫ কোটি থাইরয়েড রোগী : অধিকাংশই নারী

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৩৫, ২৫ মে ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
দেশে ৫ কোটি থাইরয়েড রোগী : অধিকাংশই নারী

নিজস্ব প্রতিবেদক : দেশে বর্তমানে অন্তত ৫ কোটি থাইরয়েড রোগী রয়েছে। এর বেশির ভাগই নারী। এদের মধ্যে তিন কোটি রোগীই জানে না, তারা এ রোগে আক্রান্ত। সাধারণত একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে।

শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সাগর-রুনি মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে এমন তথ্য জানান বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস)।

মায়েদের গর্ভে থাকা অবস্থায়ই বাচ্চার থাইরয়েডজনিত সমস্যা হতে পারে। তাই বিয়ে কিংবা গর্ভধারণের আগে মায়েদের এই রোগের পরীক্ষা করানোর তাগিদ দিয়েছে বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস)। কেননা থাইরয়েড সমস্যা হলে শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশ কম হয়। 

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, থাইরয়েড হরমোন কম বা বেশি নিঃসৃত হওয়া উভয়ই রোগের সৃষ্টি করে। তাই বিয়ের আগে কিংবা গর্ভধারণের পূর্বে নারীদের অবশ্যই থাইরয়েড পরীক্ষা করে নেওয়া উচিৎ। এ রোগের আক্রান্তের আশংকা থাকলে যথাযথ চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করে তারপর গর্ভধারণ করা উচিৎ। না হলে বাচ্চাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো লক্ষণ না থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে হরমোনের তারতম্যের ফলে শারীরিক ও মানসিক বৃদ্ধি, হঠাৎ করে শরীর মোটা ও চিকন হওয়া, মাসিকের বিভিন্ন সমস্যা, ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা, হার্টের সমস্যা, চোখ ভয়ংকর আকারে বড় হয়ে যাওয়া, বন্ধ্যাত্ব, এমনকি ক্যান্সারের সৃষ্টি হতে পারে। সাধারণত একজন পুরুষের বিপরীতে ১০ জন নারী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত হয়।

সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজুর বলেন, প্রতিটি বাচ্চা জন্মগ্রহণের পর বাধ্যতামূলকভাবে থাইরয়েড পরীক্ষা নিশ্চিত করা উচিৎ। কেননা বিকলাঙ্গ বাচ্চা আমাদের কারোরই কাম্য নয়। আর বাবার এ সমস্যা থাকলে কোনো ঝুঁকি নেই বরং মায়েদের ক্ষেত্রে রয়েছে।

এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমাদের শহরের ২২ থেকে ৩০ ভাগ গর্ভবতী থাইরয়েড রোগে আক্রান্ত। আর গ্রামের পরিস্থিতির কোনো রেকর্ড নেই; তাই ধারণা করা যায় সেখানকার অবস্থা আরও করুণ। তবে গোটা দেশে শক্ত কোনো জরিপ নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে জনসংখ্যার ৩০ শতাংশ এ রোগে আক্রান্ত। আর আমেরিকার মতো দেশেও ২০ মিলিয়ন মানুষ এই রোগে আক্রান্ত।

তিনি বলেন, বাড়ন্ত শিশুরাও থাইরয়েডের হরমোন ঘাটতিতে ভুগতে পারে। এ সময় থায়রয়েডের ঘাটতি হলে শিশুদের দৈহিক ও মানসিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। পরবর্তী সময়ে দৈহিক বৃদ্ধির সমতা আনয়ন করা গেলেও মেধার উন্নতি করা সম্ভব হয় না।

বাংলাদেশে সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও গলগণ্ড রোগীদের ৪.৫%-এর কাছাকাছি থায়রয়েড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। থাইরয়েড হরমোনের পরিমাণ স্বাভাবিক থেকেও থায়রয়েড় গ্রন্থি ফুলে যেতে পারে। সাধারণত আয়োডিনের অভাবে গলাফোলা রোগ হয়ে থাকে, যাতে ঘ্যাগ রোগ বলা হয়। খুলনায় কিছু মানুষের ওপর পরিচালিত এক গবেষণায় দেখা গেছে ১১ শতাংশ লোক ঘ্যাগ রোগে আক্রান্ত।

এ রোগের প্রতিরোধের বিষয়ে বক্তারা আরও বলেন, সব বয়সের মানুষের স্ক্রিনিং, আয়োডিনের অভাব পূরণ, ভেজাল খাদ্য পরিহার ও আর্সেনিকমুক্ত পানি পান করা এ রোগের প্রধান প্রতিরোধক। এছাড়া সরকার খুব সহজে থাইরয়েডের বাধ্যতামূলক স্ক্রিনিং চালু করতে পারে। পাশাপাশি বাজারের লবণগুলোর আয়োডিনের মান নিশ্চিত করতে পারে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের এন্ডোকা্রইনোলজি বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান প্রফেসর ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন সম্প্রতি করা এক গবেষণার বরাত দিয়ে বলেন, বাজারে থাকা ১০ ব্র্যান্ডের লবণ পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাতে আয়োডিনের মাত্রা ঠিক নেই। তিনি এই মাত্রা ঠিক করার তাগিদ দেন।

বাংলাদেশে ৬টি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। কিন্তু উন্নত বিশ্বে সাতটি মৌলিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং যার ৭মটি হচ্ছে থাইরয়েড হরমোনবিষয়ক তথ্য অধিকার। আর যেকোনো দেশে এই বিষয়টি প্রতিষ্ঠা করা খুবই সহজ একটি কাজ বলে উল্লেখ করেছেন বাংলাদেশ এন্ডোক্রাইন সোসাইটি (বিইএস) নামক বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের সংগঠন।

থাইরয়েডজনিত রোগ বিশ্বের ১ নম্বর রোগ উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসকরা বলেন, বাংলাদেশে সম্ভাব্য থাইরয়েড হরমোনজনিত রোগীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। যার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি রোগীই জানে না তাদের এই সমস্যা রয়েছে। তাই এই রোগ প্রতিরোধ কিংবা চিকিৎসার ক্ষেত্রে জনসচেতনতাই মুখ্য।

এদেশে থাইরয়েডের উচ্চমানের চিকিৎসা রয়েছে উল্লেখ করে এই বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, এই রোগের চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এখানে আয়োডিনের ডোজ মাত্র ৩০০ টাকা আর সিঙ্গাপুরে তার খরচ ৫০ হাজার টাকা। আর অন্যান্য দেশে আরও বেশি। এদিকে এই রোগের পরীক্ষা করাতে দেশের সরকারি হাসপাতালে খরচ মাত্র ২৫০ টাকা আর বেসরকারিতে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা। এছাড়া দেশের সরকারি বেসরকারি সব হাসপাতালে হরমোনবিষয়ক চিকিৎসক রয়েছেন। পাশাপাশি অন্যান্য বিভাগের ডাক্তাররা চিকিৎসা সম্পন্ন করতে পারেন। তবে আমাদের চিকিৎসকদের প্র‍্যাকটিসের অভাবে তার সঠিকভাবে প্রতিফলন বা সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সচেতনতামূলক কার্যক্রমে চিকিৎসকদেরও অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিইএসের সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফারুক পাঠান, সহ-সভাপতি অধ্যাপক ডা. মো. ফরিদ উদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. মো. হাফিজুর রহমান, সংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাহজাদা সেলিমসহ প্রমুখ।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৫ মে ২০১৮/সাওন/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়