ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

‘জীবনে বন্ধুদের অবদান অনেক বেশি’

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:১৯, ৩১ ডিসেম্বর ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘জীবনে বন্ধুদের অবদান অনেক বেশি’

ছবি : শাহীন ভূইয়া

চলচ্চিত্র নির্মাতা বুলবুল মাসউদ। খুলনা বিএল কলেজে অনার্স চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। বছর দেড়েক আগে বন্ধুদের অনুপ্রেরণায় চলে আসেন ঢাকায়। শুরু করেন স্ক্রিপ্ট লেখা। শুধু লেখা পর্যন্তই থেমে থাকেন নি, নির্মাণ করেছেন ‘আমি কে’ নামের একটি শর্টফিল্ম। যেটি ভারতে তৃতীয় মডেল এন মুভি আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসব- ২০১৭ এ সেরা চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে। সম্প্রতি বুলবুল মাসউদের সাক্ষাৎকার নেন আমাদের প্রতিবেদক আরিফ সাওন।

রাইজিংবিডি: আপনার নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রটি দুই ক্যাটাগরিতে সেরা নির্বাচিত হয়েছে। এ ব্যাপারে আপনার অনুভূতি জানতে চাই।
বুলবুল মাসউদ:
অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। তবে এটুকু বলবো, অনেক ভাল লাগছে।

রাইজিংবিডি: ‘আমি কি’ এর সাফল্যের রহস্য জানতে চাই।
বুলবুল মাসউদ:
আমাকে সবচেয়ে বেশ সাপোর্ট দিয়েছে আমার এক ফ্রেন্ড আছে বিজয় মাহমুদ। সে দিল্লির একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অধ্যায়ন শেষ করেছে। বাংলাদেশে এসে আমার গল্প শুনলো্। শোনার পরে এটা নিয়ে সে কাজ করতে রাজি হল। এরপর এই কাজটা করা। আমার টিমে যারা আছে এ কাজটার ব্যাপারে তারা সবাই অনেক বেশি সহযোগিতার মনোভাবসম্পন্ন ছিলো। যাদের জন্য কাজটা করা সম্ভব হয়েছে।

রাইজিংবিডি: প্রতিযোগিতায় অংশ গ্রহণ করা কীভাবে?
বুলবুল মাসউদ:
আমি চেষ্টা হচ্ছে, আমার কাজগুলো বিশ্বকে দেখানো। বিশ্বকে দেখানোর একমাত্র উপায় হচ্ছে এই জুড়ি, কম্পিটিশন ফেস্টিভ্যাল। বিশেষ করে মোস্তফা ফারুকী আমাদের পথ দেখিয়েছেন কীভাবে আমাদের বাংলাদেশিরা বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে যোগ দিতে পারেন। এই ফিল্মটা আমি আরো কয়েকটা জায়গায় পাঠিয়েছি। তারাও দেখুক বাংলাদেশিরাও ভাল ফিল্ম তৈরি করতে পারে।

রাইজিংবিডি: ‘আমি কে’ তৈরির পেছনের গল্প জানতে চাই?
বুলবুল মাসউদ:
আমার জীবনে বন্ধুদের আবদান অনেক বেশি। তারা বললো এলাকায় থাকলে কিছু হবে না। তাদের পরামর্শে ঢাকায় এসে একটা টিমে কাজ শুরু করি। পরবর্তী সময়ে আমি নিজেই টিম তৈরি করি। একদিন আমি নর্থ সাউথে একটা ক্লাস করতে যাই। সেখানে প্রথম দিন ক্লাস নেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী। দ্বিতীয় তিন ক্লাস নেন মোস্তাফা ফারুকী। ওখান থেকে বাসায় এসে আমি মোবাইল ফোন সেট দিয়ে একটি সর্ট ফিল্ম তৈরি করি। তাতে কোন অভিনেতা-অভিনেত্রী ছিলো না। প্রকৃতি এবং কথার উপর নির্ভর করে সেই সর্টফিল্মটা তৈরি করি। ওটা বন্ধুদের দেখাই। তারা খুবই উৎসায় দেয়। এরপর একদিন হাঁটতে হাঁটতে পথশিশুদের জীবনযাত্রা দেখে আমার খুব খারাপ লাগে। তারা বঞ্চিত। বিশেষ করে মেয়ে পথশিশুরা। এই শিশুরা শীতে কষ্ট করে, খেতে পায় না। নেশায় জড়ায়, অপরাধে জড়ায়। জীবনের কোন চাহিদাই তাদের পূরণ হয় না। তাদের ভবিষ্যৎ কি, এটা তারা নিজেরাও জানে না। এরপর তাদের নিয়ে শর্টফিল্ম তৈরির পরিকল্পনা করি এবং ‘আমি কে’ শর্টফিল্মটি তৈরি করি। এটা করার জন্য, তাদের জীবনযাত্রা আরো ভালোভাবে উপলব্ধি করার জন্য আমি কয়েকদিন কমলাপুর রেল স্টেশনেও ছিলাম।



ছবি : শাহীন ভূইয়া


রাইজিংবিডি: এই শর্ট ফিল্ম দ্বারা কি ম্যাসেজ দিতে চেয়েছেন?
বুলবুল মাসউদ : পথশিশু হিসেবে জন্মানোর অপরাধটা তাদের না। আমার এই শর্টফিল্মের মাধ্যমে আমি চাই সমাজকে বলে দিতে- এ অপরাধটা আসলে অন্য কারো।

রাইজিংবিডি: আমি কে ছবিটি ইউটিউবে দর্শকরা কবে দেখতে পাবেন?
বুলবুল মাসউদ: ফেস্টিভ্যালগুলো শেষ হলে ইউটিউবে দেওয়া হবে। প্রথমে যাবে ট্রেলার, এরপর টাইটেল সং। তারপর ...।

রাইজিংবিডি : পরবর্তী পরিকল্পণা কি?
বুলবুল মাসউদ: বাসর রাতকে কেন্দ্র করে ‘পাগলি’ নামে আরেকটি সর্টফিল্ম করবো। এরপরে পরিকল্পণা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা করার।

রাইজিংবিডি: আপনি তো শুরু থেকেই কবিতা লিখতেন? স্ক্রিপ্ট লেখার আগ্রহ জন্মালো কীভাবে?
বুলবুল মাসউদ: আমার বন্ধু আসিবুর রহমান জয়ের অনুপ্রেরণায় স্ক্রিপ্ট লেখা শুরু করি। মূলত আমার ঝোঁক ছিলো কবিতা লেখার দিকে। সে বললো তুই স্ক্রিপ্ট কর আমি ফিল্ম মেকিং করবো। ফিল্মের বীজটা মুলত মাথায় জয়ই ঢুকিয়েছে। আমি বলতে চাই, বই সবাই পড়ে না। কিন্তু ফিল্ম সবাই দেখে। বই পড়ার চেয়ে পর্দায় কোন কিছু দেখা হলে তা আমাদের মাথায় অনেক বেশি গেঁথে যায়। আমার কথাগুলো মানুষের কাছে সহজে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ফিল্মের দিকে আসা।

রাইজিংবিডি: আপনার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে জানতে চাই।
বুলবুল মাসউদ: আমার বাড়ি বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ উপজেলার আমরবুনিয়া গ্রামে। বাবা মাহাতাব হোসেন স্কুল শিক্ষক। মা মমতাজ বেগম। দুই ভাই বোনের মধ্যে আমি বড়। বোন মাহফুজা আক্তার এইসএসসি পরীক্ষার্থী। ছোট বেলা থেকেই গ্রামের আলো বাতাসে বেড়ে উঠেছি। আর দেড় বছর আগে ঢাকায় আসি।

রাইজিংবিডি: আপনার আরো কিছু কাজ আছে। সে সম্পর্কে জানতে চাই।
বুলবুল মাসউদ: ৭ম শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই আমার লেখালেখি শুরু। আমি তখন মাদ্রাসার ছাত্র ছিলাম। দুই বছর ধরে নাটকের স্ক্রিপ্ট লেখার সঙ্গে জড়িত। আমার প্রথম লেখা নাটক ‘ফ্রেন্ডশিপ ভার্সেস লাভ’। এটা ইউটিউব ভিত্তিক। বন্ধুরা মিলে এটি করি। এরপর লিখি ‘রিলেশন টাইম’। এটাও ছিলো ইউটিউব ভিত্তিক। ২০১৬ সালে একটি উপন্যাস প্রকাশ হয়। যৌথ কাব্যগ্রন্থ জল ফড়িং বের হয় ২০১৭ সালের বই মেলায়। রাত ১০টায় জিটিভিতে ব্যাক ফোকাস নামের ৬ পর্বের ধারাবাহিক প্রচারিত হয় এ বছরের ২৩ ডিসেম্বর খেকে ২৮ ডিসেম্বর।



রাইজিংবিডি : আমাদের দেশে অনুকরণের চর্চা আছে, একজন তরুণ নির্মাতা হিসেবে এ বিষয়টা আপনি কেমনভাবে দেখেন?
বুলবুল মাসউদ : অনুকরণ একেবারেই পছন্দ করি না। আমার মনে হয় ফিল্মে অনুকরণ করার কিছু নেই। অনেক বেশি গল্প আমাদের ভেতরে আছে। কিন্ত আমরা গল্প বের করতে জানি না। আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা রাইটারদের মূল্যায়ন করতে জানি না। লেখা একটা আলাদা বিষয়। এটা ঐশ্বরিক। ইতোমধ্যে আমার একটা গল্প চুরি হয়ে গেছে। চুরি হয়ে গেছে এ জন্যই বলবো যে, তিনি আমাকে দিয়ে স্ক্রিপ্ট করিয়েছেন। পারিশ্রমিক তো দূরে থাক কোথাও আমার নামও দেননি। আমরা যখন অন্য দেশের সিনেমা দেখে গল্পটা বা স্ক্রিপ্টটা সহজে পেয়ে যাই তখন সেটাই অনুকরণ করে ফেলি। অনুকরণ মানে সহজে কোন কিছু করে ফেলা। নতুন গল্প নিয়ে নতুন ফ্রেম করা নতুন কিছু চিন্তা করা- এটা হচ্ছে একজন সফল ডিরেক্টর এবং প্রকৃত ডিরেক্টরের মেইন জায়গা। অনুকরণ না করে আমাদের উচিত নতুন কিছু করা।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৯ ডিসেম্বর ২০১৭/সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়