ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

না পারলে সমস্যা নেই, সর্বোচ্চ চেষ্টা করো : মাশরাফি

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ৭ মার্চ ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
না পারলে সমস্যা নেই, সর্বোচ্চ চেষ্টা করো : মাশরাফি

ইয়াসিন হাসান : টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে বাংলাদেশ দলের পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে হাহাকারের চিত্রটাই ফুটে ওঠে। ক্রিকেটের সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত সংস্করণে এখন পর্যন্ত বড় কোনো সাফল্য নেই বাংলাদেশের।

এক সময়ে জিততে থাকা বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টিতে লড়াই করত কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। কিন্তু সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে বাংলাদেশের প্রাপ্তির খাতা অনেকটাই শূন্য। আত্মবিশ্বাস তলানিতে। পারফরম্যান্সের সূচক নিম্নগামী।

এমন বিপর্যয়ের এ সময়টায় নেই দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় সাকিব আল হাসান। ইনজুরি তাকে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে মাঠের বাইরে। ঘরোয়া ক্রিকেটের আগ্রাসী অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর কাঁধে জাতীয় দলের দায়িত্ব। বৃহস্পতিবার তারই নেতৃত্বে ভারতের বিপক্ষে নিদাহাস ট্রফিতে খেলতে নামছে বাংলাদেশ।

ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজার হাত ধরে বাংলাদেশ সবশেষ কোনো টি-টোয়েন্টি ম্যাচ জিতেছিল। এরপর চারটিতেই হার। মাশরাফির অবসরের পর এ সংস্করণে কোমড় সোজা করে দাঁড়াতে পারছে না দল।

টি-টোয়েন্টি ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্ট নিদাহাস ট্রফিতে কেমন করবে বাংলাদেশ? কেমন হওয়া উচিত পরিকল্পনা? ভাবনায় কী থাকা উচিত? সেসব নিয়ে মঙ্গলবার ফতুল্লায় মাশরাফি কথা বলেছেন রাইজিংবিডির ক্রীড়া প্রতিবেদক ইয়াসিন হাসানের সঙ্গে। তারই চুম্বক অংশ দেওয়া হলো রাইজিংবিডির পাঠকদের জন্য।     
 


রাইজিংবিডি: নিদাহাস ট্রফিতে বাংলাদেশ দলের থেকে প্রত্যাশা...

মাশরাফি বিন মুর্তজা:  আমার প্রত্যাশা আছে। কিন্তু আমি বলতে পারছি না দল খুব ভালো করবে। সত্যি বলতে যদি ওয়ানডে হতো তাহলে ঘুরে দাঁড়াত। সেই আত্মবিশ্বাসও থাকত। কিন্তু টি-টোয়েন্টি খেলা। এখন আমরা যদি আমাদের নিজেদের প্রত্যাশা জানিয়ে চাপ দেই তাহলে হবে না। আমাদের মতো মানুষরা যদি ওরকম করি তাহলে দলের ওপর আরো চাপ পড়বে।

রাইজিংবিডি: দল প্যানিক (আতঙ্কগ্রস্ত) হয়ে গিয়েছিল শেষ সিরিজে প্যানিক হওয়ার কারণ কী ছিল?

মাশরাফি বিন মুর্তজা: ফাইনালের ভয় হয়তো বা সবার মধ্যে ছিল। কারণ আপনি সব জিতে ফাইনালে গিয়ে হেরে গেলেন, তখন সবাই বলবে তুমি তো আসল জায়গায় হেরে গেছো! এই ভয়টা কাজ করেছিল। এই ভয়টা কাজ না করলে সহজ হতো। আবার ৮০ রানে অলআউটটাও বড় বিষয়। ধরেন, ফাইনালের আগে ৮০ রানে অলআউট হলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়। এরপর তো আমরা পুরো সিরিজেই প্যানিক ছিলাম।

রাইজিংবিডি: এটা কি শুধু মাত্র ওই ফাইনালের জন্যই?

মাশরাফি বিন মুর্তজা: ফাইনালটা একটা বড় কারণ। সবার প্রত্যাশা ছিল ফাইনাল জিততেই হবে। ওই ক্ষুধাটা ছিল। ওইটা তৈরি হয়েই হয়ত প্যানিক তৈরি হয়েছে। আরেকটা জিনিস দেখেন, শ্রীলঙ্কা-জিম্বাবুয়ে সবাই ধরে নিয়েছে যে আমরা জিতব! তাই ওই জায়গাটায় যখন আমরা পারিনি, তাই ওইটা প্যানিক হওয়ার আরেকটি জায়গা। মানুষ প্রত্যাশা করছে জিতবে, কিন্তু আপনি হেরে গেলেন! তখন প্যানিক হওয়া স্বাভাবিক।

রাইজিংবিডি: সেক্ষেত্রে আমাদের করণীয় কী?

মাশরাফি বিন মুর্তজা: আমি চাই না সবাই তাদের প্রত্যাশা জানাক। ওরা খেলতে গিয়েছে ওদের ওপর চাপ না দেই। ওরা যদি একটা-দুটা ম্যাচ ভালো খেলে তাহলে আমি কিংবা আপনি কী বলছি, তা ওদের দেখার বিষয় থাকবে না। এখন যেহেতু দল হারের মধ্যে আছে আর আমাদের কথাগুলো ওদের কানে গেলে খুব খারাপভাবে নিবে ওরা।

রাইজিংবিডি: তাহলে তো বলতে চাচ্ছেন ধৈর্য ধরা ছাড়া আর কোনো উপায় নেই?

মাশরাফি বিন মুর্তজা: হ্যাঁ, সেটাই। ওদেরকে ওদের মতো করে খেলতে দেই। অসম্ভব কিছু না। এরাই আগে ভালো করেছে। ওদের এখন সেই আত্মবিশ্বাস দিতে হবে। না পারলে সমস্যা নেই, সর্বোচ্চ চেষ্টা করো। এভাবেই ওদেরকে আত্মবিশ্বাস দিতে হবে। এটা আমাদের বাইরে থেকেও তৈরি করা জরুরি। আপনাদের থেকে শুরু করে সাপোর্টিং স্টাফ যারাই আছে, তারপর দর্শক যারা আছে; সবাই কিন্তু এখন হতাশ। কিন্তু এখন কীভাবে সামনে এগিয়ে যাওয়া যায়, সেটা খেয়াল রাখতে হবে। এই মুহূর্তে খেলোয়াড়দের আরেকটু সমর্থন করলে ওরা ভালো করবে।
 


রাইজিংবিডি: প্রস্তুতি ম্যাচে দল জিতেছে প্রতিপক্ষ দলটাও খারাপ ছিল না সেখান থেকে নিশ্চয়ই আত্মবিশ্বাসী হতে পারবে?

মাশরাফি বিন মুর্তজা: প্রস্তুতি ম্যাচ জেতায় ভালো হয়েছে। ব্যাটিং ভালো হয়েছে এটা খুব ভালো লক্ষণ। প্রস্তুতি ম্যাচে যারাই ভালো করেছে, মূল ম্যাচে তারা অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠবে; এটা বলতে পারি। আরেকটা বিষয়, শ্রীলঙ্কায় গত বছর অনুশীলন ম্যাচে আমরা ২ রানে হারছিলাম। তারপরও কিন্তু অনেক রান করেছিলাম, প্রায় ৩৫০-এর মতো। ওই আত্মবিশ্বাস দিয়ে কিন্তু প্রথম ম্যাচ জিতেছিলাম। শুরুটা এরকম ভালো করলে টুর্নামেন্টটা ভালো খেলতে সহায়তা করে।

রাইজিংবিডি: ট্রু উইকেটে খেলা হবে বলে ধারণা পেসারদের জন্য কোনো বার্তা?

মাশরাফি বিন মুর্তজা:  পেসারদের জন্য সিরিয়াস চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। ভারতের শিখর ধাওয়ান ও রোহিত শর্মা আছে। ওদিকে আবার কুশল পেরেরা এসেছে। আমার কাছে মনে হয় সিরিয়াস চ্যালেঞ্জ আসছে। এটা কিছু না। আগেও বললাম অসম্ভব কিছু না। ওরাই পারবে। আগেও পেরেছে।

রাইজিংবিডি: সাকিব নেই বাংলাদেশ কি আসলেও পারবে?

মাশরাফি বিন মুর্তজা: সাকিবের অনুপস্থিতি যেই মিশনেই যান না কেন, ওই মিশনেই বিরাট একটা ক্ষতি। একটা খেলোয়াড়ের জায়গায় দুজনকে অন্তর্ভুক্ত করতে হয়। এটা আমাদের জন্য বড় একটা সমস্যা। তবে এটা যেকোনো সময় হতেই পারে। সাকিব সুস্থ হয়ে আবার ফিরবে। পরবর্তীতে একটা গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ খেলতে পারল না। তখন কী হবে! এর থেকে ভালো যে একেবারে সুস্থ হয়ে ফিরে আসুক। আমার কাছে মনে হয়, ওখানে যারা আছে তাদেরও একই মানসিকতা তৈরি করা উচিত।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৭ মার্চ ২০১৮/ইয়াসিন/পরাগ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়