ঢাকা     শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৭ ১৪৩১

হলি আর্টিজানে হামলা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫১, ৩ ডিসেম্বর ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হলি আর্টিজানে হামলা মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

নিজস্ব প্রতিবেদক : গুলশানের হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলা মামলায় ৮ আসামির বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে।

সোমবার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমানের আদালতে সাক্ষ্য দেন মামলার বাদী গুলশান থানার তৎকালীন এসআই রিপন কুমার দাস। তার জবানবন্দি রেকর্ড শেষে আসামি তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ও পক্ষে রাকিবুল হাসান রিগ্যানের পক্ষে বাদীকে জেরা করেন তাদের আইনজীবী ফারুক আহাম্মদ। এদিন জেরা শেষ না হওয়ায় আদালত মঙ্গলবার পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেছেন।

এদিকে জবানবন্দি প্রদানের সময় ঘটনাস্থল থেকে বাদী কর্তৃক জব্দকৃত ২৫ প্রকার আলামত বিচারকের সামনে উপস্থাপিত হলে তিনি তা সনাক্ত করেন। উপস্থাপিত আলামতগুলোর মধ্যে আসামিরা কর্তৃক হামলায় ব্যবহারিত মারনাস্ত্র ৩টি দশমিক ২২ বোরের মেশিনগান ও ৫টি বিদেশি পিস্তল, ৭টি মেশিনগানের ম্যাগজিন, পিস্তলের ৬টি ম্যাগজিন, পিস্তলের ৩৪ রাউন্ড তাজাগুলি, মেশিনগানের ৭৯ রাউন্ড তাজাগুলি, ৯টি গ্রেনেডের সেফটি পিন, তিন শতাধিক গুলিরখোসা, ২টি চাপাতি, ২টি ছোড়া ছিল।

এর আগে এদিন বেলা ১২ টায় আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়। আদালতের কার্যক্রম শুরুতে বিচারক আসামিদের জিজ্ঞাসা করেন, তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে কিনা? আসামিরা বিচারকের প্রশ্নের জবাবে বলেন, তারা কোনো আইনজীবী নিয়োগ দিতে পারেননি বলে আদালতকে জানান। যদি সরকারিভাবে আইনজীবী নিয়োগ দেওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে তারা দিতে চায় বলে আদালতকে জানায়। আসামিদের মধ্যে একজন বিচারককে বলেন, সরকারিভাবে আইনজীবী নিয়োগ দিলে কি আইনজীবীরা তাদের কথা শুনবে?  বিচারক তাদের বলেন, অবশ্যই শুনবে। এরপরে আসামিরা পৃথকভাবে আইনজীবী নিয়োগ করার জন্য অনুরোধ জানান।

মামলাটিতে কারাগারে থাকা অপর ৪ আসামির মধ্যে সরকারি  জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা থেকে আইনজীবী সিতারা ফৌজিয়া সালামকে আসামি জাহাঙ্গীর ও হাদিসুর রহমানের পক্ষে, মাহফুজুর রহমান চৌধুরীকে সবুরের পক্ষে এবং ফারহানা কুদ্দুস সুইটিকে মিজানুর রহমানের পক্ষে নিয়োগ দেওয়া হয়। এছাড়া পলাতক ২ আসামি পক্ষে মো. শহিদ উজ জামানকে স্ট্রেট ডিফেন্স নিয়োগ করা হয়।

মামলাটিতে গত ২৬ নভেম্বর আট আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন একই আদালত।

আসামিরা হলেন-হামলার মূল সমন্বয়ক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কানাডার নাগরিক তামিম চৌধুরীর সহযোগী আসলাম হোসেন ওরফে রাশেদ ওরফে আবু জাররা ওরফে র‌্যাশ, ঘটনায় অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহকারী নব্য জেএমবি নেতা হাদিসুর রহমান সাগর, নব্য জেএমবির অস্ত্র ও বিস্ফোরক শাখার প্রধান মিজানুর রহমান ওরফে বড় মিজান, জঙ্গি রাকিবুল হাসান রিগ্যান, জাহাঙ্গীর আলম ওরফে রাজীব ওরফে রাজীব গান্ধী, হামলার অন্যতম পরিকল্পনাকারী আব্দুস সবুর খান (হাসান) ওরফে সোহেল মাহফুজ, শরিফুল ইসলাম ও মামুনুর রশিদ।



আসামিদের মধ্যে প্রথম ৬ জন কারাগারে আছেন। অপর দুই আসামি পলাতক রয়েছেন। গত ৮ আগস্ট একই ট্রাইব্যুনাল পলাতক দুই আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।  এদিন সাক্ষ্যগ্রহণকালে কারাগারে থাকা ৬ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়।

মামলাটিতে গত ৮ আগস্ট আট আসামির বিরুদ্ধে দাখিল করা চার্জশিট গ্রহণ করে আদালত। চার্জশিটে নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সাবেক শিক্ষক হাসনাত রেজা করিমের বিরুদ্ধে ওই ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়ে তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।

এর আগে গত ২৩ জুলাই মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কাউন্টার টেররিজম বিভাগের পরিদর্শক হুমায়ূন কবির মামলাটিতে চার্জশিট দাখিল করেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাত পৌনে ৯টার দিকে কূটনৈতিক এলাকা গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা হামলা করে এবং দেশি-বিদেশি নাগরিকদের জিম্মি করে। এ সময় অভিযান চালাতে গিয়ে জঙ্গিদের গ্রেনেড হামলায় গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার অফিসার ইনচার্জ সালাউদ্দিন খান নিহত হন। রাতের বিভিন্ন সময় তিন বাংলাদেশিসহ ২০ জন জিম্মিকে  হত্যা করে জঙ্গিরা।

পরদিন সকালে যৌথ বাহিনী কমান্ডো অভিযান চালায়। এতে ছয় হামলাকারী নিহত হয়। জীবিত উদ্ধার করা হয় ১৩ জিম্মিকে। ওই ঘটনায় ২ পুলিশ কর্মকর্তা, জাপানি, ইতালি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভতু আমেরিকানসহ ১৮ বিদেশি ও ২ বাংলাদেশি, ৬ জঙ্গিসহ ২৮ জন নিহত হন। ২০১৬ সালের ৪ জুলাই নিহত ৫ জঙ্গিসহ অজ্ঞাতদের আসামি করে গুলশান থানায় সন্ত্রাস দমন আইনে মামলা করা হয়।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩ ডিসেম্বর ২০১৮/মামুন খান/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়