মালামাল লুট করতে ইডেনের প্রাক্তন অধ্যক্ষকে হত্যা!

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইডেন কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মাহফুজা চৌধুরী পারভীন হত্যার পেছনে তার বাসার মালামাল লুট করার উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। তবে বিষয়টি নিয়ে পুলিশ স্পষ্ট কোনো ব্যাখ্যা দিতে রাজি নয়। কারণ, হত্যায় জড়িত হিসেবে সন্দেহ করা দুই গৃহকর্মীর মধ্যে একজনকে এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।

শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নিউমার্কেট থানায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার মারুফ হোসের সরদার জানান, আজ ভোরে নেত্রকোনার ইটনা থানায় নিজ গ্রাম ফতেপুর থেকে স্বপ্না ওরফে রীতা আক্তার নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে মাহফুজা চৌধুরী পারভীনের ভ্যানিটি ব্যাগ, একটি স্বর্ণের চেইন ও সাত হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সে হত্যার বিষয়টি স্বীকার করেছে। অপর গৃহকর্মী রেশমা ওরফে রুমাকে গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে। এ ঘটনায় আগে থেকে পুলিশ হেফাজতে ছিলেন দুই গৃহকর্মীর যোগানদাতা রুনু ওরফে রাকিবের মা (৪৫)। তবে হত্যাকাণ্ডে এখনো তার কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি।

মারুফ হোসেন সরদার বলেন, ‘দুই গৃহকর্মী কাজ নেওয়ার সময় যেসব তথ্য দিয়েছিল তা সব ভুল। ফলে তাদের ধরতে বেগ পেতে হচ্ছে। রীতাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হলেও রুমাকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, সে তার যেসব ঠিকানা দিয়েছিল সেসব জায়গায় গিয়ে কিছুই খুঁজে পাওয়া যায়নি। রুমা সম্পর্কে কোনো তথ্যও দিতে পারছে না রীতা।’

তিনি বলেন, ‘তারা এত ধূর্ত প্রকৃতির যে, কোথাও যোগাযোগের ক্ষেত্রে অন্যের টেলিফোন ব্যবহার করেছে।’

রুমাকে গ্রেপ্তারের পর হত্যার প্রকৃত কারণ জানা যাবে, উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত রীতা আমাদের যে তথ্য দিয়েছে তার ক্রসম্যাচ করতে হবে। সেজন্য রুমাকে গ্রেপ্তার করা দরকার। তাছাড়া আমরা হত্যার কারণ স্পষ্ট করে বলতে পারব না। তবে প্রাথমিকভাবে আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, বাসার মালামাল লুট করার জন্য তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে।’

গত ১০ ফেব্রুয়ারি রাজধানী ঢাকায় এলিফ্যান্ট রোডের নিজ বাসায় খুন হন মাহফুজা চৌধুরী পারভীন।  ঘটনার সময় তার স্বামী ইসমত কাদির গামা বাসায় ছিলেন না। পরে তিনি বাসায় এসে পুলিশে খবর দিলে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। কাদির গামা বাদী হয়ে দুই গৃহকর্মীকে আসামি ও তাদের কাজ পাইয়ে দেওয়া রাকিবের মাকে ‘সন্দেহভাজন’ করে মামলা করেন।

মাহফুজা চৌধুরী পারভীন ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত ইডেন কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন।

নিউ মার্কেট থানা পুলিশের একটি সূত্র জানিয়েছে, ১০ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩ টা থেকে সন্ধ্যা ৭ টার মধ্যে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে প্রাথমিক তদন্তে ধারণা করা হচ্ছে। দুই গৃহকর্মী বালিশচাপা দিয়ে মাহফুজা চৌধুরী পারভীনকে হত্যা করে। পরে বাসার মালামাল লুট করে পালিয়ে যায়। বাসার সিসি টিভির ফুটেজে গৃহকর্মীদের ছবি অস্পষ্ট থাকায় তাদের কাউকে চিহ্নিত করা সম্ভব হয়নি। মাহফুজা চৌধুরী পারভীনের যে মোবাইল ফোন সেটে গৃহকর্মীদের ছবি তোলা ছিল সেটি তারা নিয়ে যায় এবং ডায়রির যে পাতায় গৃহকর্মীদের জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের ঠিকানা দেওয়া ছিল সেটি তারা ছিঁড়ে নিয়ে যায়।

মারুফ হোসেন সরদার জানান, হত্যার সাত দিন আগে রুমা কাজে যোগ দেয়। এরও কিছুদিন আগে রীতা ওই বাসায় কাজ শুরু করে।

বাসায় গৃহকর্মী রাখার আগে সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, ‘গৃহকর্মীদের সব তথ্য সংগ্রহ করে রাখুন এবং নিকটস্থ থানায় জমা দিন। এতে তাদের তথ্য থানায় সংরক্ষিত থাকবে।’



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯/নূর/রফিক/শাহনেওয়াজ