ঢাকা     শুক্রবার   ১৯ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৬ ১৪৩১

অবৈধ সম্পর্ক ধরা পড়লে যা করবেন

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:০৬, ১৯ জানুয়ারি ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
অবৈধ সম্পর্ক ধরা পড়লে যা করবেন

প্রতীকী ছবি

এস এম গল্প ইকবাল : একটা মানুষ কারো সঙ্গে পবিত্র সম্পর্কে জড়ানোর পরও বিভিন্ন কারণে অন্য কারো সঙ্গে অবৈধ সম্পর্কে জড়িয়ে যেতে পারে। কিন্তু একদিন না একদিন পবিত্র বন্ধনের সঙ্গীর কাছে অবৈধ সম্পর্ক বা প্রতারণা ধরা পড়ে যেতে পারে। এ প্রতিবেদনে অবৈধ সম্পর্ক বা প্রতারণায় ধরা পড়লে কি করা উচিত তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

১. বিপথগামিতা স্বীকার করুন
আপনি যে আপনার সম্পর্ক থেকে বিপদগামী হয়েছেন তা অস্বীকার করলে আপনার সঙ্গী আরো বেশি ক্রুদ্ধ ও হতাশ হবে। তাই পরিপক্বতার পরিচয় দিন এবং যা সত্য তাই বলুন যদি আপনার প্রতারণা ধরা পড়ে। যদি সে কি ঘটেছে তা জানে, তাহলে এটি সম্পর্কে মিথ্যা বলে কোনো লাভ নেই। নিউ ইয়র্ক সিটির কাপল থেরাপিস্ট ইরিনা ফারস্টেইন বলেন, ‘আপনার সঙ্গীর পক্ষে অবৈধ সম্পর্কের বিষয়টি হজম করা যথেষ্ট কঠিন। সকল মিথ্যা ও গোপনীয়তা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি থেকে বের হয়ে আসার পরিবর্তে পরিস্থিতিকে আরো কঠিনতর করে তোলে।’ তাই কেন স্বচ্ছতার আশ্রয় নেবেন না? সেক্সুয়ালিটি ও রিলেশনশিপ কনসালট্যান্ট এবং দ্য অর্গাজম আনসার গাইডের সহলেখক সারা নাসেরজাডেহ বলেন, ‘উপলব্ধি করুন যে আপনার সঙ্গী মানসিক শকের মধ্যে আছে। তাকে কিছু সুযোগ ও সময় দিন, যখন আপনি সে করতে পারে এমন যেকোনো প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করবেন। যদি আপনি আপনার অসততা ও বিশ্বাসঘাতকতা সম্পর্কে মিথ্যা বলেন বা অস্বীকার করেন, তাহলে আপনার সঙ্গী অধিক আহত, অসন্তোষ ও ক্ষতিগ্রস্ত হবে।’

২. সিদ্ধান্ত নিন কার সঙ্গে থাকবেন
আপনি সম্পর্ক জোড়া লাগাবেন কি লাগাবেন না তা আপনার ওপর নির্ভর করে, তাই অন্য কাউকে আপনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দিতে বলবেন না। শুধুমাত্র আপনি জানেন যে আপনার জন্য কোনটি সবচেয়ে ভালো এবং প্রতারণায় ধরা পড়ার পর কোনটি কার্যকর হবে। আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন অব সেক্সুয়ালিটি এডুকেটরস, কাউন্সেলরস অ্যান্ড থেরাপিস্টসের সনদপ্রাপ্ত সেক্স থেরাপিস্ট এবং কাপল রিলেশনশিপ এক্সপার্ট অ্যাশলে গ্রিনোনু-ডেন্টন বলেন, ‘যে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তার জন্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, নিজের দিকে তাকানো যাতে প্রথম থেকেই অবৈধ সম্পর্ক কেন শুরু হয়েছে তার সম্পর্কে জানা যায়।’ আপনি কার সঙ্গে সম্পর্ক চালিয়ে যেতে চান বা চান না এ ব্যাপারে আপনার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। সম্পর্ক বিশেষজ্ঞ এবং ডোন্ট লাই অন ইউর ব্যাক ফর এ গাই হু ডাজেন্ট হ্যাভ ইউরস’র লেখক গিল্ডা কার্ল বলেন, ‘যদি আপনি দুজনের কাউকেই বেছে নিতে না চান তাহলে তাদের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখুন। তারপর নিজেকে ভালোভাবে জানার জন্য সময় নিন যাতে আপনি আপনার প্রয়োজনের জন্য উপযুক্ত সঙ্গী নির্বাচন করতে পারেন।’

৩. কাউন্সেলিং অনুসরণ করুন
আপনার প্রতারণা ধরা পড়লে কোনো সম্পর্কবিষয়ক থেরাপিস্টের কাছে যেতে ভুলবেন না। এ সময় একজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। অবশ্য আপনার প্রতারণার আগে কাউন্সেলিং আরো বেশি উপকারী হতে পারত, যাহোক, এখন কাউন্সেলিং গ্রহণ আপনাকে যা ঘটেছে ও কেন ঘটেছে তা বুঝতে এবং তাতে অন্তর্দৃষ্টি দিতে সাহায্য করবে। ডা. নাসেরজাডেহ বলেন, ‘এটি আপনার সার্বিক সমাধান করবে না, কিন্তু আবেগবর্জিত আলোচনা ও তথ্য বিনিময়ের সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে তীব্র সংকটজনক বা উত্তপ্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় সাহায্য করবে। কাউন্সেলিং আপনাকে ভালো যোগাযোগ স্থাপনে সাহায্য করবে এবং এটি মানসিক শান্তি দেবে যে আপনি সম্পর্ক রক্ষার জন্য চেষ্টা করেছিলেন।’

৪. প্রমাণ নষ্ট করে ফেলুন
প্রতারণার প্রমাণ নষ্ট করে ফেলুন। আপনার অবৈধ সম্পর্ক বিষয়ক সকল প্রকার যৌনতা, ভয়েসমেইল, রিসিপট অথবা অন্য যেকোনো প্রমাণ ধ্বংস করে ফেলা উচিত, কারণ যা ঘটেছে তার সমস্ত বিবরণ আপনার সঙ্গীকে জানানোর প্রয়োজন নেই। এটি তার অনুভূতিকে আরো খারাপ করে দেবে। সাইকোলজিস্ট, রিলেশনশিপ এক্সপার্ট এবং দ্য আলটিমেট গাইড টু এ মাল্টি-অর্গাজমিক লাইফের লেখক অ্যান্টোনিয়া হল বলেন, ‘মনে রাখবেন যে, আপনার অবৈধ সম্পর্ক কারো জন্যই ভালো নয়। যদি আপনি একটি সুখী ও সুস্থ সম্পর্ক চান, তাহলে এখানে স্বচ্ছতা থাকা প্রয়োজন হবে, তাই এ বিষয়ে কথা বলুন। অবৈধ সম্পর্ক থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।’

৫. সন্তানকে জড়াবেন না
যদি আপনার সন্তান থাকে এবং আপনি প্রতারণায় ধরা পড়েন, তাহলে ব্যাপারটা আপনার সঙ্গী ও আপনার মধ্যে রাখুন, এর সঙ্গে সন্তানকে জড়াবেন না। সন্তানের বয়স যতই হোক না কেন, আপনার সন্তানকে আপনার দুজনের মধ্যে অবশ্যই যেকোনো একজনকে বেছে নিতে হবে এমন অনুভূতির সম্মুখীন করানো উচিত নয়, তাদের ভূমিকা যেন থেরাপিস্টের ভূমিকা না হয়। লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রফেশনাল ক্লিনিক্যাল কাউন্সেলর, সেক্স থেরাপিস্ট এবং ফিক্স ইউরসেলফ ফার্স্ট: টুয়েন্টি ফাইভ টিপস টু স্টপ রুইনিং ইউর রিলেশনশিপের লেখক ক্রিস্টি ওভারস্ট্রিট বলেন, ‘সম্পর্কবিষয়ক সমস্যা থেকে আপনার সন্তানকে যতটা সম্ভব রক্ষা করুন। আপনাদের সম্পর্কের সঙ্গে তাদের জড়িত করা অন্যায়, আপনি একজন প্রাপ্তবয়স্ক, তাই প্রাপ্তবয়স্কের মতোই আচরণ করুন।’

৬. নতুন স্বাভাবিকের সঙ্গে অভ্যস্ত হোন
ওভারস্ট্রিট বলেন, ‘প্রতারণার পূর্বে আপনাদের পবিত্র সম্পর্ক যেমন ছিল তেমনটা ফিরিয়ে আনা অসম্ভব। প্রধান বিশ্বাসগুলো নড়বড়ে হয়ে গেছে, এগুলো ঠিক করতে সময় লাগবে।’ আপনার সঙ্গী এবং আপনাকে সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে আপনাদের মধ্যে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। স্পষ্টত যেসব বিষয়গুলো কাজ করে না তার পরিবর্তনসাধন দরকার, যেমন- দুর্বল সেক্সুয়াল পারফরম্যান্স। দুজনে একসঙ্গে দীর্ঘপথ পাড়ি দিতে নতুন স্বাভাবিকের সঙ্গে অভ্যস্ত হোন।

৭. সঙ্গীকে দোষারোপ করবেন না
ড. কার্ল বলেন, ‘যদি আপনি প্রতারক হন, তাহলে তার জন্য আপনি ছাড়া অন্য কাউকে দোষ দেওয়া যাবে না।’ কোনোকিছুর জন্য কেউ নিজেকে দোষী বানাতে চায় না এবং যদি আপনি তাকে দোষারোপ করেন, তাহলে তিনি ডিফেন্স বা নিজপক্ষ সমর্থন করবেন। ওভারস্ট্রিট বলেন, ‘আপনি প্রতারণা করার জন্য সচেতনভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাই আপনাকে ১০০ শতাংশ দোষ দেওয়া যায়। আপনার সঙ্গী আপনার সঙ্গে যাই করে থাকুক না কেন, তার জন্য তাকে দোষারোপ করার কোনো কারণ নেই। যদি আপনি তাই করেন, সম্পর্ক ভেঙে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকুন।’ এর পরিবর্তে, যদি আপনার প্রতারণা ধরা পড়ে, তাহলে এর দায়ভার নিজের ওপর চাপান এবং আপনার এমন কর্মের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিন বা দুঃখপ্রকাশ করুন।

৮. সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে তাড়াহুড়া করবেন না
আপনি পরবর্তীতে কি করবেন তা চিন্তা করার চেষ্টা করুন, এর জন্য সময় নিন। কি করবেন তার জন্য দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে নিজের ওপর চাপ সৃষ্টি করবেন না এবং অবিলম্বে আপনাকে ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য সঙ্গীকে জোরাজুরি করবেন না। ডা. নাসেরজাডেহ বলেন, ‘এক মুহূর্তে বিশ্বাস ভেঙে গেছে এবং এটি পুনরুদ্ধারে দীর্ঘ সময় লাগবে।’ আপনি যা করেছেন এবং যা ঘটেছিল তার প্রেক্ষিতে উদ্ভুত পরিস্থিতি শান্ত করতে আপনার সঙ্গী এবং নিজেকে সময় দিন।’ ড. ওভারস্ট্রিট বলেন, ‘পুনরায় সম্পর্ক দ্রুত স্বাভাবিক করতে আপনি কিছু করতে পারবেন না। এ মুহূর্তে সম্পর্ক নড়বড়ে। আপনাকে ধৈর্য্যশীল, সহায়তাপ্রবণ, অনুতপ্ত ও সুসঙ্গত হতে হবে।’

৯. পরিবার ও বন্ধুবান্ধবকে জড়াবেন না
ড. হল বলেন, ‘আপনাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে অন্য কাউকে জড়ানো হবে এমন একটা ভুল যা কখনো শোধরানো যাবে না।’ হ্যাঁ, আপনি পরিবার ও সবচেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ বন্ধুকে কি ঘটছে তা জানতে চাইতে পারেন, কিন্তু যদি আপনি তাই করেন, তাহলে সকলের মতামত শুনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত রাখুন- আপনি যা শুনতে চাইবেন না তার জন্যও। প্রিয়জনরা আপনার প্রতারণার জন্য আপনাকে ধিক্কার জানাতে পারে, দোষারোপ করতে পারে এবং আপনার অনুভূতিকে আরো খারাপ করে তুলতে পারে। আপনার সঙ্গী এবং আপনার মধ্যে এ ব্যাপারটা বজায় রাখার কথা বিবেচনা করুন। ডা. কার্ল বলেন, ‘আপনার কৃতকর্মের দায়বদ্ধতার ফলে উদ্ভুত পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য অন্য কাউকে জড়িত করা হচ্ছে কাপুরুতার কাজ। শেষ পর্যন্ত এটি আপনার সমস্যা যা অবশ্যই আপনাকে সমাধান করতে হবে।’

১০. মনে করবেন না যে সম্পর্ক জোড়া লাগানো যাবে না
প্রতারণায় ধরা পড়লেও এটা ভাববেন না যে সম্পর্ক জোড়া লাগানো যাবে না। ধারণা করুন যে আপনারা একসঙ্গে থাকবেন যতদিন পর্যন্ত আপনারা সম্পর্ক মেরামতের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যেতে ইচ্ছুক। ওভারস্ট্রিট বলেন, ‘সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের কাজটি আরো ভালোভাবে করার জন্য আপনাদের উভয়কে একে অপরের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। সম্পর্কে বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা কঠিন কাজ, কিন্তু সম্ভব হতে পারে যদি আপনারা একসঙ্গে বসবাস করেন।’ বিশ্বাস ব্যতীত আপনি সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারবেন না। যদি বিশ্বাসঘাতকতার পরও আপনি সম্পর্ক রক্ষা করতে পারেন, আপনাদের বন্ধন আরো শক্তিশালী হবে এবং আপনার জীবনের সম্মুখে থাকা যেকোনো কিছু জয় করতে পারেন। ড. ফারস্টেইন বলেন, ‘অনেক সময় প্রতারণা হচ্ছে সহায়তার জন্য আহ্বান। প্রতারণার অভিজ্ঞতা ও তা থেকে শিক্ষা নেওয়ার পর অনেক সম্পর্ক অধিক ঘনিষ্ঠ ও শক্তিশালী হয়। আপনার সঙ্গীকে বাস্তববাদী উপায়ে জানতে এবং জীবনের সমস্যাযুক্ত বা ত্রুটিযুক্ত বিভিন্ন দিক সম্পর্কে বুঝতে এটি একটি সুযোগ হতে পারে। আপনি এসব সংশোধন করতে পারেন এবং সম্পর্কের উন্নয়ন করতে পারেন।’

তথ্যসূত্র : রিডার্স ডাইজেস্ট



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ জানুয়ারি ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়