ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১২ ১৪৩১

জীবনবৃত্তান্ত ছোট করার উপায়

আহমেদ শরীফ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৯:০৮, ১৭ জুলাই ২০১৮   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
জীবনবৃত্তান্ত ছোট করার উপায়

প্রতীকী ছবি

আহমেদ শরীফ : জীবনবৃত্তান্ত লেখার আগে বা আপডেট করার সময় আপনার মনে তিনটি প্রশ্ন উদয় হতে পারে: আমার জীবনবৃত্তান্ত কতো বড় হবে? এক পৃষ্ঠায় কিভাবে আমি আমার সব দক্ষতা তুলে ধরবো? কী বাদ দেবো আর কোন তথ্যের ওপর জোর দেবো?

কয়েক বছর আগেও চাকরি প্রার্থীরা একটি অপরিহার্য নিয়ম মেনে চলতো, তা হলো- কোনো জীবনবৃত্তান্তই এক পৃষ্ঠার বেশি হওয়া উচিত না। তবে বর্তমানে চাকরিপ্রার্থীরা ওই নিয়মের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না। আর এই বিভ্রান্তি দূর করতে সহজ উপায় হলো: কমন সেন্স বা সহজাত বুদ্ধি ব্যবহার করা।

যদি আপনি সদ্য গ্র্যাজুয়েশন করে থাকেন বা পাঁচ বছরের মতো কাজের অভিজ্ঞতা থাকে অথবা ক্যারিয়ার সম্পূর্ণ পরিবর্তনের কথা ভেবে থাকেন, তাহলে সাধারণত এক পৃষ্ঠার জীবনবৃত্তান্তই যথেষ্ট। তবে কোনো কোনো টেকনিক্যাল ও এক্সিকিউটিভ পদের প্রার্থীর জন্য অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিতে হয় বলে একাধিক পৃষ্ঠার জীবনবৃত্তান্ত লিখতে হয় তাদের। যদি কাজের অভিজ্ঞতা পাঁচ বছরের বেশি থাকে এবং অনেক সাফল্য থাকে আপনার, তাহলে জীবনবৃত্তান্ত লিখতে কমপক্ষে দুই পৃষ্ঠার প্রয়োজন হতে পারে আপনার জন্য। তবে জীবনবৃত্তান্ত ছোট রাখতে কিছু কথা মনে রাখতে হবে আপনাকে:

জীবনবৃত্তান্ত মানে আত্মজীবনী লেখা নয় : আপনার জীবনবৃত্তান্ত লিখতে গিয়ে আত্মজীবনী লিখে নিয়োগদাতাকে বিভ্রান্ত করবেন না। কারণ কর্তৃপক্ষের কাছে বিপুল সংখ্যক জীবনবৃত্তান্ত জমা পড়ে। আর সেগুলোর মাঝে প্রথমে খারাপগুলো থেকে ভালো জীবনবৃত্তান্তগুলো বেছে নেন নিয়োগদাতারা। প্রাথমিকভাবে এভাবেই যোগ্য প্রার্থীদের বাছাই করা হয়। যাদের জীবনবৃত্তান্ত যতো আকর্ষণীয় হবে, তাদের বেছে নেয়ার সম্ভাবনাও ততো বেড়ে যাবে। আর তাই এ প্রাথমিক বাছাই পর্বে আপনার জীবনবৃত্তান্তকে উত্তীর্ণ হতে হবে। সে কারণে নিজের জীবনবৃত্তান্তের দিকে তাকিয়ে কয়েকটি প্রশ্ন করুন নিজেকে:

*  নিয়োগদাতারা কি আমার সব যোগ্যতা ১০/১৫ সেকেন্ডের মধ্যে বুঝতে পারবেন?

* গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য কি এক পৃষ্ঠা শেষে আরেক পৃষ্ঠা পর্যন্ত লিখেছি আমি?

* আমি কি প্রথম পৃষ্ঠার শুরুর দিকে সঠিকভাবে নিজের যোগ্যতা ও গুণগুলো তুলে ধরতে পেরেছি?

যোগ্যতাগুলো তুলে ধরুন: হ্যাঁ, কাঙ্ক্ষিত পদের জন্য নিজেকে যোগ্যতর হিসেবে প্রমাণ করতে হলে নিজের প্রধান সব যোগ্যতা আপনার জীবনবৃত্তান্তের প্রথমেই তুলে ধরতে হবে। যদি এমবিএ ডিগ্রিটি আপনার ক্যারিয়ারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতা হয়ে থাকে, তাহলে অর্জিত এই ডিগ্রির তথ্য জীবনবৃত্তান্তের শেষ দিকে না দিয়ে প্রথম দিকেই উল্লেখ করুন।

যদি জীবনবৃত্তান্তটি বড় হয়েই যায়, তাহলে আপনার প্রধান সব যোগ্যতা ও গুণগুলো তুলে ধরতে সহজ উপায় হলো জীবনবৃত্তান্তের শুরুতে প্রথম পৃষ্ঠায় একটি ‘ক্যারিয়ার সামারি’ যোগ করা। এক্ষেত্রে জীবনবৃত্তান্তের ভেতরে আপনার ওই ক্যারিয়ার সামারির প্রধান যোগ্যতাগুলোর প্রতিধ্বনি অবশ্যই থাকতে হবে।

সম্পাদকের দৃষ্টিভঙ্গিতে জীবনবৃত্তান্ত আপডেট করুন: অনেকেই তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে গর্বিত। আর জীবনবৃত্তান্তে তাদের সব অর্জন বা সাফল্যগুলো উল্লেখ করতে পছন্দ করেন অনেকে। তবে জীবনবৃত্তান্তে সব অর্জনের তথ্য জানানোর প্রয়োজন নেই। যে তথ্যগুলো আপনার সম্ভাব্য চাকরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, কেবল সেগুলো উল্লেখ করাই উচিত। আর তাই বিচক্ষণ ও সুবিবেচক হতে হবে আপনাকে। সঠিক জীবনবৃত্তান্ত তৈরি হলো কি না সেটা দেখতে সম্পাদনা করুন পত্রিকার সম্পাদকের মতো। অপ্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে জীবনবৃত্তান্ত বড় করবেন না। প্রয়োজনে কোনো সহকর্মীকে জীবনবৃত্তান্ত দেখান অথবা জীবনবৃত্তান্ত লেখায় অভিজ্ঞ কারো সহায়তা নিন।

বার বার একই তথ্য দেবেন না : জীবনবৃত্তান্তে একই তথ্যের পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখবেন। এতে একাধারে জীবনবৃত্তান্ত অহেতুক বড় হওয়ার পাশাপাশি তা পড়তেও নিয়োগদাতাদের জন্য বিরক্তির কারণ হতে পারে। যে পদের জন্যই আপনি আবেদন করবেন, জীবনবৃত্তান্ত আপডেট করার সময় বার বার আপনার কাজের ধরন বর্ণণা না করে সাফল্যগুলোর ওপর জোর দিন।

পুরোনো দক্ষতাগুলো ঝেরে ফেলুন : আপনি সম্প্রতি কি কাজ করেছেন বা কী সাফল্য অর্জন করেছেন, সে বিষয়েই নিয়োগদাতারা বেশি আগ্রহী। আপনার কাজের ইতিহাস যদি অনেক বড় হয়, তাহলে শেষ ১০ থেকে ১৫ বছরের ক্যারিয়ারের ওপর বিশেষ নজর দিন। যদি ক্যারিয়ারের প্রথম দিকের দক্ষতাগুলো বর্তমানে প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাহলে বিস্তারিত না লিখে অল্প কথায় সেগুলো জীবনবৃত্তান্তে তুলে ধরুন।

অপ্রাসঙ্গিক তথ্য সংযুক্ত করবেন না : আপনার শখ, বিয়ে সংক্রান্ত তথ্য, এগুলো উপেক্ষা করার চেষ্টা করুন। এগুলো অফিসে কাজের জন্য আপনার যোগ্যতা হিসেবে বিবেচিত হবে না। এছাড়া আগের অপ্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত দক্ষতাগুলোও বাদ দিন। কারণ সেগুলোর তেমন মূল্য নেই এখন।

কাজের পরিধি নিয়ে বিশদ কিছু লিখবেন না : অন্য অফিসে আপনার কাজের ধরন বা পরিধি কেমন ছিলো সে বিষয়ে বিশদ কিছু লেখার দরকার নেই। এক্ষেত্রে একটি সংক্ষিপ্ত প্যারাগ্রাফ তৈরি করুন, যা অল্প কথায় আপনার দায়িত্ব বা কাজের পরিধি সম্পর্কে ধারণা দেবে। আর আপনার আগের সবচেয়ে বড় সাফল্যগুলোর একটি তালিকা তৈরি করুন।




রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ ‍জুলাই ২০১৮/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়