ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

ওয়েজ বোর্ডের প্রয়োজন নেই : অর্থমন্ত্রী

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৯, ৮ আগস্ট ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ওয়েজ বোর্ডের প্রয়োজন নেই : অর্থমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিবেদক : সরকারি চাকরিজীবীদের চেয়ে সাংবাদিকদের বেতন অনেক বেশী তাই তাদের ওয়েজ বোর্ডের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। আর এর প্রতিবাদ করেন উপস্থিত সাংবাদিকরা। এসময় তিনি সাংবাদিক নেতাদের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশ্বস্ত করে বলেন, এখনো কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। সবার সঙ্গে কথা বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

মঙ্গলবার সচিবালয়ে নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (নোয়াব) এর প্রতিনিধিদলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী একথা বলেন। বৈঠকে তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, তথ্য সচিব মরতুজা আহমেদ, নোয়াবের সভাপতি ও দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, সহ-সভাপতি ও দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ এবং দ্য ডেইলি স্টারের সম্পাদক মাহফুজ আনাম উপস্থিত ছিলেন।

নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের তাৎক্ষণিক প্রতিবাদ জানিয়েছেন ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন বাদশা। তিনি বলেন, ‘আমরা  অর্থমন্ত্রীর এ বক্তব্য প্রত্যাখ্যান করছি। তাকে নোয়াবের পক্ষ থেকে বিভ্রান্ত করা হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আমাদের সঙ্গে বৈঠক করার ঘোষণা দিয়েছেন। আমাদের সঙ্গে কথা বললেই তিনি বুঝতে পারবেন যে, নোয়াবের প্রতিনিধিরা তাকে বিভ্রান্ত করেছেন। 

অর্থমন্ত্রীর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, আগামী ১৭ আগস্ট সাংবাদিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে তিনি বৈঠক করবেন। দু-একদিনের মধ্যে সংগঠনগুলোর নেতাদের চিঠি দেওয়া হবে।

জানা গেছে, বৈঠকে উপস্থিত নোয়াবের প্রতিনিধিরা সংবাদ মাধ্যমে বিদ্যমান অবস্থা তুলে ধরেন। সংবাদ মাধ্যমে সরকারি বিজ্ঞাপন, কাগজ আমদানির ভ্যাটসহ বিভিন্ন বিষয় অর্থমন্ত্রীকে অবহিত করা হয়। বলা হয়, সাংবাদিকরা প্রতিদিন ছয়ঘণ্টা করে কাজ করেন। এর বেশী সময় অফিসে থাকলে তাদের অতিরিক্ত পারিশ্রমিক দিতে হয়। এছাড়া রাত ১০টার পর  অফিস ত্যাগ করলে তাদেরকে গাড়ি দিতে হয়। অধিকাংশ পত্রিকা এখনো অষ্টম ওয়েজ বোর্ডই বাস্তবায়ন করেনি। তার আগে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়নের দাবির বিষয় নিয়ে তারা প্রশ্ন তোলেন। আর এরই পরিপ্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী সংবাদ মাধ্যমে ওয়েজ বোর্ডের প্রয়োজন নেই বলে মন্তব্য করেছেন।

অর্থমন্ত্রী বলেছেন, সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডের প্রয়োজন নেই, তাদের বেতন নির্ধারণ বাজারের উপর ছেড়ে দেয়া উচিৎ। তিনি বলেন, ‘আজকের বৈঠকে বুঝেছি সরকারি চাকরিজীবীদের তুলনায় সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ডে বেতন বেশি। সুতরাং, ওয়েজ বোর্ড রাখাটা আননেসেসারি।’

মুহিত বলেন, ‘নবম ওয়েজ বোর্ড করার জন্য কি কি করতে হবে। আমাদের একটা ফিলিং হলো, এখন আমরা সিদ্ধান্ত নেবো সর্টলি যে সাংবাদিকদের ওয়েজ বোর্ড ইস আননেসেসারি। টোটালি আননেসেসারি। সাংবাদিকদের সেলারি স্কেল ইজ বেটার দ্যান গভর্নমেন্ট সেলারি স্কেল। তাহলে কেনো আমরা ওয়েজ বোর্ডের দিকে যাবো।’

সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন, প্রভিডেন্ড ফান্ড ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে কিন্তু সাংবাদিকদের তো এমন কোনো সুযোগ নেই। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আপনাদেরও প্রভিডেন্ড ফান্ড আছে।’

‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করে ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়াতে ৮ হাজার টাকা বেতনে চাকরি করেন- এমন কথার জবাবে তিনি বলেন, ‘মাস্টার্স পাশ করা আমাদের পিয়নও আছে। ১৬ হাজার টাকা বেতন পায়। আমি জানি আপনাদের ৫টি গ্রেড আছে। সর্বশেষ গ্রেড ২০ হাজারের কোটায় রয়েছে।’

সাংবাদিকদের প্রতিবাদের মুখে এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘আপনারা একজন বা দুজন দায়িত্ব নেন, আমাকে আপনাদের ৫টি গ্রেডের তথ্য দেন।’ সব পত্রিকায় ওয়েজ বোর্ড বাস্তায়ন নেই- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘ঢাকায় ১৫-২০টি খবরের কাগজ ছাড়া ৫০০টা পত্রিকা রয়েছে, এগুলো অল আর বোগাস। ওদের জন্য আমরা বেতন স্কেল ঠিক করবো কেন? আমি ১৫ বা ২০টি পত্রিকার জন্য বেতন স্কেল ঠিক করতে পারি, যেগুলোতে মানুষজন কাজ করে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেইনি। তবে আমার উপলব্ধি হচ্ছে যে, সাংবাদিকদের জন্য কোনো ওয়েজ বোর্ডের প্রয়োজন নেই।’

টেলিভিশনগুলোর কি হবে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কয়েকটা টেলিভিশন মরে যাবে। ইজ ইট ডিজারেবল ফর কান্ট্রি। দুনিয়ার কোন দেশে এত টেলিভিশন চ্যানেল আছে?’

অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি কতবার বলেছি, এতগুলো ব্যাংক আছে, টেলিভিশন আছে, এগুলো থাকবে না। অটোমেটিক্যালি এগুলো মরে যাবে, যখন আইনটা হবে।’

এসময় সাংবাদিকরা জানতে চান, ‘তাহলে সরকার এগুলোর অনুমোদন দেন কেন ?’

এই প্রশ্নের জবাবে সেখানে উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ইলেকট্রনিক্স মিডিয়ার জন্য এখনো কোন আইন নেই। ওয়েজ বোর্ড হচ্ছে খবরের কাগজের জন্য, সেজন্য অর্থমন্ত্রীর সভাপতিত্বে সংবাদপত্রের মালিকদের সঙ্গে বসেছিলাম। কোন সিদ্ধান্ত হয়নি।’

এরপর অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বৈঠকে অত্যন্ত দু:খজনক তথ্য পাচ্ছি। ৫০০ কাগজ আপনারা বের করেন, এগুলো ফলস, এখানে সব চুরি করে।’

তাহলে ঐসব পত্রিকা বন্ধ করা হচ্ছে না কেন- এ প্রশ্নের জবাব উপস্থিত তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘এটা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের বিষয়।’

কীভাবে বেতন নির্ধারণ হবে- এ প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘দেশে কতটা পেশা আছে, কার জন্য ওয়েজ বোর্ড করলাম। একমাত্র সরকারি ছাড়া কোথাও বেতন নির্ধারণ হয় না। বাকিরা মাকের্ট ডিটারমেন্ট করে। প্রাইভেট সেক্টরের উপর আমাদের কোন নিয়ন্ত্রণ নেই।’

নবম ওয়েজ বোর্ড গঠন নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য শেষে তথ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানার চেষ্টা করলে তিনি তা এড়িয়ে যান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ আগস্ট ২০১৭/হাসনাত/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়