ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ১৮ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ৫ ১৪৩১

‘দেশীয় সংস্কৃতির বিকৃতি বন্ধ করা দরকার’

আরিফ সাওন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৩৬, ২৮ জুন ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘দেশীয় সংস্কৃতির বিকৃতি বন্ধ করা দরকার’

আরিফ সাওন : ‘আমরা শুধু সস্তা জনপ্রিয়তা খুঁজি। আমার অনেক শিক্ষার্থী তৈরি না হয়েই বলে, তাদেরকে কবে টেলিভিশনে দেখা যাবে। নিজেকে সেই ভাবে তৈরি না করেই তুলে ধরার জন্য আমরা ব্যকুল। কবে রেডিও-টেলিভিশনে গান গাইবে- এমন প্রশ্ন আমাকে প্রতিদিন শুনতে হয় এবং তার উত্তর দিতে হয়।
 
রাইজিংবিডির সঙ্গে আলাপে এ কথাই বললেন জনপ্রিয় ভাওয়াইয়া শিল্পী সফিউল আলম রাজা। যাকে কেউ চেনেন ‘ভাওয়াইয়া রাজা’ কেউবা ‘ভাওয়াইয়ার রাজকুমার’, আবার কেউ চেনেন ‘ভাওয়াইয়ার ফেরিওয়ালা’ হিসেবে। গত ২৪ জুন রাজধানীর মিরপুর সাড়ে এগারোয় তার প্রতিষ্ঠিত কলতান সংস্কৃতিক একাডেমিতে বসে তিনি কথা বলেন। আজ দ্বিতীয় পর্ব-

তিনি বলেন, ‘আমাদের সংস্কৃতির বারোটা বাজানোর জন্য দায়ি হলো সস্তা জনপ্রিয়তার নেশা এবং অন্যকে অনুকরণ। যে কারণে সুস্থ ধারায় চর্চা কম হচ্ছে। তবে সদিচ্ছা নিয়ে যে কেউ চাইলে সুস্থ ধারার সঙ্গীত চর্চা করতে পারেন, নৃত্যচর্চা করতে পারেন, আর্ট করতে পারেন। সবকিছু নির্ভর করে রুচির উপর, আপনি কোন ধারায় করবেন, সুস্থ নাকি অসুস্থ। গানের মধ্যে যেমন সুস্থতা আছে, আপনি চাইলে সেগুলো অসুস্থ করে দিতে পারেন।’

‘আজকাল দেখা যায় কিছু কিছু গীতিকার পুরনো সুরের মধ্যে ঠুনকো টাইপের কিছু কথাবার্তা, অসুস্থ কথাবার্তা লিখে গান করেন। একটা চটকদারী কিছু করছেন, মানুষকে তাৎক্ষণিক মজা দেওয়ার জন্য তারা এটা করছেন। এটার স্থায়ীত্ব কম। আপনি ভাল করে দেখেন পুরোনো দিনের গানগুলো এখনো আমরা গুনগুন করে গাই। ‘ওকি গাড়িয়াল ভাই’আব্বাস উদ্দীন গেয়েছেন সেই কত বছর আগে! এখনো ‘গাড়িয়াল ভাই’ গানটি মানুষ গায়। না গাইতে পারলেও মনে মনে গুনগুন করে গাইছে। তার মানে কী, এগুলোর লিরিক, সুর ও গাঁথুনি এতো অসারধারণ যে, বারবার শুনতে ইচ্ছে হয়।’

বর্তমান সময়ে কিছু কিছু গীতিকারের সমালোচনা করে তিনি বলেন, ‘এনখকার লিরিক, আমি-তুমি, তুমি-আমি, ভেতর-বাহির, বাহির-ভেতর, ঘুম-স্বপ্ন, এগুলো ছাড়া মনে হয় গীতিকার আর কথাই খুঁজে পান না। তার মানে গীতিকারের নিজের চর্চা নাই, সে নিজেই গান বোঝে না। মন চাইলো, তো একটা কিছু লিখে গান হয়ে গেলো। ইন্ডিয়ান গীতিকার কি লিখছেন বা  অস্ট্রেলিয়ান শিল্পী কী গেয়েছেন, তার গানের সার কথাটুকু নিয়ে সেটি বাংলা করে গান লিখে নিজের নামে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন অনেকের গান আছে- যা দেখিয়ে দিতে পারি।’ 

 



কিছু সুরকারের তীব্র সমালোচনাও তিনি করেন এবং বলেন, ‘সুরকার বাংলাদেশে অনেকে আছে- এই মুহূর্তে তাদের আবার আমরা তারকা বলি। বিভিন্ন ট্যালেন্ট হাণ্টের নামে কিছু অখাদ্য মার্কা শিল্পী বের করা হয়েছে (নাম বলছি না কারো) যারা মানুষের গানের সুর চুরি করে নিজেকে বড় সুরকার ভাবছেন।’

রাজা বলেন, ‘মিউজিক ডিরেক্টর সেজে গেছেন অনেকেই। আরে বাবা একজন মিউজিক ডিরেক্টরের কত অভিজ্ঞতার দরকার হয়। কত শেখার দরকার আছে। আপনি একটা ট্যালেন্ট হান্টে এসে মিউজিক ডিরেক্টর হয়ে গেছেন। এগুলো খুব হাস্যকর ও দুঃখজনক।’

নিজের অভিজ্ঞার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার অভিজ্ঞতা, ২০১৩ সালে বৈশাখী মেলায় অলিম্পিক পার্কে গান গাইলাম। সেখানে ২০ হাজার দর্শক রাজার ভাওয়াইয়া গান শোনার জন্য টিকিট করে ভিতরে বসেছেন। ইন্ডিয়াতে আমি যতবারই গান করতে গিয়েছি সেখানে কলকাতা টিভি, তারা মিউজিক ও বিভিন্ন মঞ্চে ব্যাপক সাড়া পেয়েছি। বাংলাদেশে যে সাড়া পাচ্ছি না তা নয়, পাই।

কিন্তু দেখা গেল আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটি শ্রেণি বলছে গান ভাল লাগে এবং বলছে, স্যার গানের সাথে একটা ড্রাম লাগান, গিটার লাগান। যেটা করলে গানের পুরো রূপটাই বদলে যাচ্ছে, প্রাণছোঁয়া ভাবটাই থাকছে না। অথচ সেটাই করতে বলছে তারা। গানে প্রাণছোঁয়া ভাবটা থাকছে না- এই বোধটা তাদের মধ্যে নেই। ওরা দেশের সংগীতের মর্মকথা না বুঝেই এসব পরামর্শ দিয়ে বসে। বলে পাশ্চাত্যের যন্ত্র লাগিয়ে গান করলে সেই গান নাকি আন্তর্জাতিক মানের গান হয়।’

তিনি বলেন, ‘আমরা অন্যকে অনুকরণ ও অনুসরণ করতে গিয়ে এবং রাতারাতি স্টার হতে গিয়ে আমাদের সংস্কৃতির বারোটা বাজিয়ে ফেলছি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী  মুজিব পরদেশী কি সুন্দর করে গান করে গেছেন। তার দরদ মাখা অসাধারন গায়কীর গানগুলোকে বর্তমানে অনেকে বিকৃত করে গাইছে। এটা আবার এক শ্রেণির টিভি চ্যানেল ফিউশনের নামে অনুষ্ঠান করে সম্প্রচার করছে। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ধরে রাখতে এসব বন্ধ করা দরকার।

‘ইউ আর গ্রেট সিংগার ইন দ্য ওয়ার্ল্ড’

 

 


রাইজিংবিডি/ঢাকা/২৮ জুন ২০১৭/সাওন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়