ঢাকা     বুধবার   ২৪ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১১ ১৪৩১

নদী দখল মুক্ত করতে মাস্টার প্ল্যানের খসড়া চূড়ান্ত

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:২৭, ১৭ এপ্রিল ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নদী দখল মুক্ত করতে মাস্টার প্ল্যানের খসড়া চূড়ান্ত

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক : চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী ও ঢাকার নদীসমুহ দখল ও দূষণমুক্ত করতে মাস্টার প্ল্যানের খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এইসব প্ল্যান বাস্তবায়ন করে ১০ বছরের মধ্যে নদীসমুহ দখল ও দূষণমুক্ত করা হবে এবং নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে।

জানা গেছে, পদ্মা, মেঘনা নদী এবং ঢাকার তুরাগ ও পুংলী নদীর দখল, দূষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য ভিন্ন আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন করা হবে।

বুধবার স্থানীয় সরকার বিভাগে চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীসহ ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য মাস্টার প্ল্যান তৈরি সংক্রান্ত কমিটির ৬ষ্ঠ সভায় দুটি মাস্টারপ্ল্যান চূড়ান্ত করা হয়। একইসঙ্গে আরেকটি মাস্টারপ্ল্যান প্রনয়ণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম।

এসময় নৌ-পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এস এম গোলাম ফারুক, পানি সম্পদ সচিবসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং নদী বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সুত্র জানায়, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধিকল্পে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানটি ৩টি অংশ ধরা হয়েছে। নদী দূষণ, দখল এবং নাব্যতা। মাস্টারপ্ল্যানটি ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ, দখল এবং নাব্যতা প্রতিটি বিষয়ে সন্নিহিত জেলাসমূহের শাখা নদী, খাল এগুলোর বর্তমান পরিস্থিতি, নদী দূষণ প্রতিরোধ কমিটি, ২০০৮’ এর প্রতিবেদন বিশ্লেষণসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের চলমান বর্তমান প্রকল্পসমূহ পর্যালোচনা করে প্রস্তত করা হয়েছে।

জানা গেছে, নদীদূষণ, দখলরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধিকল্পে প্রণীত মাস্টারপ্ল্যানের মাধ্যমে ৪টি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম (১ বছর), স্বল্প মেয়াদী (৩ বছর), মধ্য মেয়াদী (৫ বছর) এবং দীর্ঘ মেয়াদী (১০ বছর)। খসড়া মাস্টারপ্ল্যানে সংশ্লিষ্টদের দায়িত্ব ও কার্যাবলী নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বৈঠকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগ- এর মতামত গ্রহণ করা হয়েছে।

বৈঠকে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত বাংলাদেশ গড়তে হলে গ্রাম-গঞ্জের সকল মানুষের কাছে উন্নয়নের সব সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। তেমনিভাবে নদীমাতৃক বাংলাদেশের নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে হবে, নাব্য ফেরাতে হবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি টাস্কফোর্স বা কমিটি করা হয়েছে, পদাধিকার বলে আমি সেই কমিটির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছি।’

তিনি বলেন, ‘কমিটি একটি খসড়া মাস্টার প্ল্যান করেছে, সেই মাস্টার প্ল্যানের ওপর আলোচনা করে আজকে নীতিগতভাবে সেটি অনুমোদন করেছি। একটি ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী কাছে অনুমোদিত খসড়া মাস্টার প্ল্যানটি উপস্থাপন করা হবে। এ বিষয়ে উনি অনেক আন্তরিক, বিষয়টাকে তিনি অনেক গুরুত্ব দেন, সেই হিসেবে এ বিষয়ে তার অনেক তথ্য জানা আছে। যদি কোথাও ইনপুট দেওয়া দরকার মনে করেন, সংযোজন করা দরকার মনে করেন, তিনি সেটা করবেন।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যমাত্রা ১০ বছর। প্রাথমিকভাবে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চলছে। আপনারা দেখেছেন নদী দখল যেগুলো হচ্ছে তা মুক্ত করা হচ্ছে, ওয়াকওয়ে নির্মাণ করা হবে। এরপর ওয়াসার নেতৃত্বে স্যানিটেশনের কাজ শুরু হয়েছে। ঢাকা শহরের স্যুয়ারেজ লাইন ঠিক করা হবে, যাতে নদীতে কোনো দূষিত পানি না যায়।’

তাজুল ইসলাম বলেন, ‘বর্জ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। বর্জ্য যাতে নদীতে এখানে সেখানে ডাম্পিং করা না হয় সেজন্য বর্জ্য থেকে যাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারি, এই ব্যবস্থা নিতে কাজ করছি।

নদীর পুরো নাব্য ফিরিয়ে আনার জন্য ১০ বছরের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে। নদীকে ড্রেজিং করতে হবে। পলি পড়ে নদীর বেডগুলো উচু হয়ে গেছে, সেগুলোতে আগের জায়গায় নিতে হবে। পানি দূষিত হয়ে গেছে, পানি ট্রিট করতে হবে। পানিতে আর যাতে দূষিত পদার্থ না যায় সেজন্য সোর্সগুলোকে বন্ধ করতে হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘গৃহস্থালী ও শিল্পের বর্জ্য যাতে না যায় সেগুলোর জন্য অন্য ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বর্জ্য সংগ্রহ করে আমরা ডিসপোজাল করে দেব, নদীতে যাতে না যায়।’

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদী এবং ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দূষণ ও দখলরোধ এবং নাব্যতা বৃদ্ধির জন্য মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নে ২০১৬ সালের ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেকের সভায় একটি কমিটি গঠনের সিদ্বান্ত হয়। সে সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ২০১৬ সালের ৫ ডিসেম্বর স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীকে সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালককে (প্রশাসন) সদস্য সচিব করে ২৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। পরে ২০১৭ সালের ৫ মার্চ অনুষ্ঠিত কমিটির ২য় সভায় প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিবকে আহ্বায়ক এবং প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালককে (প্রশাসন) সদস্য সচিব করে একটি কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়। সংশ্লিষ্ট সকলকে সম্পৃক্ত করে খসড়া মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট অংশীজন সমন্বয়ে সভা ও ওয়ার্কশপের মাধ্যমে অংশীজনের মতামত ও সুপারিশ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যালোচনাপূর্বক খসড়া মাস্টারপ্ল্যানটি প্রণয়ন করা হয়েছে। মাস্টারপ্ল্যানটি কারিগরি কমিটির নিকট প্রেরণ করা হয় এবং কারিগরি কমিটি তা ২০১৮ সালের ৭ জানুয়ারি মূল কমিটির নিকট প্রেরণ করে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৭ এপ্রিল ২০১৯/নঈমুদ্দীন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়